মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার! জেনেনিন

Written by News Desk

Published on:

প্রাচীনকালে মঞ্চ নাটকে ব্যক্তির চারিত্রিক রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য নানা ধরনের মুখোশ ব্যবহৃত হত। অর্থাৎ মানুষের ভেতরের স্বত্তাকে তার মুখোশের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হতো। সনাতন ঢঙে কুমোরদের মাটির পাত্র বানানোর দৃশ্য সবাই দেখেছেন। ঘুর্ণায়মান লাজুক কাঁদা মাটির ছাঁচ হাতের আলতো ছোঁয়ায় নিমেষেই ফুলদানি! ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের সেই ছাঁচটিও আসলে জন্মগতভাবে প্রাপ্ত (জেনেটিক) প্রবণতাতেই মোড়ানো থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির স্বাভাবিক ব্যক্তিত্বের সুনির্দিষ্ট ধরন শৈশব থেকে বয়সন্ধি কালের পরিবারিক, সামাজিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডের নানান অভিজ্ঞতার আলোকে গড়ে ওঠে। অনেকটা কুমোরের সেই শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ার মতন। তাতে কেউ হন রবীন্দ্রনাথ, আর কেউ হন ক্ষ্যাপাটে নজরুল!

এমন একটি মানসিক রোগ আছে, যার কারণে একজন মানুষ বাস করতে পারে প্রায় ১০০টির মতো বিচ্ছিন্ন সত্ত্বা নিয়ে। এই রোগের নাম Dissociative Identity Disorder বা মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বা বহুসত্ত্বা রোগ।

আমরা প্রত্যেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় হয়তো বিচ্ছিন্নতা অনুভব করেছি। হয়ত কথা বলতে বলতে বা কাজ করতে করতেই হঠাৎ কোথাও হারিয়ে গিয়েছি, যাকে আমরা পোশাকি ভাষায় দিবাস্বপ্ন বলে থাকি। কিন্তু Dissociative Identity Disorder দিবাস্বপ্ন থেকে অনেক বেশি কিছু, যার ফলে মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও অন্যান্য কাজের সঙ্গে তার একটি বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। এই রোগে একজন মানুষের মধ্যে একাধিক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ পায়। তা হতে পারে কোনো কাল্পনিক মানুষের, কোনো কল্পনার চরিত্রের, এমনকি কারো কারো মাঝে পশুপাখির স্বভাবও দেখা যায়! মানুষটি অনেকগুলো সত্ত্বার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, নিজেকে আর আলাদা করতে পারে না।

ঐ বিচ্ছিন্ন সত্ত্বাগুলো রোগীকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং যখন সে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, নিজের অন্য সত্ত্বাগুলো সম্পর্কে তার কিছু মনেও থাকে না, তার মনে হয় সে কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল। একে সাইকোলজির ভাষায় ‘ব্ল্যাক আউট’ বলা হয়। একজনের মাঝে দু’য়ের অধিক ব্যক্তিত্বও দেখা যায়। এর সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১ থেকে ১০০। তাই একে ‘মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার’ও বলা হয়।লক্ষণঃ

১। রোগী তার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ভুলে যেতে থাকে, যা সাধারণত তার ভুলে যাওয়ার কথা না ।
২। রোগী অনেক সময় অনুভব করে সে তার শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে ।
৩। তার মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা ও প্রচুর পরিমাণে হতাশা থাকে।
৪। মুড সুইং হয় প্রতিনিয়ত।
৫। ঘুমের সমস্যা দেখা যায়, যেমন– ঘুম হয় না, ঘুমের মাঝে ভয় পাওয়া, ঘুমের মাঝে হাঁটা ইত্যাদি ।
৬। অস্থিরতা, প্যানিক অ্যাটাক ও বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়া দেখা যায়; যেমন– পুরনো স্মৃতি মনে পড়া এবং সেগুলোর প্রতি বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখানো।
৭। বিভিন্ন ড্রাগের প্রতি আসক্তি দেখা যায়।
৮। অনেক সময় হ্যালুসিনেশন হতে দেখা যায়।

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মাত্র ০.০১% থেকে ১% এ রোগে আক্রান্ত। নারীদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। বিচ্ছিন্নতাকে গাঢ় করে দেখলে, প্রায় ১ তৃতীয়াংশ মানুষ বলে থাকে, তারা অনুভব করে, তারা তাদের নিজেদের সিনেমায় দেখছে! এবং প্রায় ৭% মানুষ কোনো সনাক্তকরণ ছাড়াই মনে করে যে তাদের রোগটি রয়েছে!

Related News