ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন যেভাবে কাজ করে?

রূপচর্চা এখন নিত্যদিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সভ্যতার আধুনিকায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক হয়েছে রূপচর্চার ধরন ও কৌশল। আধুনিক যুগে রূপচর্চা শুধু মেকওভারে সীমাবদ্ধ নয়। রূপচর্চায় অনেকটা জায়গা নিয়ে আছে ত্বকের যত্ন।

সবাই এখন ত্বকের যত্নে ব্যবহার করছে বহু ধরনের প্রসাধনী। যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের কাছে। আর ডার্মাটোলজিস্টরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ত্বকের ধরন অনুযায়ী পরামর্শ দিচ্ছেন ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম, সিরাম, সানস্ক্রিন ইত্যাদি।

রোদের তীব্রতা থেকে ত্বকের সুরক্ষায় একটি কার্যকরী উপায় হলো সানস্ক্রিনের ব্যবহার। সূর্যের অতিবেগুণী (আলট্রাভায়োলেট বা ইউ ভি) রশ্মি আমাদের ত্বকের নানাবিধ ক্ষতি করে থাকে। সূর্যের আলোয় থাকা ক্ষতিকর রশ্মি ইউভিএ ও ইউভিবি ওজন স্তর ভেদ করে এসে আমাদের ত্বকের ক্ষতি তৈরি করে।

যেমন- ত্বকে কালো ছোপ পড়া, অল্প বয়সে মুখে বলিরেখা দেখা দেওয়া, এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। ত্বক পাতলা হয়ে যেতে থাকে, ত্বকের মসৃণতা, টানটান ভাব কমে ত্বক কুঁচকে গিয়ে বুড়িয়ে যাওয়ার মতো রূপধারণ করে। এমনকি অ্যালার্জি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। সানস্ক্রিন এসব ক্ষতি হওয়া থেকে আমাদের ত্বককে সুরক্ষা দেয়।

সানস্ক্রিন ব্যবহারের উপকারিতা

অতিবেগুণী রশ্মি থেকে রক্ষা: সূর্যরশ্মি শরীরের ভিটামিন ডি তৈরিতে করতে সহায়তা করে। তবে বেশি সময় রোদে থাকা ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সানস্ক্রিন সূর্যের অতিবেগুণী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে।

বয়সের ছাপ দূর করে: অনেক গবেষণায় দাবি করা হয়, ৫৫ বছর বয়সের নিচের যারা নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন; তাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার সমস্যা শতকরা ২৪ শতাংশ কমে যায়।

ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস: অতিবেগুণী রশ্মির জন্য ত্বকের সুরক্ষার স্তর পাতলা হতে থাকে। ফলে ত্বকে নানা রকমের ক্ষতি যেমন- ক্যান্সার বিশেষত, ‘মেলানোমা’ দেখা দেয়। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহারে ত্বক সুরক্ষিত থাকে এবং ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে।

রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করে: রোদে থাকার ফলে ত্বকে পোড়াভাব দেখা দেওয়ার পাশাপাশি ফুস্কুড়ি, লালচে ভাব, চুলকানিও হতে পারে। এগুলো থেকে রক্ষা দিতে পারে সানস্ক্রিন।

সঠিক সানস্ক্রিন নির্বাচন করুন

সানস্ক্রিন কেনার আগে ‘সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (SPF)’ সংখ্যাটা কত তা দেখা খুব জরুরি। এই সংখ্যা দিয়ে বোঝা যায় একটা নির্দিষ্ট সানস্ক্রিন কত সময় ধরে ত্বককে ইউভিবি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে পারবে।

সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বিভিন্ন নম্বরে আসে যেমন- এসপিএফ-১৫, এসপিএফ-৩০, এসপিএফ-৪৫, এসপিএফ-৫০ এবং এসপিএফ-৬০। যারা অনেকক্ষণ বাইরে থাকেন; তারা বেশি এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। ‘প্রোটেকশন গ্রেড অফ আলট্রাভায়োলেট এ’ বা পিএ কত, এটাও দেখে নেওয়া উচিত।

এটি পিএ ‘+’, ‘++’, ‘+++’ ইত্যাদি দিয়ে নির্দেশ করা হয়। এটি দ্বারা সানস্ক্রিনের সূর্যের আলো থেকে আসা আলট্রাভায়োলেট থেকে ত্বককে কতটা সুরক্ষা দেবে তা বোঝায়। যে সানস্ক্রিনের পিএ-এর পাশে ‘+’ চিহ্ন বেশি থাকবে; সেটা ততো বেশি শক্তিশালী।

