এরা স্বার্থপর মানুষ কি না,কিভাবে চিনবেন?

Written by News Desk

Published on:

হুট করে স্বার্থপরের সঙ্গে যে কারো দেখা হয়ে যেতে পারে। তখন দেখা যায়, সে আলোচনার সব বিষয় নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সে সবসময় নিজের মহত্ত্ব প্রকাশে গর্ব করে।
পরিবারের সদস্যরা আর দশজন থেকে তাকে সব ক্ষেত্রে আলাদা করে দেখুক, এটাই সে চায়। কিন্তু মাঝে মধ্যে তার বৈশিষ্ট্য আরো সূক্ষ্মভাবে দেখা যেতে পারে।
সবসময় আবার স্বার্থপরদের চেনা মুশকিল। কারণ অনেক সময় তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় না।

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের প্রধান ও স্বার্থপরতা বিষয়ক গবেষক ডব্লিউ কেনেথ কম্পবেল বলেন, যারা স্বার্থপরতামূলক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, তাদের মধ্যে চলমান একটা স্বভাবসুলভ আচরণ লক্ষ করা যায়। চলার পথে হঠাৎ করে কারও সঙ্গে পরিচয় হলে এদের ব্যবহারে বোঝাই যাবে না এরা ভয়ানক স্বার্থপর মানুষ। কিন্তু পরবর্তীতে স্বার্থপরের লক্ষণগুলো তার মধ্যে দেখা যাবে।

ইয়োয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. জেলাটন ক্রাইজেন বলেন, ‘একপ্রকার স্বার্থপর নিজেকে প্রবলভাবে কর্তৃত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করে। আরেক প্রকার লাজুক, যারা নিজেকে সহজে স্পষ্ট করে উপস্থাপন করে না এবং সংকীর্ণ প্রকৃতির হয়। কিন্তু তারা দৃঢ়ভাবে মনে করে তাদের দিন একদিন আসবে।’

নিজেকে নেতা হিসেবে জাহির করতে তৎপর: সফল না হলেও তারা নিজেকে সর্বদা নেতৃত্বের পর্যায়ে রাখতে তৎপরতা দেখায়। সান ডিয়াগো স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ও স্বার্থপরতা বিষয়ক গবেষণায় কম্পবেলের সহযোগী ড. জিয়ন টুয়েনজ বলেন, এরা সবসময় নিজেকে নেতা হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু ভালোভাবে নেতৃত্ব দিতে পারছে কি না, তা দেখে না। তারা নিতান্তই নেতা হতে চায়, যে করে হোক না কেন।

তাক লাগানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে: কম্পবেল বলেন, এ প্রকারের স্বার্থপর নিজের অবস্থান আরো বড় করে দেখানোর জন্য নিজের আত্মীয় স্বজন কিংবা বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নাম উল্লেখ করে এবং তাদের বিখ্যাত উক্তি, সূত্র, ঘটনা প্রভৃতি তুলে ধরে। আলোচনার মধ্যে নিজের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করতে তারা এ কৌশল নেয়। তাদের সঙ্গে নিজের যোগাযোগ বা খাতিরের সত্য-মিথ্যা গল্পও হাজির করে।

নিজের সমালোচনা সহ্য করে না: এ প্রকারের স্বার্থপর তার সমালোচনা কোনোভাবেই মেনে নেয় না। গবেষক কম্পবেল বলেন, তার সমালোচনা কেউ করলে সে সহ্য করতে পারে না। এমন কি সে নিজের সমালোচনামূলক কোনো নেতিবাচক কিছু স্বীকারও করে না কোনোভাবেই।

ব্যর্থতার দিক এড়িয়ে যাবে: এ প্রকারের স্বার্থপরের জীবনে অবশ্যই অনেক ব্যর্থতার দিক থাকবে কিন্তু সে তার ব্যর্থতার দিকগুলো এড়িয়ে যাবে। এমনকি যখন শুনবে তার কাছের বন্ধু বা সহপাঠী বিপদে বা খারাপ পরিস্থিতিতে আছে, তখন সে তাদের এড়িয়ে যাবে। কম্পবেল বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে এরা অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখে। সম্পর্ক নষ্ট করতে তাদের এ রকম ব্যবহারে অন্য জন আর কখনো তাকে বিশ্বাস করে না।

প্রতারণাপূর্ণ মনোভাব: এ ধরনের স্বার্থপরেরা অন্যকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখে এবং বিশ্বাস করতে চায় না। এদেরকে অনেক আকর্ষণীয় মনে হতে পারে বাহ্যিকভাবে কিন্তু এরা প্রতারণামূলক আচরণ করে থাকে। গবেষক কম্পবেল বলেন, এদেরকে কেন প্রতারক বলা হবে, সেটা বুঝতে হলে প্রশ্ন করুন কেন এরা সবাইকে অবিশ্বাস করে?

নিজেকে কখনই স্বার্থপর হিসেবে মনে করে না: এই প্রকারের স্বার্থপরেরা কখনই নিজেকে স্বার্থপর হিসেবে মনে করে না। এমনকি সে নিজেকে কখনই স্বার্থপর হিসেবে বুঝতেও চায় না বা চেষ্টাও করে না। গবেষক ক্রাইজেন বলেন, সহপাঠীরা তার মধ্যে স্বার্থপরতার প্রমাণ পেয়ে ছেড়ে চলে গেলেও সে নিজেকে একজন স্বার্থপর হিসেবে স্বীকার করে না। বরং সে বলে আমি তো ঠিক আছি, আমার সব কিছুই তো ভালো কিন্তু কেন সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে?

আত্মমর্যাদায় তুঙ্গে: এই প্রকারের স্বার্থপরেরা নিজের স্ট্যাটাস সব সময় উঁচুতে রাখতে সচেষ্ট থাকে। গবেষক টুইনজ বলেন, এরা নিজেকে সবসময় উচ্চ আত্মমর্যাদায় রাখতে চায় এবং কখনই নিজেকে অনিরাপদ ভাবে না। কম্পবেল বলেন, এ ধরনের স্বার্থপরকে খুব আত্মবিশ্বাসী মনে হয়।

Related News