জল সিঙ্গারার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনেনিন বিস্তারিত

জলেতে জন্মে বলে এর নাম জল সিঙ্গারা। এটি গ্রাম-বাংলার খুবই পরিচিত একটি ফল। বিল এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ফলে। বর্তমানে জল সিঙ্গারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে জল সিঙ্গারা। এই ফলটি দেখতে তেমন সুন্দর নয়, তবে এর পুষ্টিগুণ অনেক।

সিঙ্গারার মত দেখতে বলে জল সিঙ্গারাকে অনেক জায়গায় সিঙ্গারা ফল নামেও ডাকা হয়। এর ইংরেজি নাম Water chestnut, উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম Trapa bispinosa। এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, ফিলিপাইন ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে জল সিঙ্গারালের আবাদ হয়। প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকেই চীন দেশে জল সিঙ্গারার চাষ হয়ে আসছে।

জল সিঙ্গারা দেখতে সিঙ্গাড়ার মতো তিন কোণাকার। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত জল সিঙ্গারা পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে। ফলের রঙ লাল, নীলাভ সবুজ বা কালচে সবুজ। পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিণ্ডকার বা ত্রিভূজাকৃতির নরম সাদা শাঁস। এই নরম শাঁস খেতে বেশ মজা। রসাল ও মিষ্টি মিষ্টি ভাব।

পুষ্টিমানের বিবেচনায় জল সিঙ্গারা খাদ্য শক্তি আছে ৬৫ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৮৪.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.৬ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৯ গ্রাম, শর্করা ১১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন সি ১৫ মিলিগ্রাম।

জল সিঙ্গারা শুধু খাদ্যগুণই নয় রয়েছে ঔষধি গুণও। এবার তা জেনে নেওয়া যাক… জল সিঙ্গারা শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি ও হাত পা ফোলা রোগ কমে যায়। উদরাময় ও তলপেটে ব্যথায় জল সিঙ্গারা খুবই উপকারী। বিছাপোকা অন্যান্য পোকায় কামড় দিলে যদি জ্বালা পোড়া হয় তবে ক্ষতস্থানে কাঁচা জল সিঙ্গারা পিষে বা বেঁটে লাগালে দ্রুত ব্যথা দূর হয়। কাঁচা জল সিঙ্গারা বলকারক, দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার। জল সিঙ্গারা শর্করা ও প্রোটিন আছে যথেষ্ট। শাঁস শুকিয়ে রেখে খাওয়া যায়।

* জল সিঙ্গারার শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি ও হাত পা ফোলা রোগ কমে যায়। উদরাময় ও তলপেটে ব্যথায় জল সিঙ্গারা খুবই উপকারী। এছাড়া উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সহায়তা করে জল সিঙ্গারা।

* শরীর ঠাণ্ডা করতে জল সিঙ্গারা জুড়ি নেই। শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে জল সিঙ্গারা। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর জল সিঙ্গারা। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণ রয়েছে এই ফলের। এমনকি অ্যান্টিক্যান্সার হিসেবেও কাজ করে জল সিঙ্গারা।

* বমিভাব, হজমের সমস্যা দূর করতে জল সিঙ্গারার জুড়ি নেই। অনিদ্রা, দুর্বলতা দূর করতে কাজে দেয় এই ফল। জল সিঙ্গারা ঠাণ্ডা লাগা, সর্দিতেও স্বস্তি দিতে পারে।

* ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যানিমিয়া কমাতে পারে এই ফল। পটাশিয়াম থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে জল সিঙ্গারা।

* ত্বক উজ্জ্বল আর সতেজ রাখতেও জল সিঙ্গারা অনবদ্য। পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই ভরপুর জল সিঙ্গারা চুল ভালো রাখে।

* জল সিঙ্গারা প্রস্রাববর্ধক, শোথনাশক ও রুচিবর্ধক।

দীর্ঘকাল থেকে জল সিঙ্গারা ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।RS

News Desk

Recent Posts

ডাবের পানি নাকি স্যালাইন গরমে কোনটি বেশি উপকারী?

তীব্র গরমে দিনেরবেলা বাইরে বের হলেই শরীর দিয়ে ঘামের স্রোত বেয়ে চলে সবারই, ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে শুরু…

12 hours ago

সানস্ক্রিন মাখলেই মুখ ঘামে? যা করবেন

তাপমাত্রার পারদ ৪০ এর নিচে নামছেই না। কাঠফাটা রোদে বেরোলে ত্বক পুড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে বের হওয়া…

13 hours ago

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে শুধু ভালোবাসাই যথেষ্ট?

প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ভালোবাসার মাধ্যমে। এর থেকেই দুজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ একে অপরের সঙ্গে আজীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন।…

14 hours ago

ত্বকের ফাটা দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

শরীরের ফাটা দাগ বা স্ট্রেচ মার্ক ত্বকের সৌন্দর্য অনেকটাই কমিয়ে দেয়। এই দাগ একবার পড়লে তা আর সহজে দূর হয়…

16 hours ago

ত্বকের যে রোগ অবহেলা করলেই বিপদ হতে পারে

ত্বকে নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন কারণে এসব চর্মরোগ হয়ে থাকে। তবে অনেকেই প্রথমদিকে এসব রোগকে উপেক্ষা করেন।…

17 hours ago

কিডনি ও লিভার সুরক্ষিত রাখবে যে পানীয়

‘ডিটক্স ড্রিংকস’ এর উপকারিতা অনেক। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এ পানীয়। সঙ্গে শরীরের সব ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে ক্লিঞ্জার…

17 hours ago