সানস্ক্রিনের ব্যবহার

ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। শুষ্ক, তৈলাক্ত, সেনসিটিভ এ তিন ধরনের ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বক অনেক ভালো থাকে। ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়; তাহলে সানস্ক্রিন পাউডার বা ক্রিম, জেল বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন।

শুষ্ক ত্বকের জন্য সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। যাদের খুবই সেনসিটিভ ত্বক; তারা সানস্ক্রিন ক্রিম/ লোশন/জেল ব্যবহার করতে পারেন। রোদে বের হওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে সানস্ক্রিন মাখুন। প্রয়োজনে ব্যাগে রাখুন সানস্ক্রিন।

যারা নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন; তাদের কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। সারাদিন পর যখন বাড়ি ফিরবেন অবশ্যই আগে ভালো করে সানস্ক্রিন ত্বক থেকে ধুয়ে ফেলবেন। ফেসওয়াস দিয়ে ঠান্ডা জলে ভালো করে মুখ ধুয়ে নেওয়া উচিত৷।

সানস্ক্রিন ব্যবহার করার সময় যে বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি-

>> সানস্ক্রিন কেনার আগে মেয়াদ ও উপাদান দেখে কিনুন। খেয়াল করতে হবে সানস্ক্রিনে যেন জিঙ্ক অক্সাইড, টিটানিয়াম ডিঅক্সাইড, অক্টাইল মেথোক্সিসিনামেট (ওএমসি)/ অকটিনোক্সেট, অ্যাভোবেনজন, এনজাকামিন থাকে।

>> ত্বক ব্রণপ্রবণ বা তৈলাক্ত হলে জেল বা জল ভিত্তিক অথবা ‘নন-কমেডোজেনিক এবং হাইপোঅ্যালার্জেনিক সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

>> সানস্ক্রিন যেন দীর্ঘস্থায়ী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

>> বাইরে যাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।

>> সমুদ্রসৈকতে বা বাইরে কড়া রোদে দীর্ঘক্ষণ থাকতে চাইলে দু-তিন ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

>> সানস্ক্রিন এসপিএফ-৩০ বা তার বেশি হয় এবং তা যেন জলরোধী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

>> পুরো শরীরে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত নয়। শরীরের যে যে অংশে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে; সেসব জায়গায় ব্যবহার করতে হয় সানস্ক্রিন।

>> শুধু গরমকালেই নয়, সারাবছরই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এমনকি শীত এবং বর্ষাকালেও। কারণ সানস্ক্রিন আমাদের ত্বককে সূর্যের অতিবেগুণী রশ্মি থেকে বাঁচায়।

>> বাজারে বিভিন্ন ধরনের ও মূল্যের সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্য থেকে ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিনটি কিনতে হবে।

>> ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

News Desk

Recent Posts

তাপপ্রবাহে শরীরের কোন অঙ্গে বেশি প্রভাব পড়ে?

তীব্র তাপপবাহের কারণে এখন অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রতিদিনই রাস্তায় বের হলে কারও না কারও সঙ্গে ঘটে চলেছে এমন মর্মান্তিক…

14 hours ago

ধীরে ধীরে ফুসফুস নষ্ট করে দেয় ৩ জিনিস

ফুসফুস শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ। কোনো কারণে ফুসফুস সঠিকভাবে না কাজ করলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। আর শ্বাস নিতে না পারলে…

14 hours ago

সাদা পোশাক ঘেমে হলদেটে হয়ে গেলে কী করবেন?

গরমে স্বস্তি পেতে সাদা রঙের পোশাক পরছেন অনেকেই। কারণ সাদাসহ হালকা রঙের পোশাক পরলে শরীর ঠান্ডা থাকে। তবে সাদা পোশাকে…

14 hours ago

গরমে দই খেলে কি সত্যিই শরীর ঠান্ডা থাকে?

গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে অনেকেই দই বা লাচ্ছি খান। পেট ঠান্ডা রাখতে ও খাবার হজম করতে দই খুবই উপকারী, এ…

15 hours ago

এ সময় ডায়রিয়া হলে যা করবেন

শীতের শেষে গরম পড়তে শুরু করেছে। আবহাওয়ার ওঠা-নামায় এ সময় বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধছে। ঠান্ডা-জ্বর-কাশিসহ ডায়রিয়ার প্রকোপও বেড়ে যায়…

15 hours ago

গরমে একাধিক ডিম খেলে শরীরে যা ঘটে

ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকে প্রোটিন, ফলে প্রতিদিন একাধিক ডিম খেলে ছোট-বড় রোগের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। এমনিতে…

17 hours ago