শিশু ঘুমাতে চাইছে না? জেনেনিন এতে কি করণীয়

Written by News Desk

Published on:

অনেক শিশুই রাত বারোটা বেজে যাওয়ার পরও ঘুমাতে চায় না। অনেক শিশুই এসময় টিভি দেখে না হয় ভিডিও গেম খেলায় ব্যস্ত থাকে। বিশেষজ্ঞের মতে, ৬-১২ বছর বয়সের শিশুদের কমপক্ষে দশ থেকে বারো ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শিশুদের শরীরে এবং মনে বিভিন্ন সমস্যার উৎপত্তি হতে পারে।

সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের অভাব শিশুদের আরও অস্থিরমতি করে তোলে। রাতের ঘুম পর্যাপ্ত না হলে শিশুদের মনোযোগের ক্ষমতা নষ্ট হয়। তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে মুড সুইং বা খিটখিটে ভাব। ঝিমুনিভাব বা অসময়ে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাসও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও বাচ্চাদের স্লিপিং প্যাটার্ন তাদের মস্তিষ্ক বিকাশ এবং স্মৃতিশক্তির উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটসের কয়েকজন গবেষকদের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী, যেসব শিশুদের মধ্যে রাত জাগার প্রবণতা ছিল, তারা কোর্সওযোর্কের প্রায় ১৫ শতাংশই ভুলে গেছিল। এ কারণে শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যতই ব্যস্ততা থাকুক, শিশুর ঘুমোনোর সময়ের যেন কোনও হেরফের না ঘটে সেই দিকে খেয়াল রাখুন। ছুটির দিনগুলিতেও এই রুটিনে যাতে কোনওরকম ব্যাঘাত না ঘটে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোনোর অভ্যাস একবার তৈরি হয়ে গেলে, শিশু এমনিতেই ঘুমিয়ে পড়বে।

ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন : ভাল ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের প্রয়োজন । শিশু শুতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে তার হাতের নাগাল থেকে টিভির রিমোট, মোবাইল বা ভিডিয়ো গেম সরিয়ে ফেলুন। শিশুর ঘুমের যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য তার ঘরে যাতে কোনওরকম কড়া আলো না থাকে তার ব্যবস্থা করুন। শিশু শুতে যাওয়ার পর জোরে টিভি দেখা বা গান শোনা থেকে বিরত থাকুন। শোয়ার সময় শিশুকে ধীর গতিতে বিভিন্ন ধরনের গল্প পড়ে শোনাতে পারেন। এতে তার কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটবে, এবং তাকে ঘুমোতে সাহায্যও করবে। ধীর গতিতে গল্প পড়ে শোনালে শিশুর মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস এবং থ্যালামাসকে প্রভাবিত করে তাকে শান্ত করে, যার ফলে শিশু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েও পড়ে।

কোনওরকম সমস্যা রয়েছে কিনা খোঁজ নিন : বিশেষজ্ঞের মতে, অনেক সময় নিছক দুষ্টুমি বা ছটফটে স্বভাবের জন্য নয়, বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যার কারণেও শিশুদের ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। হাঁপানি বা অ্যাজ়মার অথবা অ্যাডিনয়েডের সমস্যা থাকলে শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই ভাল। এছাড়াও স্কুলে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মনমালিন্য বা অন্য কোনও কারণে ওর মধ্যে কোনও মানসিক চাপ বা স্ট্রেস তৈরি হলেও ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেইক্ষেত্রে খোলাখুলি আলোচনা করুন ওর সঙ্গে।

খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনুন : ঘুমের সমস্যার পিছনে খাওয়াদাওয়ারও ভূমিকা থাকে। একেবারে খালি পেটে শিশুকে শুতে না পাঠানোই ভাল কারণ ক্ষুধার কারণে মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙে যেতে পারে। তাই ঘুমোনোর আগে একগ্লাস দুধ খাওয়াতে পারেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ইউমইয়াং রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর নিউরোসায়েন্সের একটি গবেষণা অনুযায়ী, দুধে থাকা ট্রিপ্টোফ্যান নামের একপ্রকার অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মেলাটোনিন বা ‘স্লিপ হরমোন’ এ রূপান্তরিত হতে পারে। তবে ভারি বা প্রচুর তেলমসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল কারণ তার ফলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে , যার থেকে শিশুর ঘুমের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও যতটা সম্ভব সন্ধ্যায় শিশুকে কফি, চকোলেট বা কোমল পানীয়র মতো ক্যাফেইন যুক্ত খাবারের থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। ক্যাফেইন অ্যাডেনোসিনের মতো ঘুমের হরমোনের নষ্ট করে ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি করে।

Related News