ধীরে ধীরে ফুসফুস নষ্ট করে দেয় ৩ জিনিস

ফুসফুস শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ। কোনো কারণে ফুসফুস সঠিকভাবে না কাজ করলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। আর শ্বাস নিতে না পারলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমতে শুরু করে। এর থেকে অনেকেই মৃত্যুবরণও করতে পারেন।

ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার পেছনে একাধিক রোগ দায়ী। বিশ্বব্যাপী নারী-পুরুষ উভয়ের ক্যানসারের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো ফুসফুসের ক্যানসার।

ফুসফুস ক্যানসার এমন একটি রোগ, যেখানে ফুসফুসের টিস্যুতে বিপজ্জনক কোষ তৈরি হয়। ছোট কোষের ফুসফুসের ক্যানসার ও নন-স্মল সেল ফুসফুসের ক্যানসার এই দুটি ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান প্রকার।

ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ কি?

ক্যানসার হওয়ার জন্য সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে আছে- তামাক, ধূমপান, বায়ুদূষণ, বিকিরণের সংস্পর্শ, কয়লা ও বেরিলিয়ামের মতো রাসায়নিকের সংস্পর্শ কিংবা ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস।

ভারতের যশোদা হাসপাতাল ও হায়দরাবাদের কনসালট্যান্ট ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজিস্ট ডা. ভি প্রতিভা প্রসাদ জানিয়েছেন, কোন ৩ জিনি ধীরে ধীরে ফুসফুসকে নষ্ট করে দেয় ও ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি প্রতিরোধে কী করণীয়-

তামাক ব্যবহার

তামাক ব্যবহার ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান কারণ। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের ফুসফুসের ক্যানসার হয় তামাক ব্যবহারের কারণে। সিগারেট, সিগার, পাইপ, হুক্কা, ইলেকট্রনিক সিগারেট ও তামাক খাওয়া ফুসফুসের জন্য বিপজ্জনক।

অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ২০ গুণ বেশি। তাই ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধ বা ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম উপায় হলো অবিলম্বে ধূমপান বন্ধ করা।

পরোক্ষ ধূমপান

সেকেন্ডহ্যান্ড ধোঁয়াও ক্ষতিকারক। এতেও সিগারেটের মতো একই ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে। যা ফুসফুসের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান বন্ধ করার মাধ্যমে আপনি ও আপনার পরিবার সবাই সুস্থ থাকবেন।

বিকিরণ ও রাসায়নিক

পরিবেশ দূষণের কারণে অনেকেই দৈনিক নানা ধরনের বিকিরণ ও রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসেন। বিশেষ করে রেডন ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এ ধরনের বিকিরণ এড়ানোর চেষ্টা করুন।

এছাড়াওঅ্যাসবেস্টস, কয়লা, সিলিকা, বেরিলিয়াম, আর্সেনিক, নিকেল ইত্যাদির মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিকের দীর্ঘায়িত এক্সপোজার এড়িয়ে চলুন।

ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধের উপায় কী?

ফুসফুসের ক্যানসার স্ক্রিনিং

নিয়মিত ফুসফুসের চেকআপ করার মাধ্যমে আপনি প্রাথমিক অবস্থায়ই ক্যানসার শনাক্ত করতে পারবেন ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন।

আপনি যদি একজন ধূমপায়ী হন, আপনার বয়স ৫০-৮০ বছরের মধ্যে হয় ও বিগত ২০ বছর ধরে প্রতিদিন গড়ে ১ প্যাকেট সিগারেট গ্রহণ করেন তাহলে নিয়মিত ফুসফুসের স্ক্রিনিং করা জরুরি বলে জানান ডা. প্রতিভা।

এছাড়া আপনি যদি এখনো ধূমপান করেন কিংবা ১৫ বছর আগে ধূমপান ছেড়ে দিয়েও থাকেন তাহলেও ফুসফুসের পরীক্ষা করুন।

খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা

ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি ও গোটা শস্য অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলো ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।

একই সঙ্গে প্রতিদিন ফুসফুসের ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করুন। তাহলে ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমবে।

News Desk

Recent Posts

বেশি তরমুজ খেলে কি সত্যিই ওজন বাড়ে?

বাজারে এখন তরমুজ বেশ সহজলভ্য। এই রসালো ফল খেতে কমবেশি সবাই পছন্দ করেন। তবে প্রতিদিন এই ফল খাওয়া কি স্বাস্থ্যের…

3 hours ago

ঘরে রক্তচাপ মাপার সময় যে ভুলগুলো করবেন না

হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ হলো একটি ক্রনিক রোগ। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে এই রোগ থাকে। পাশাপাশি এর কারণে শরীরের অন্যান্য…

23 hours ago

সন্তানের মোবাইল আসক্তি কমাতে কী করবেন?

ছোট্ট সোনামনির হাতে কমবেশি সবাই মোবাইল তুলে দেন কোন না কোনো সময়। তবে কিছু সময়ের জন্য মোবাইল দেখা এক সময়…

1 day ago

ক্যানসার হবে কি না জানতে পারবেন ৭ বছর আগেই

ক্যানসারের নাম শুনলেই কমবেশি সবাই আঁতকে ওঠেন। কঠিন এই ব্যাধি থেকে বাঁচতে সচেতনতা জরুরি। ক্যানসার রোগের আগাম খবর পেতে সারা…

2 days ago

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

হাঁপানি, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও অন্যান্য শ্বাসনালির সংক্রমণজনিত রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে নেবুলাইজার ব্যবহার করা হয়। রোগী যখন ইনহেলারের…

3 days ago

বারবার পানি পিপাসা লাগা কোনো রোগের লক্ষণ নয় তো?

গরমে অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। ফলে বারবার পানি পিপাসা লাগা স্বাভাবিক। আর এ সময় প্রচুর পরিমাণ…

3 days ago