মানুষ কেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, কনফিউশন দূর করার উপায়! জেনেনিন

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন দুই বা তাঁর চেয়ে বেশি অপশন বা বিকল্প থেকে যখন কোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয়, ঠিক তখনি যে সমস্যাটির সৃষ্টি হয় সেটি হল সিদ্ধান্তহীনতা বা কনফিউশন। সিদ্ধান্তহীনতা কমবেশি সব ধরনের মানুষের মধ্যে দেখা যায় কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে এটি একধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

মানুষ কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না?
সিদ্ধান্ত নিতে না পারা বা দুটি বা কয়েকটি বিকল্পের মধ্যে একটি বেছে নিতে না পারার কারন অনেক রকম হতে পারে। তার মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। যার কারনে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়। আরেকটি কারন হচ্ছে দুটি বিকল্পের মধ্যে কোনটি তাঁর জন্য ভালো মানুষ সেটি নিশ্চিত হতে পারে না। যার কারনে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

কি কি সমস্যা হয়?
এখন বলা যায় যে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারনে নতুন কোনো ধরনের পদক্ষেপ তাঁরা নিতে পারে না। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অনেকে চিন্তা করে মানুষকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। একবার কোনো একটি সিদ্ধান্ত তাঁরা কখনোই নিয়ে নিতে পারে না।

কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিলে কয়েকদিন পর আবার সেটি পরিবর্তন করে আরেকটি সিদ্ধান্ত নেই। কারন, তাঁর মনে হয় আগের সিদ্ধান্তটি হয়তো ভুল ছিল। এরা যেহেতু তীব্র মানসিক চাপে ভোগে তাই দেখা যায় যে তাঁদের মধ্যে ডিপ্রেশন চলে আসে। এবং সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারনে চরম অস্থিরতা কাজ করে। এবং এর থেকে তাঁদের মধ্যে অ্যাঙ্গার প্রবলেম বা হঠাৎ করে রেগে যাওয়া তৈরি হয়।

সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় তাঁর আত্মবিশ্বাসের ওপর আবার প্রভাব ফেলে আর যদি দেখা যায় যে সে একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাহলে সেটি তাঁর আত্মবিশ্বাসকে একেবারে শূন্যের কোটায় নামিয়ে নিয়ে যায়। অর্থাৎ পুরো বিষয়টা একটা চক্রের মত কাজ করতে থাকে ফলে কোনো একটি কাজ করতে যতটা মনোযোগ দেওয়া দরকার, পরিশ্রম করা দরকার কিংবা প্রচেষ্টা নেওয়া দরকার তার কোনোটাই না করে ওই ব্যক্তির ফোকাস থাকে সে পারবে কিনা তার ওপর। ফলে ওই কাজটা আসলে করতেই পারে না। এরফলে যেটি হয়, সেটি হচ্ছে তাঁর মধ্যে অ্যাঞ্জাইটি বা ভয় কাজ করে এবং এগুলো শরীরকেও প্রাভাবিত করে। দেখা যায় যে তাঁর হাত পা কাঁপছে, অস্থির লাগছে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে, শরীর কাঁপছে, ঘাম হচ্ছে, গলা শুকিয়ে আসছে এধরনের নানারকম উপসর্গ যার কারনে তাঁর আচরনেও সমস্যা দেখা দেয়।

কিভাবে সারিয়ে তোলা যায়?

১। সহজভাবে মেনে নেয়া
এধরনের সমস্যায় ভুগলে যা করতে হবে সবকিছু সহজভাবে মেনে নিতে হবে। যেকোনো বিষয় সিদ্ধান্ত নিলে সেটা অনেক সময় ভুল প্রমানিত হতেই পারে। তাই বলে ভুল কেন হল সেটা ভেবে আত্মবিশ্বাস হারানো চলবে না। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। যে সিদ্ধান্তটি ভুল হতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। এটা মেনে নিতে হবে।

২। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভেবে দেখুন ও প্রস্তুতি নিন
কোনো বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন তখন সেটি সফল হলে কি হবে বা কি কি ইতিবাচক দিক আসবে আর কি কি নেতিবাচক বিষয় ঘটতে পারে সেটি ভাবুন। তারপর নেতিবাচক বিষয়গুলো সামাল দেওয়ার মত সামর্থ্য আছে কিনা সেটি ভেবে দেখতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নেতিবাচক বিষয়ের জন্য আগে থেকেই মানসিক ভাবে প্রস্তুতি থাকলে পরবর্তীতে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা সহজ হয়।

