এই ৬টি সহজ কৌশল এ রাতে ভালো ঘুমানোর, জেনেনিন বিস্তারিত

যদি আপনার দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপন করার আগ্রহ থাকে তবে আপনাকে রাতের ভাল ঘুমের জন্য বিনিয়োগ করা উচিত। এ কথা বলেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ম্যাথিঊ ওয়াকার।

একশো বছর আগে মানুষ যতটা ঘুমাতো এখন মানুষ ঘুমায় তার চেয়ে কম। বর্তমান উন্নত বিশ্বে যে সমস্ত রোগ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে আলজেইমার্স, ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যা-এ সবকিছুর সাথে ঘুমহীনতার গভীর সম্পর্ক আছে।

তবে ঘুম হতে হবে স্বাভাবিক, ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুম নয়। ঘুমের ওষুধ হতে পারে ক্যান্সার, সংক্রমণের কারণ।

আমরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে শরীর ও মস্তিস্ক কাজ বন্ধ করে দেয়। এখন মানুষ আগের চেয়ে অনেক কম ঘুমায়। মানুষের সময় কম। সুস্বাস্থ্যের জন্য একজন ব্যক্তির সাধারণভাবে সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। এটা সৃজনশীল কাজ এবংমানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও জরুরি।

সাতঘন্টা কম সময় ঘুমালে নিজের শরীর ও মস্তিস্তে তার প্রভাব নিজে অনুভব করতে পারবেন: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কর্মক্ষমতায় প্রভাব পড়বে।

প্রচুর বৈজ্ঞানিক উপাত্ত আছে যা প্রমাণ করছে যে, পর্যাপ্ত এবং ভালো ঘুম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে কত নিবিড়ভাবে জড়িত।

এখনো আমাদের অনেকেই জানিনা কিভাবে এবং কেন আমরা চাইলেই ঘুমাতে পারিনা। এবং ভালো ঘুমের জন্য কী করতে পারি?

ঘুম কিন্তু কেবল বালিশে মাথা রাখার ব্যাপার নয়। ঘুমাতে পারছেন না- এমন মানুষের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে বাড়ছে।

প্রফেসর ওয়াকার ‘হোয়াই উই স্লিপ’ বা কেন আমরা ঘুমাই’ শিরোনামে বই লিখেছেন, তিনি বলেছেন, বিশ্বের একটা বিশাল অংশ অন্ধকারে জেগে থাকে। যে ঘুম তাদের নষ্ট হচ্ছে, সেটা যে পূরণ করা দরকার, সেটা তারা ভাবে না। তারা মনে করে, ‘যা গেছে তা গেছে’।

কিন্তু কীভাবে আরও ভালোভাবে ঘুমানো যায়, সেটা কিন্তু আপনি শিখতে পারেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন যদি নিজের অভ্যাসকে পাল্টে ফেলতে পারেন, তাহলে আপনি সাথে-সাথেই এর সুফল পাবেন।

প্রতিদিন একই সময়ে বিছানায় যাওয়া এবং বিছানা ছাড়া

প্রতিদিন রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে। আবার সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে রোজ বিছানা ছাড়তে হবে।

প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা ঘুমানোর সময়কালকে নিয়মিত রাখবে। কারণ দিনের শেষে একটা নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে ঘুম-ভাব চলে আসবে।

নিজেকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিন

মেলাটোনিন-এমন এক জটিল ধরনের হরমোন যা ভালো, স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য দরকার আর তার জন্য প্রয়োজন অন্ধকার।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা নিয়মিতভাবে বৈদ্যুতিক আলোর মাঝে ডুবে আছি। কিন্তু ঘুমের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারে যে কেউ ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে ঘরের বাতি কমিয়ে দিয়ে।

স্ক্রিন থেকেও লগ অফ করতে হবে, কেননা তা বিশেষ করে নীল আলোর বর্ণচ্ছটায় পরিপূর্ণ, যা মেলাটোনিনকে প্রতিরোধ করতে অত্যন্ত শক্তিশালী।

সুতরাং ঘুমানোর পূর্বে একঘণ্টার মধ্যে কোন ধরনের নীল আলো থাকা যাবেনা।

শীতল আরামদায়ক পরিবেশ

ঘুমের অভাব আমাদের মস্তিষ্ক এবং দেহে নাটকীয় প্রভাব ফেলে। ঘুমানোর জন্য শীতল পরিবেশ দারুণ ভূমিকা রাখে।

