রোজ মাটিতে শুয়ে শরীরের ক্ষতি করছেন নাকি উপকার? জানুন

Written by News Desk

Published on:

কেউ অভ্যাসের কারণে, তো কেউ নিরুপায় হয়ে মাটিতে শুতে বাধ্য় হন। তাই তো এই প্রশ্নের উত্তর জানাটা জরুরি যে মাটিতে শোয়া শরীরের পক্ষে আদৌ ক্ষতিকারক কিনা? এক্ষেত্রে শরীরের উপর কোন বাজে প্রভাব না পরলেও মাটিতে শুলে পিঠের স্বাস্থ্য ঠিক থাকে কিনা, সে বিষয়ে আলোকপাত করাটা জরুরি। জীবনকালের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময়ই আমরা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দি। তাই তো পিঠের নানাবিধ রোগের সঙ্গে শোয়ার একটা সরাসরি যোগ রয়েছে। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে ঠিক ভঙ্গিতে না শোয়ার কারণেই প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ পিঠের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই মাটিতে শোন কী বিছানায়, ঠিক মতো শোয়াটা জরুরি। না হলে কিন্তু শিরদাঁড়াকে বহুদিন কর্মক্ষম রাখা একেবারেই সম্ভব হবে না। প্রসঙ্গত, এই ২১ শতকেও জাপানিরা মাটিতে ঘুমোন। এমনটা করাতে তাদের শরীর আরও চাঙ্গা হয়ে ওঠে বলে মনে করেন তারা। তাও প্রশ্নটা থেকেই যায় যে চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলছে, মাটিতে শোয়া শরীরের পক্ষে ভাল না খারাপ? মাটিতে শুলে পিঠের কোনও ক্ষতি হয় না: একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে মাটিতে শুলে শিরদাঁড়ার নানাবিধ সমস্যা দূর হয়।
তাই একথা বলাই যায় যে মাটিতে শোয়ার সঙ্গে পিঠের কোনও রোগেরই সরাসরি যোগ নই। বরং নরম গোদিতে শুলে পিঠের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। কারণ নরম বিছানায় শুলে শিরদাঁড়া তার প্রয়োজনীয় সাপোর্ট পায় না, ফলে শোয়ার সময় “বডি পসচার” একেবারে ঠিক থাকে না। ফলে পিঠে যন্ত্রণা দিয়ে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে আরও সব রোগ এসে বাসা বাঁধে শরীরে। তাই তো দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচতে এখন থেকেই সপ্তাহে ২-৩ দিন মাটিতে শোয়ার অভ্যাস করুন। তাতে দেখবেন শরীরের উন্নতি হবে।
তবে তাই বলে ঠান্ডার সময় মাটিতে শুতে যাবেন না, তাতে হিতে বিপরীত হবে। প্রসঙ্গত, একাদিক গবেষণায় দেখা গেছে বালিশ ছাড়া শুলে মাটিতে শুলে জীবনে কোনও দিন শিরদাঁড়ার কোনও রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে। তবে ইচ্ছা হলে একটা চাদর পেতে শুতেই পারেন। মাটিতে শুলে ঘুম আসে না? মেনে চলুন এই সহজ কিছু টিপস: ১. সরাসরি মাটিতে শুতে সমস্যা হয়? কোনও চিন্তা নেই! এখন মার্কেটে যোগ ব্যায়ামের জন্য এক ধরনের ম্যাট পাওয়া যায়। সেটা পেতেও শুতে পারেন। এমনটা করলেও সমান উপকার পাবেন, যা সরাসরি মাটিতে শুলে পাওয়া যায়।
২. মাটিতে শুলে ভুলেও পেটের উপর চাপ দিয়ে শোবেন না। বরং পিঠের উপর চাপ দিয়ে শোবেন। এতে শিরদাঁড়া তার সঠিক পজিশনে থাকবে। ফলে ব্যাক পেন সহ পিঠের যে কোনও ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
৩. যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে, নরম গদিতে শুলে অনেক ক্ষেত্রেই শরীরের অবয়ব ঠিক থাকে না। এই অবস্থায় টানা ৬-৮ ঘন্টা ঘুমলে পিঠের পেশির উপর মারাত্মক চাপ পরে। ফলে ব্যাক পেন, স্পন্ডালাইটিস সহ নানাবিধ পিঠ এবং ঘার সম্পর্কিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। উপকার মিললেও মাটিতে শোয়া কিন্তু মোটেও আরাম দায়ক নয়!
একথা মানতেই হবে যে নরম গোদিতে শোয়ার অভ্যাস ছেড়ে মাটিতে শোয়া বেশ কঠিন। তবে প্রথম প্রথম অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে দেখবেন মানিয়ে উঠতে পেরেছেন। আর তাছাড়া যখন মাটিতে শোয়ার কারণে শারীরিক উপকার পেতে শুরু করবেন, তখন আর বিছানায় শোয়র ইচ্ছায় থাকবে না।
তাই তো বলি, মাটিতে শোয়ার অভ্যাসকে যারা ব্যাঁকা চোখে দেখেন, তাদের জেনে রাখা ভাল যে মাটিতে শুলে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। বরং একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে। তাই সময় থাকতে থাকতে মাটিতে শোয়ার অভ্যাস করুন। দেখবেন মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গ একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কাদের মাটিতে শোয়া একেবারেই উচিত নয়? যাদের কোনও ধরনের শারীরিক সমস্যা রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাটিতে একেবারেই শোবেন না। যদি চিকিৎসক অনুমতি দেন, তাহলে কয়েকদিন শুয়ে দেখবেন কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা। যদি কোনও অসুবিধা না হয়, তাহলে নিশ্চিন্তে মাটিতে ঘুমতো পারেন।

Related News