৩। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না
অনেক সময় মনে হতে পারে যে অন্য কেউ কোনো একটি কাজ হয়তো পারছে কিন্তু আপনি কেন পারছেন না। আবার পরিবারের সদস্যরাও অনেক সময় আমাদেরকে অন্য সফল মানুষদের সাথে তুলনা করে। এ বিষয়গুলো মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। ফলে তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। একধরনের দ্বিধা এবং ভয় কাজ করে। তাই অন্যের সাথে নিজের তুলনা করা আজই বন্ধ করুন।

৪। নিজের প্রশংসা করুন
জীবনে কি ইতিবাচক কিছুই করেননি, অবশ্যই করেছেন। তা যত ছোটই হোক না কেন সেই ছোটো ছোটো বিষয়গুলোর জন্য নিজের প্রশংসা করুন। দেখবেন আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। আর আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তখন অনেক বেশি সহজ হবে।

৫। শিশুর প্রতি নজর দিন
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন যে শিশুর ছোটোবেলা থেকে আদরে বড় হয় এবং তাঁর সব সিদ্ধান্ত তাঁর বাবা মা বা অন্য কেও নিয়ে দেই। এমন শিশুদের ক্ষেত্রে তাঁরা বড় হলেও তাঁদের মধ্যে নির্ভরতার প্রবনতাটা থেকেই যায়। ফলে বড় হওয়ার ফলেও তাঁরা আসলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার হলে তখন সেটি আর নিতে পারে না। সেক্ষেত্রে যেটি করতে হবে তা হচ্ছে শিশুদেরকে ছোটোবেলা থেকে ছোটো ছোটো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। যাতে করে তাঁর মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।

অন্যান্য করণীয়ঃ
১। জটিল সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বুঝে এড়িয়ে যান অথবা কারও পরামর্শ নিন। অনেক ক্ষেত্রে পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারেন। সেক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কাঁধে ভরসা রাখুন।
২। পজিটিভ চিন্তা করুন। নিজেকে পজিটিভ কথা বলুন।
৩। কোন কিছু নিয়ে খুব বেশি ভাববেন না। কারণ ভবিষ্যৎ আমাদের কারও জানা নেই। আমরা কেবল সৎভাবে এগিয়ে যেতে পারি। বাকিটা ছেড়ে দিন।

News Desk

Recent Posts

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

হাঁপানি, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও অন্যান্য শ্বাসনালির সংক্রমণজনিত রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে নেবুলাইজার ব্যবহার করা হয়। রোগী যখন ইনহেলারের…

6 hours ago

বারবার পানি পিপাসা লাগা কোনো রোগের লক্ষণ নয় তো?

গরমে অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। ফলে বারবার পানি পিপাসা লাগা স্বাভাবিক। আর এ সময় প্রচুর পরিমাণ…

13 hours ago

মসলা চা পানে মিলবে যেসব উপকার

দিনে বেশ কয়েকবার চায়ের কাপে চুমুক না দিলে অনেকেরই দিন কাটে না। বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যে মসলা চায়ের স্বাদও যেমন…

13 hours ago

গরমে বাড়তে পারে কিডনির সমস্যা, কীভাবে সতর্ক থাকবেন?

হঠাৎ করেই কিডনির সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতার কারণে হঠাৎই বিকল হতে পারে কিডনি। মূলত তাপমাত্রা ও…

13 hours ago

খাবার কেনার আগে প্যাকেটের কোন লেখা অবশ্যই পড়বেন?

কর্মব্যস্ত জীবনে কমবেশি সবাই এখন রেডিমেড খাবারের উপর নির্ভরশীল। এ কারণে বেশিরভাগ খাবারই এখন প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। প্রায়…

1 day ago

বিশ্বব্যাপী যে কারণে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

গরমে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে বাড়ে মৃতের সংখ্যাও। আজ ১৬ মে জাতীয় ডেঙ্গু দিবস। ডেঙ্গু…

1 day ago