বুকের দুধের রঙ পরিবর্তন হয় যে কারণে, জেনেনিন বিস্তারিত

আমরা সবাই জানি, শিশুদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে বুকের দুধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি পুষ্টির প্রাথমিক উৎস। শুধু তাই নয়, মায়ের বুকের দুধ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বুকের দুধের রঙ সাধারণত হলুদে সাদা, সাদা, ক্রিম বা কিছুটা বাদামি হয়। তবে আপনি জেনে অবাক হবেন, দুধের রঙ এক দিনেই এমনকি পান করানোর সময়ও পরিবর্তিত হতে পারে।

বিভিন্ন কারণে এটি ঘটে। সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো, খাদ্যাভ্যাস। অর্থাৎ যে রঙের বা ধরনের খাবার খাচ্ছেন তার প্রভাব এখানে পড়তে পারে। স্তনের ভেতরে সামান্য রক্তপাতের কারণেও এর পরিবর্তন হতে পারে। আপনি যদি নতুন মা হয়ে থাকেন এবং পরিবর্তনের কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন না হন, তাহলে বিষয়টি নিয়ে সাময়িক আতঙ্কের মুখে পড়তে পারেন। বুকের দুধের রঙ পরিবর্তনের কারণগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।

সময়ের সঙ্গে রঙ পরিবর্তন

প্রসবের পরে প্রতিটি পর্যায়ে বুকের দুধের রঙ পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন সন্তান জন্ম দেওয়ার এক সপ্তাহ বা একদিন পরে ঘটে। বিভিন্ন পর্যায়ে বুকের দুধের রঙের স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো এরকম হতে পারে:

কলস্ট্রাম: সন্তান জন্মের পরপরই মাতৃ শরীর কলস্ট্রাম বা শালদুধ উৎপন্ন করে। প্রসবের পর প্রথম পাঁচ দিন পর্যন্ত শরীর শালদুধ তৈরি করে। এই দুধ শিশুর জন্য খুবই পুষ্টিকর ও নানা ধরনের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাগুণ সম্পন্ন। শালদুধ সাধারণত হলুদ বা কমলা রঙের ও ঘন হয়। তবে কখনো কখনো পরিষ্কার, পাতলা এবং জলীয় হতে পারে। শালদুধে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকায় তা গাঢ় হলুদ বা কমলা রঙের হয়।

ট্রানজিশনাল মিল্ক: প্রসবের এক সপ্তাহ পরে, বেড়ে ওঠা শিশুর চাহিদা মেটাতে শরীর বেশি পরিমাণে বুকের দুধ উৎপন্ন শুরু করে। অর্থাৎ এ সময় শরীর পরিবর্তনশীল দুধ তৈরি করতে শুরু করে। যা শালদুধ এবং পরিপক্ক দুধের মাঝামাঝি পর্যায় হিসেবে পরিচিত। প্রসবের দুই সপ্তাহ পরে এই দুধ স্থায়ী হয় এবং সাধারণত হলুদ বা সাদা রঙের হয়।

ম্যাচিউর মিল্ক: দুই সপ্তাহ পরে, আপনার শরীর ম্যাচিউর বা পরিপক্ক দুধ পর্যায়ে পৌঁছায়। এ সময়ে বুকের দুধে থাকে বাড়তি পরিমাণ ফ্যাট। রঙ পরিবর্তন হতে পারে ফ্যাটের ওপর নির্ভর করে। যা দুই ধরনের-

১. ফরমিল্ক: বুকের দুধ খাওয়ানোর শুরুতে বা পাম্পিংয়ের শুরুতে যে দুধ প্রবাহিত হয়, তা পাতলা এবং কম ফ্যাটযুক্ত উপাদান থাকে। এ পরিপক্ক দুধ পরিষ্কার বা নীল দেখায়।

২. হিন্ডমিল্ক: বুকের দুধ খাওয়ানো শুরুর কিছুক্ষণ পরে দুধে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ক্রিমিয়ার হয়ে ওঠে, যাকে হিন্ডমিল্ক বলা হয়। হিন্ডমিল্ক ঘন এবং সাদা বা হলুদ রঙের দেখায়।

