পিরিয়ড চলাকালীন সময় এই কাজগুলো করলেই হতে পারে মারাত্মক বিপদ, জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞরা

Written by News Desk

Published on:

প্রতিটি নারীর জন্য পিরিয়ড বা মাসিক খুবই সাধারন একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। নিয়মিত মাসিক নারীর শারীরিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে। তবে জানেন কি? এই সময় নারীদের কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।

ভুলবশত অথবা অজ্ঞতার ফলে না জেনে মাসিকের সময়ে অনেকেই এমন কিছু করে ফেলেন যা কিনা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় মাসিকের সময় কোন কাজগুলো এড়িয়ে যাওয়া দরকার। নিজের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য প্রতিটি নারীর জেনে রাখা উচিৎ মাসিকের সময়ে যে কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকা উচিত-

১. পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ঠান্ডা জল, কোমল পানীয় এবং নারকেল খাবেন না।

২. এইসময় মাথায় শ্যাম্পু ব্যাবহার করবেন না। কারণ পিরিয়ডের সময় চুলের গোড়া আলগা হয় ফলে লোমকূপ উন্মুক্ত হয়ে যায়। শ্যাম্পু ব্যবহার এসময় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

৩. শশা খাবেন না। কারণ শশার মধ্যে থাকা রস পিরিয়ডের রক্তকে জরায়ু প্রাচীরে আটকে দিতে পারে। যার ফলে আপনার বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাসিকের সময়ে শরীরে ‘ইস্ট্রোজেন’ এর মাত্রা অনেক বেশী পরিমাণে কমে যায়। ইস্ট্রোজেন এর মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে শরীরে ব্যাথার অনুভূতি অনেক বেশী তীব্রভাবে বোঝা যায়। পক্ষান্তরে বলা যেতে পারে, শরীর অনেক বেশী অনুভূতিশীলপূর্ণ হয়ে ওঠে। যার ফলে মাসিকের সময়ে ত্বক শেভ করা অথবা ওয়াক্স করার থেকে বিরত থাকা উচিত। শেভ করার সময় অসাবধানতায় কেটে গেলে কষ্ট অনেক বেশী হবে।

৪. এছাড়াও লক্ষ্য রাখবেন, পিরিয়ডের সময় যেন শরীরে শক্ত কিছুর আঘাত না লাগে, বিশেষত পেটে। পিরিয়ডের সময়টায় জরায়ু খুব নাজুক থাকে ফলে অল্প আঘাতেই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যার ফলে পরবর্তীতে জরায়ু ক্যান্সার, জরায়ুতে ঘাঁ কিংবা বন্ধ্যাত্যের ঝুঁকি থাকে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ঠান্ডা জল পান করার ফলে পিরিয়ডের রক্ত বের না হয়ে জরায়ু প্রাচীরে জমাট বাঁধতে পারে। যা পরবর্তী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে জরায়ু টিউমার বা ক্যান্সারের আকার ধারণ করতে পারে। তাই কুসুম কুসুম গরম জল খাবেন।

৫. এটা নিশ্চয় সব নারী নিজ থেকেই বুঝতে পারেন যে, মাসিক চলাকালীন সময়ে মুড খুব বেশী মাত্রায় অস্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। যার মূল কারণ, মাসিকের ফলে শরীরে হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়া। হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়ার ফলে শরীরের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনও অনেক বেশী বিক্ষিপ্ত এবং আবেগভারাক্রান্ত হয়ে থাকে।

৬. এতদিন ধরে আমরা জেনে এসেছে যে মাসিকের সময় খুব বেশী কাজ করতে হয় না। অথবা প্রাত্যহিক ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ের গবেষণা জানাচ্ছে একেবারেই ভিন্ন কথা। ওম্যান’স হেলথ এর মতে, মাসিকের সময়ে শারীরিক কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়া উচিত। শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ার ফলে পেটব্যথা, মানসিক দুশ্চিন্তা অথবা মনের বিক্ষিপ্ত ভাব কমে যায় অনেকখানি।

৭. যদিও মাসিকের সময়ে শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে, তবু এই সময়ে দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাদ্য যেমন: পনীর কিংবা দই খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এই সব খাদ্যে রয়েছে একটি এসিড। যে এসিডের নাম অ্যারাকিডোনিক। এই এসিড পেটের নীচের অংশে তথা তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা সৃষ্টি করার জন্য দায়ী।

৮. অনেকেই অলসতার জন্য অথবা অজ্ঞতার জন্য একই স্যানিটারি ন্যাপকিন সারাদিন ধরে ব্যবহার করেন। যেটা একজন নারীর স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর। সব স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটে লেখা থাকে ৮ ঘণ্টা পরপর বদলানোর জন্য। তবে নিজের সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পরপর স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলানো জরুরি। না হলে খুব দ্রুত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণ ঘটে থাকে এবং বাজে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।

৯. ডা. জুলিয়া এ. হোয়াইট জানান, মাসিকের সময় এমন ধরণের খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত যে খাবারে অনেক বেশী পরিমাণে লবণ রয়েছে। যেমন: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস, চানাচুর ইত্যাদি। লবণে থাকা সোডিয়াম মাসিকের সময়ে রক্তপ্রবাহের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, পেটে ব্যথা, জল আসার মতো সমস্যাগুলোও বেড়ে যায় অনেকখানি।

১০. অনেকের মাঝেই একটি ভুল ধারণা রয়েছে। যেহেতু মাসিকের সময়ে শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যায় সেহেতু এই সময়ে অনেক বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। একইসঙ্গে এই সময়ে বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে সেটা ওজন বাড়াবে না। অথচ এই দুইটি ধারণা একেবারেই ভুল। সঠিক ব্যাপার হলো, মাসিকের সময়ে সাধারণ খাবার এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত প্রতিটি নারীর। বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে সেটি শরীরে চর্বি হিসেবে জমে থাকবে। যা পরে ব্যায়ামের মাধ্যমে কমাতে হবে। রক্তপ্রবাহের ফলে ওজন বাড়বে না, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

Related News