খুশকি দূর করার কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে জেনেনিন বিস্তারিত ভাবে

নানান কারণে মাথার ত্বকে ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। ফলে সৃষ্টি হয় খুশকি। তারপর মাথার ত্বকে চুলকানি, চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়।

রূপচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে খুশকি দূর করার কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে জানানো হল।

অ্যাপল সাইডার ভিনিগার

অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকায় এটা চুলের রুক্ষভাব কমিয়ে ও আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনে।

খুশকি দূর করতে সমপরিমাণ জল ও অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে চুল ভিজিয়ে নিন। তার আগে চুল পরিষ্কার করে নিতে হবে। মাথার ত্বক আলতোভাবে মালিশ করে ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।

এটা চুলের তৈলাক্তভাব বাড়াবে ও রক্ষ করবে। সপ্তাহে দুবার এই দ্রবণ ব্যবহার করা যায়।

পরামর্শ: চাইলে নিয়মিত সাদা সিরকা ব্যবহার করতে পারেন। তবে বাড়তি উপকার চাইলে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করা ভালো।

দই

খুশকির সমস্যার ঘরোয় প্রতিকার হিসেবে দই খুব ভালো কাজ করে। এর ব্যাক্টেরিয়া খুশকির প্রবণতা কমায়। পাশাপাশি চুল মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে।

চুলে সরাসরি দই ব্যবহার করে এবং এক ঘন্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। শুষ্ক চুলের সমাধানে দইয়ের সঙ্গে মধু, লেবু বা অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।

পরামর্শ: মাথায় দই ব্যবহার করলে নানা রকমের বিড়ম্বনা দেখা দিতে পারে, যেমন- ঘাড়ে বা কাঁধে তা ছড়িয়ে পড়া। সেক্ষেত্রে কাঁধের ওপরে একটা তোয়ালে রাখতে পারেন, পোশাক ময়লা হবে না।

নিমের রস/ নিম তেল

প্রাকৃতিক আরোগ্যকারক ও আরামদায়ক ভেষজ হিসেবে নিমের নাম বিশ্বজোড়া। নিমের তেল ‘অ্যান্টিসেপ্টিক’, ভাইরাল, ব্যাক্টেরিয়াল ও ফাঙ্গাস রোধী উপাদান সমৃদ্ধ।

নিমের তেল ব্যাক্টেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি খুশকি সৃষ্টিকারী ফাঙ্গাস দূর করে। অস্বস্তি কমায়। চাইলে নিয়মিত অন্য তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত নিমের তেল ব্যবহার করা যায়।

নিম-পাতা বেটে তা কিছুটা জলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা পরিমিত জলে নিম মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে তা মাথার ত্বকে ব্যবহারের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

পরামর্শ: নিমের গন্ধ বেশ কড়া। তাই আগে থেকেই এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখুন।

গ্রিন টি: গ্রিন টি কেবল শরীর ও মনের জন্যই নয়, এটা চুলের জন্যও উপকারী। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টি উপাদান চুলের খুশকি দূর করে। পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

এক কাপ কড়া করে গ্রিন টি বানিয়ে তা ঠাণ্ডা করে নিন। চুল পরিষ্কার করার পরে গ্রিন টি মাথার ত্বক ও সম্পূর্ণ চুলে ব্যবহার করুন। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। সহজে ব্যবহার করতে গ্রিন টি স্প্রেয়ের বোতলের সাহায্যেও ব্যবহার করতে পারেন।

পরামর্শ: চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এর সঙ্গে মধুও মেশাতে পারেন। এতে চুল উজ্জ্বল ও ঘন দেখাবে।

নারিকেল তেল / দুধ

নারিকেল তেল আর্দ্রতা রক্ষাকারক হিসেবে কাজ করে, বিশেষত চুলে। নারিকেল তেল বা দুধের ব্যাক্টেরিয়া-রোধী উপাদান সহজেই খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও নারিকেল তেল ব্যবহার চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