ঘুমানোর আগে শরীরের জন্য আরামদায় শীতল পরিবেশ তৈরি করতে প্রয়োজনে কক্ষে তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।

ঘুমের জন্য বিছানা তৈরি

আপনার মস্তিককে এমন একটি বার্তা দিন যে “বিছানা মানেই ঘুম।” বিছানা সারারাত ধরে এপাশ-ওপাশ করা আর আর ঘুমানোর আশায় শুয়ে থাকার জন্য নয়।

যদি ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসে, তাহলে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ুন এবং অন্য কিছু করুন। হতে পারে হাঁটাহাঁটি, কিংবা হালকা মেজাজের কিছু পড়া-যতক্ষণ না ঘুমের জন্য তৈরি হচ্ছে শরীর ও মন।

কফির মত উদ্দীপক কোনকিছু বর্জন

নিয়মিতভাবে আমরা প্রচুর পরিমাণে উদ্দীপক পানীয় যেমন কোলা, কফি খাচ্ছি। স্নায়ুতন্ত্রে ওপর এসবের উত্তেজক প্রভাব অজানা নয় কারো।

ঘুমানোর সময়ে থেকে ১২ ঘণ্টা আগে এসব খাওয়া বন্ধ করতে হবে। হ্যাঁ প্রফেসর ওয়াকার কঠিন ভাবে ১২ ঘণ্টার কথাই বলেছেন।

কেননা এর প্রভাব শরীরে থেকে যায় দীর্ঘ সময়। কফি পানের ছয় ঘণ্টা পরও রক্তে তা যে পরিমাণে থেকে যায় তা আধা গ্লাস এক্সপ্রেসো পানের সমান। আর নয় ঘণ্টা পরে তা থাকবে তিন-চতুর্থাংশের সমান।

তাই আপনার রক্ত প্রবাহ থেকে এটি পুরোপুরি সরাতে আপনার ১২ ঘণ্টা দরকার!

অ্যালকোহল ছাড়ুন

জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে গিয়ে বলতে হবে, অ্যালকোহল আপনার ঘুম আনতে বা সত্যিকার রিল্যাক্স দিতে কোনও সাহায্য করবে না।

অ্যালকোহল পান করে যে ঘুম আসবে তা আপনাকে শক্তি-দায়ক ঘুম যেমন দেবে না, এবং তা নানারকম স্বপ্নের দ্বারা আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবে।

News Desk

Recent Posts

তাপপ্রবাহে শরীরের কোন অঙ্গে বেশি প্রভাব পড়ে?

তীব্র তাপপবাহের কারণে এখন অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রতিদিনই রাস্তায় বের হলে কারও না কারও সঙ্গে ঘটে চলেছে এমন মর্মান্তিক…

8 hours ago

ধীরে ধীরে ফুসফুস নষ্ট করে দেয় ৩ জিনিস

ফুসফুস শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ। কোনো কারণে ফুসফুস সঠিকভাবে না কাজ করলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। আর শ্বাস নিতে না পারলে…

8 hours ago

সাদা পোশাক ঘেমে হলদেটে হয়ে গেলে কী করবেন?

গরমে স্বস্তি পেতে সাদা রঙের পোশাক পরছেন অনেকেই। কারণ সাদাসহ হালকা রঙের পোশাক পরলে শরীর ঠান্ডা থাকে। তবে সাদা পোশাকে…

9 hours ago

গরমে দই খেলে কি সত্যিই শরীর ঠান্ডা থাকে?

গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে অনেকেই দই বা লাচ্ছি খান। পেট ঠান্ডা রাখতে ও খাবার হজম করতে দই খুবই উপকারী, এ…

9 hours ago

এ সময় ডায়রিয়া হলে যা করবেন

শীতের শেষে গরম পড়তে শুরু করেছে। আবহাওয়ার ওঠা-নামায় এ সময় বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধছে। ঠান্ডা-জ্বর-কাশিসহ ডায়রিয়ার প্রকোপও বেড়ে যায়…

10 hours ago

গরমে একাধিক ডিম খেলে শরীরে যা ঘটে

ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকে প্রোটিন, ফলে প্রতিদিন একাধিক ডিম খেলে ছোট-বড় রোগের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। এমনিতে…

12 hours ago