হৃদরোগ বর্তমানে সাধারণ সমস্যার তালিকাতেই ধরা হয়। বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। প্রতিবছর বিশ্বে যত মানুষ মারা যায়, তার ৩১ শতাংশই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৩ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অনিয়মিত জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া, শরীরচর্চায় মনোযোগী না হওয়া। চলুন জেনে নেওয়া যাক কাদের হৃদরোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি-
>> যাদের দাঁতের সমস্যা আছে; তাদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে। খানিকটা অবাক হলেও এটি সত্যি। মাড়ির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহজেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাড়ির ব্যাকটেরিয়াগুলো রক্ত প্রবাহের সঙ্গে শরীরে মিশে যায়।
যা পরবর্তীতে হৃদরোগের সৃষ্টি করে। এজন্য প্রতি ৬ মাস অন্তর দাঁত পরীক্ষা করান। সময়মতো চিকিৎসা আপনাকে এই সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে। পাশাপাশি প্রতিদিন ঠিকভাবে দুইবেলা ব্রাশ, ফ্লস করুন।
>> কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, যারা রাতের শিফটে কাজ করেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। গবেষকরা বলেছেন, বদলি কাজ কিংবা রাত জেগে কাজ করা আপনার শরীর এবং হার্টের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে যদি একান্তই রাতে কাজ করতেই হয়, তবে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে কিছু অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। ব্যায়াম করুন, সুষম খাবার রাখুন ডায়েটে এবং নিয়মিত চেকআপ করান। চিকিৎসকের পরামর্শে চলুন।
>> যারা নিয়মিত লম্বা ট্রাফিক পার করেন; তাদেরও হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি বলছেন গবেষকরা। ধরুন, প্রতিদিন অফিসে যেতে আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক সিগন্যালে বসে থাকতে হয়।
এতে অফিসে কখন পৌঁছাবেন, ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারবেন কিনা, দেরি হয়ে যাচ্ছে, হাজিরা বাদ পড়ে যাবে- এসব দুশ্চিন্তায় দিনের অনেকটা সময় পার করেন। এতে করে হার্টের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। যা হৃদরোগের অন্যতম কারণ।
>> নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে মেনোপোজ। এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। সাধারণত ৪৫-৫৫ বছর বয়সে নারীদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে আসার ঘটনা ঘটে। তবে অপারেশন করে যদি কোনো নারী তার দুটো ওভারি অথবা জরায়ু ফেলে দেয় তাহলেও পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়।
যুক্তরাজ্যে নারীদের মেনোপজ হওয়ার গড় বয়স ৫১ বছর। গবেষণা বলছে, ৪৫-৪৬ বছর বয়স হওয়ার আগেই যদি কোনো নারী মেনোপোজের মধ্য দিয়ে যান; তাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। চিকিৎসকরা এজন্য হরমোন ওঠা-নামা এবং উচ্চ কোলেস্টেরলকে দায়ী করেন।
>> বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের নাক ডাকার অভ্যাস আছে; তাদের ক্ষেত্রেও হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি। কেননা নাক ডাকার জন্য আপনার ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসে আংশিক বাঁধা সৃষ্টি হতে পারে।
যা আপনার হার্টবিট বৃদ্ধি, স্ট্রোকসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। যেহেতু নাক ডাকার ফলে সহজে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না; তাই এক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে মনে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
>> হেপাটাইটিস সি বা লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও আছে হৃদরোগের ঝুঁকি। গবেষকরা মনে করেন, হেপাটাইটিস সি হৃদরোগসহ শরীরের কোষ এবং টিস্যুগুলোর প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। তাই হার্টের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
>> নির্ঘুম রাত কাটানোর অভ্যাস বা অনিদ্রাও হতে পারে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ। এটি আপনার হার্টের সমস্যা সৃষ্টি করতে একেবারেই সময় নিবে না। একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুম খুবই জরুরি।
আর যখনই রাতে আপনি না ঘুমিয়ে কাটাবেন; তখনই আপনার উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের সমস্যা দেখা দিবে। যা হৃদরোগ সৃষ্টি করার প্রধান ধাপ।
>> পারিবারিক কলহও এই রোগের জন্য দায়ী। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্ত বয়স্কদের যেসব ব্যক্তিরা তাদের সংসারে সন্তুষ্ট থাকেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কম। সম্ভবত এর কারণ কম স্ট্রেস।
যখন আপনি খুশি থাকবেন আপনার মানসিক চাপ কম হবে, সময়মতো খাবার খেতে পারবেন, আপনার হরমোন ওঠা-নামা ঠিক থাকবে। যা আপনার হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য যথেষ্ট। আর যারা বিবাহিত জীবনে সুখী নন। তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রেস অনেক বেশি থাকে। যা হার্টের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
>> একাকীত্ব নানা রোগের কারণ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হার্টের সমস্যা। আপনি যখন প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাবেন; তখন আপনার মন ভালো থাকবে। কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না। এতে শরীর মন দুটোই সুস্থ থাকবে।
অন্যদিকে নিঃসঙ্গ মানুষদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনি যদি পরিবার বা কাছের বন্ধুদের কাছাকাছি না থাকেন; তবে কুকুর বা বিড়াল পোষ্য হিসেবে রাখতে পারেন। এদের সঙ্গে আপনার ভালো সময় কাটবে।
>> যাদের ভুঁড়ি আছে বা অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন; তারাও হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন। ব্যায়াম না করা, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খারাপ, ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে পেটে চর্বি জমে যায়। এতে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলসহ নানা সমস্যায় ভোগেন। যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকখানি।
>> অনেক বেশি যারা টিভি দেখেন; তাদেরও হৃদরোগের ঝুঁকি আছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতি ঘণ্টায় এটি প্রায় ২০ শতাংশ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
>> মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক কসরত, ব্যায়াম বা শরীরচর্চাও হতে পারে হৃদরোগের কারণ। গবেষণায় দেখা যায়, হার্টের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে অবশ্যই ব্যায়াম করা, ওজন কমানো দরকার।
তবে তা হবে সীমাবদ্ধ। দিনে একটি নির্দিষ্ট সময় আপনি ব্যায়াম করুন। তা হতে পারে ২ ঘণ্টা কিংবা ৩ ঘণ্টা। তবে অবশ্যই প্রতিদিন একই সমান ব্যায়াম করুন। কোনো দিন কম কোনো দিন বেশি এমন নয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ মুশকিল। যদিও সঠিক জীবনযাত্রা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এমনকি এর থেকে মুক্তিও মেলে।…
সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম অধিক জরুরি। এ কারণেই প্রতিদিন নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা সবাইকে ঘুমাতে হয়। ঘুমানোর ফলেই শরীরে মেলে বিশ্রাম। শুধু…
রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর অনেকেই জানতে পারেন হিমোগ্লোবিনের ঘাটতিতে ভুগছেন তিনি। এ সমস্যায় কমবেশি সবাই ভুগে থাকেন। তবে ক্রমশ…
অনেকেই ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে চিনি খাওয়া এড়িয়ে চলেন। আবার বেশি চিনি খাওয়া রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দিয়ে নানান রোগের সৃষ্টি…
কান শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ। তবুও বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই অঙ্গটি নিয়ে উদাসীনতা দেখা যায়। গোসল করতে গিয়ে কানে পানি ঢুকে…
বয়স বাড়তেই বাবা-মা সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর সন্তানেরও উচিত এ সময় বাবা-মায়ের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হওয়া। বিশেষ করে…