চুলের মাস্ক হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করা যায়। এটা শ্যাম্পু করার এক ঘণ্টা আগে অথবা সারা রাত মাথায় রাখতে পারেন। নারিকেলের দুধ চুলে ব্যবহারের পরে সহজেই তা পরিষ্কার করা যায় এবং এটা মধুর মতো চুলের উপকার করে।

পরামর্শ: নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার চুলের খুশকি কমাতে সাহায্য করে।

লেবুর রস

এর আম্লীয় উপাদান চুলের খুশকি দূর করতে কার্যকর। তাছাড়া, মাথার ত্বকে ব্যবহৃত কোনো বাড়তি উপাদান তেল নিঃসরণ বাড়ায়। লেবুর রস এসব বাড়তি উপাদান দূর করতেও সাহায্য করে।

কিছুটা লেবুর রস করে নিয়ে তা মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। পাঁচ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে লেবুর রস জলের সঙ্গে মিশিয়ে সেটা দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন।

পরামর্শ: ১৫ মিনিটের বেশি লেবুর রস মাথার ত্বকে রাখবেন না এবং ঘন ঘন ব্যবহার করবেন না। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং যা অতিরিক্ত ব্যবহারে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

অ্যান্টিসেপ্টিক দ্রবণ

সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে অ্যান্টিসেপ্টিক দ্রবণ যেমন ডেটল বা স্যাভলন জলে মিশিয়ে খানিকটা হালকা করে নিন। এরপর তা মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। এই দ্রবণ চুলকে খানিকটা রুক্ষ করে দেয়। তবে খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।

এক টেবিল-চামচের বেশি আন্টিসেপ্টিক দ্রবণ ব্যবহার করবেন না। অ্যান্টি সেপ্টিক ও জলের অনুপাত ১:৫ অথবা ১:৬ রাখা উচিত। শ্যাম্পু করার আধ ঘণ্টা আগে এই দ্রবণ চুলে ব্যবহার করুন। অথবা শ্যাম্পু করার পরে ব্যবহার করে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

দ্রবণ কড়া হওয়ায় তা সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার করবেন না।

পরামর্শ: অনেকেই খুশকি দূর করতে মাউথওয়াশ ব্যবহার করেন। এটাও কার্যকর।

এছাড়াও, খুশকির সমস্যা দূর করতে অ্যালো ভেরা জেল, টি ট্রি তেল, জলপাইয়ের তেল ও তুলসীপাতার উপকারিতাও লক্ষ করা যায়।

News Desk

Recent Posts

অতিরিক্ত ঘাম কঠিন রোগের লক্ষণ নয় তো?

গরম আবহাওয়ায় ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। তবে শীতেও অতিরিক্ত ঘাম কিন্তু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবেও…

17 hours ago

নখ দেখেই বুঝে নিন শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে কি না

শরীরে কোনো রোগ বাসা বেঁধেছে কি না, তার ইঙ্গিত আগে থেকেই দেয় শরীর। তবে অনেকেই তা টের পান না, আবার…

18 hours ago

কাচের বোতলে কেন পানি খাবেন?

পানির অপর নাম জীবন। দৈনিক পর্যাপ্ত পানি না পান করলে শরীরে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। যা শারীরিক বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।…

18 hours ago

সকালে নাস্তা না করলে যে রোগের ঝুঁকি বাড়ে

সকালের নাস্তা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর উপরই সারাদিন শরীরের শক্তি নির্ভর করে। সকালে পুষ্টিকর খাবারে পেট ভরালে সারাদিন অ্যানার্জি…

19 hours ago

কুমড়া থেকে ছোলা, ওজন কমাতে আরও যা খাবেন

ওজন কমাতে চাইলে পুষ্টিকর খাবারের দিকে নজর রাখতে হবে। এর পাশাপাশি শরীরচর্চাও জরুরি। তবে ওজন কমাতে খাবার ৭০ শতাংশ আর…

19 hours ago

তীব্র গরমেও শরীর বরফ ঠান্ডা রাখবে যে পানীয়

গরমে হাঁসফাঁস করছে সবাই। এমন তাপপ্রবাহের মধ্যে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে অনেকেই নানা ধরনের পানীয়ে চুমুক দিচ্ছে। তবে কোমল পানীয় থেকে…

20 hours ago