নিয়মিত প্রতিদিন সাইকেল চালালে সত্যি কি বাবা হাওয়ার ক্ষমতা চলে যায়? জেনেনিন

Written by News Desk

Published on:

এই নিয়ে হওয়া একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে বাকি অ্যাথেলিটদের তুলনায় সাইকেলিস্টদের স্পার্ম কাউন্ট বাস্তবিকই কম থাকে। কিন্তু এর পিছনে কারণ কী? সাধারণ মানুষরাও কি একই সমস্যার শিকার হতে পারেন? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সাইকেল চালানোর সময় পুরুষাঙ্গের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়, যে কারণে বেশ কিছু স্পর্শকাতর নার্ভ এত মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরে যে তার প্রভাবে স্পার্ম কাউন্ট কমতে শুরু করে। তাই এই বিষয়ে সাবধান থাকাটা জরুরি।

কিন্তু এদিকে চিকিৎসকেরা যে বলছেন নিয়মিত সাইকেল চালালে ব্যাপক শারীরিক উপকার হয়, তাহলে? একথা ঠিক যে সাইকেলিং-এর সঙ্গে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যার সরাসরি যোগ রয়েছে। কিন্তু একথাও ঠিক যে দীর্ঘ সময় সাইকেল চালালে তবেই স্পার্ম কাউন্ট কমার আশঙ্কা থাকে, না হলে কোনও সমস্যাই হয় না। উল্টে নানাবিধ রোগ শরীর থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হয়। কিন্তু সাইকেলের সঙ্গে শরীরের ভাল-মন্দের কী সম্পর্ক? আছে বন্ধু আছে। তবেই না এত কথা বলা। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দিনে ১৫ মিনিট করে যদি সাইকেল চালানো যায়, তাহলে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে কোনও জটিল রোগই আক্রমণ শানাতে পারে না, সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকারিতাও। যেমন…

১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেজায় ওঠা-নামা করে, তাদরে নিয়মিত লাইকেল চালানো উচিত। এমনটা করলে কি হতে পারে জানেন? ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার লেভেল স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে আসতে সময় লাগে না।

২. অনিদ্রা দূর হয়: স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট সাইকেলিং করলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে হয়, যার প্রভাবে ঘুম আসতে একেবারে সময়ই লাগে না। প্রসঙ্গত, পৃথক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ৫ ঘন্টার কম সময় ঘুমান, তাদরে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি নানাবিধ মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। তাই আপনিও যদি অনিদ্রার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে এখন নিশ্চয় জেনে গেছেন কী করণীয়।

৩. জয়েন্টের সচলতা বৃদ্ধি পায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ১০-১৫ মিনিট সাইকেল চালালে শরীরের নিচের অংশে সচলতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে হাঁটুতে যন্ত্রণা হওয়ার মতো সমস্য়া একেবারেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে না। সেই সঙ্গে অস্টিওঅর্থ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

৪. স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ কমায়: সাইকেলিং-এর সময় আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে “ফিলগুড” হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমে গিয়ে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।

৫. আয়ু বৃদ্ধি পায়: একাধিক গবেষণার পর চিকিৎসকেরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে নিয়মিত সাইকেল চালানোর অভ্যাস করলে গড় আয়ু প্রায় ৮ বছর বেড়ে যায়। কারণ যেমনটা আগেও আলোচন করা হয়েছে যে সাইকেল চালালে শরীর ভিতর এবং বাইরে থেকে এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে চোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায়।

৬. ওজন কমে চোখে পরার মতো: নিয়মিত ১৫ মিনিট সাইকেল চালালে সপ্তাহে প্রায় ৪০০০ ক্যালরি ঝরে যায়। এই ভাবে চলতে থাকলে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও এমন উন্নতি ঘটে যে গ্যাস-অম্বল দূরে পালাতে বাধ্য হয়। প্রসঙ্গত, সাইকেল চালানোর সময় আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যে কারণে দ্রুত গতিতে ক্যালরি ঝরতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, সাইকেল চালানো বন্ধ করে দেওয়ার ৩০ ঘন্টা পরেও এই এনজাইমগুলি নিজের কাজ চালিয়ে যায়। ফলে সে সময়ও আমাদের অজান্তেই ওজম কমতে থাকে। এমনটা আর কোনও শরীরচর্চা করলে হয় কিনা, জানা নেই!

৭. ক্যান্সার রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না: জার্নাল অব দা আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে নিয়মিত সাইকেলিং করার পাশাপাশি যদি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া শুরু করা যায়, তাহলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। বিশেষত লাং এবং কলোরেকটাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

৮. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়: সাইকেল চালানোর সময় আমাদের হার্ট রেট যেমন বেড়ে যায়, তেমনি মস্তিষ্কের অন্দরে ব্রেন সেলের জন্ম হারও বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিশক্তির উন্নতি যেমন ঘটে, তেমনি মনোযোগ এবং বুদ্ধির বিকাশ ঘটতেও সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণা দেখা গেছে এইভাবে ব্রেন সেলের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কগনিটিভ ফাংশন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ফলে অ্যালঝাইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

৯. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সাইকেল চালানোর সময় আমাদের হার্টকেও দ্রুত গতিতে কাজ করতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর এমনটা হওয়ার কারণে আয়ু তো বাড়েই, সেই সঙ্গে সুস্থ জীবনের পথও প্রশস্ত হয়। প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক রিপোর্ট অনুসারে সপ্তাহে কম-বেশি ৩০ কিমি সাইকেল চালালে করনোরি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। তাই তো যাদের পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস রয়েছে, তাদরে নিয়মিত সাইকেলিং করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

Related News