রঙ পরিবর্তনের অন্যান্য কারণ
সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হওয়া ছাড়াও, আপনার খাবার, পানীয় কিংবা ওষুধের ধরনের ওপর নির্ভর করেও দুধের রঙ পরিবর্তিত হতে পারে। এবং তা শিশুর প্রস্রাবের রঙকেও প্রভাবিত করতে পারে।

সবুজ: প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি যেমন শাক, ব্রোকলি এবং ভেষজ খাবার আপনার বুকের দুধকে কিছুটা সবুজ করে তুলতে পারে।

গোলাপী, কমলা বা লাল: লাল বা কমলা রঙের খাবার আপনার বুকের দুধে এই রঙ দিতে পারে। যেমন বেশি পরিমাণে বিটরুট, গাজর বা খাবারের রঙের কারণে এমনটি হতে পারে।

মরিচা বা বাদামী: যদি আপনার বুকের দুধের রঙ বাদামী, মরিচা বা গাঢ় কমলা হয়, তাহলে স্তনের ভেতর রক্তরক্ষণের কারণে এমনটি হতে পারে। আপনার বুকের দুধে অল্প পরিমাণে রক্ত ​​আপনার সন্তানের ক্ষতি করবে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রক্তপাত কয়েকদিনের মধ্যেই চলে যেতে পারে। যদি তা না হয় তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

কখন ডাক্তার দেখাতে হবে?

বেশিরভাগ সময় বুকের দুধের রঙ পরিবর্তন আপনার খাদ্যাভ্যাসের কারণে হতে পারে। সুতরাং এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তবে বুকের দুধের রঙ কালো হলে আপনাকে প্রেসক্রাইব করা ওষুধ সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।এছাড়াও, লাল এবং গোলাপী দুধের ক্ষেত্রেও আপনার সচেতন হতে হবে। যদি আপনার বুকে লালচে বা গোলাপী বর্ণের দুধ উৎপন্ন হয়, তাহলে তা ব্রেস্ট ইনফেকশনের কারণেও হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

News Desk

Recent Posts

তাপপ্রবাহে শরীরের কোন অঙ্গে বেশি প্রভাব পড়ে?

তীব্র তাপপবাহের কারণে এখন অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রতিদিনই রাস্তায় বের হলে কারও না কারও সঙ্গে ঘটে চলেছে এমন মর্মান্তিক…

7 hours ago

ধীরে ধীরে ফুসফুস নষ্ট করে দেয় ৩ জিনিস

ফুসফুস শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ। কোনো কারণে ফুসফুস সঠিকভাবে না কাজ করলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। আর শ্বাস নিতে না পারলে…

7 hours ago

সাদা পোশাক ঘেমে হলদেটে হয়ে গেলে কী করবেন?

গরমে স্বস্তি পেতে সাদা রঙের পোশাক পরছেন অনেকেই। কারণ সাদাসহ হালকা রঙের পোশাক পরলে শরীর ঠান্ডা থাকে। তবে সাদা পোশাকে…

8 hours ago

গরমে দই খেলে কি সত্যিই শরীর ঠান্ডা থাকে?

গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে অনেকেই দই বা লাচ্ছি খান। পেট ঠান্ডা রাখতে ও খাবার হজম করতে দই খুবই উপকারী, এ…

8 hours ago

এ সময় ডায়রিয়া হলে যা করবেন

শীতের শেষে গরম পড়তে শুরু করেছে। আবহাওয়ার ওঠা-নামায় এ সময় বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধছে। ঠান্ডা-জ্বর-কাশিসহ ডায়রিয়ার প্রকোপও বেড়ে যায়…

8 hours ago

গরমে একাধিক ডিম খেলে শরীরে যা ঘটে

ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকে প্রোটিন, ফলে প্রতিদিন একাধিক ডিম খেলে ছোট-বড় রোগের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। এমনিতে…

11 hours ago