আপনার কি ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে? তাহলে জেনেনিন আপনার যা যা করণীয় দেখেনিন

অনেক মানুষই যাদের সবে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা ও ডাক্তাররা চাপ নিতে বারণ করেন। “ডায়াবেটিসের কারণে ভয় পাবার কিছু নেই। এটি একটি অসুস্থতা যেটিকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে কিছু শৃঙ্খলা, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম এবং ওষুধের মাধ্যমে। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রথম ধাপ হল কাউন্সেলিং’’ বলে জানিয়েছেন ডঃ রবিকরণ এম, কনসালটেন্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এবং ইন্ডোক্রাইন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, এসআইএমএস হাসপাতাল, চেন্নাই। যখন আপনার প্রথম ডায়াবেটিস ধরা পড়বে তখন আপনি কী করতে পারবেন এবং কী করা উচিত তা এখানে রয়েছে:

1.আপনার পরীক্ষাগুলির উপর নজর রাখুন:
ডাক্তাররা সাধারণ নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত ব্লাড সুগার নজর রাখেন। আপনার ডাক্তারের নির্দেশিত কোনও পরীক্ষা বাদ দেবেন না। গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মধ্যে সুগারের পরীক্ষাও আছে; রক্তে হিমোগ্লোবিন/কোলেস্টেরল, রক্তচাপ, সুগারের পরীক্ষা করার জন্য প্রস্রাব/ইউরিয়ার পরীক্ষা, প্রস্রাবে কেটোন এবং অ্যালবামিনের পরীক্ষা, চোখ, পা, স্নায়ু এবং হার্টের পরীক্ষা এবং খাবার এবং ওজনের মূল্যায়ন। এইসব পরীক্ষা থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে, যা আপনাকে সুস্থা থাকতে সাহায্য করবে, যেমন আপনার প্রস্রাবের রঙ বর্ণহীন থেকে ফ্যাকাশে থাকা ও কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে তা জানা।

2.ওষুধের নিয়ম অনুসরণ করুন:
ডায়াবেটিস সর্বদা শরীর তন্ত্র সম্পর্কিত এবং প্রতিটি ‘শরীর’ ভিন্ন। অন্যেরা যে ওষুধ বা ডোজ নেন সেই একই ওষুধ বা ডোজ আপনার শরীরে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারে। এই কারণে ডায়াবেটিসের জন্য একটি অনন্য ওষুধের নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। আপনার পরীক্ষাগুলির ভিত্তিতে, আপনার ডাক্তার ওষুধ ও ডোজের নির্দেশ দেবেন। আপনাকে জানানো হবে কীভাবে এবং কখন ওষুধ নিতে হবে। ডোজের কার্যকলাপ রক্তে শর্করার এবং ইনসুলিনের ক্ষরণের উপর নির্ভরশীল এবং এটি সঠিক হতে কিছুটা সময় নেয়। “T2DM একটি ‘বিশেষ’ বিভাগের মধ্যে পড়ে। এখন ডায়াবেটিসের ওষুধের 13টি বিভাগ আছে,’’ বলে ডঃ রবিকিরণ জানান। T পর্যন্ত নিয়ম অনুসরণ করুন এবং ধৈর্য রাখুন।

3.ঠিক মতো খান:
ওষুধ ও পরীক্ষা ডাক্তারের হাতে থাকলেও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আপনার হাতে। ভাজা, মশলাদার, মিষ্টি এবং অতিরিক্ত নুন থাকা খাবার এড়িয়ে যান, এছাড়াও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্যের পাশাপাশি মিষ্টি ফল ও দুধ এড়ান। প্রোটিন, সাদা ও চর্বিহীন মাংস ও মিলেট ও ফাইবারের মতো জটিল কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন খাবার খাওয়ার দিকে নজর দিন। আপনার কোলেস্টেরল ও লিভার ঠিক রাখতে খাবারের ভূমিকা অনেক বেশি। এমআরসি মেডিক্যাল সেন্টারস ডায়াবেটিক অ্যান্ড হার্ট উইং এর মতে, প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খেলে ও ওষুধ খেলে আপনার অসুস্থতা অনেক দিন ধরে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

কী খাবেন:
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে আর শস্য এবং সিরিয়াল দিতে বলা হয় না অথবা চরম খাদ্য নিয়ন্ত্রণে থাকতে বলা হয়। আপনার খাবারে নিম্নলিখিত জিনিস থাকতে হবে:

50-60 শতাংশ কার্বোহাইড্রেট: এটি ফল, সবজি বা সিরিয়াল (খুব বেশি মিষ্টি না হলে, যে কোনও ফল খান কারণ এতে থাকে অত্যাবশ্যক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট)।

20-25 শতাংশ প্রোটিন: কলাইয়েরডাল, শিম জাতীয় সবজি বা চর্বিহীন মাংসতে প্রোটিন থাকে।

10-15 শতাংশ ফ্যাট: বাদাম, মাছ তেল (MUFA এবং PUFA এর মানের জন্য বাদাম তেল, তিলের তেল, সূর্যমুখী তেল, কড-লিভার তেল)। বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে মাসে হাফ লিটার তেল খাওয়া বাঞ্ছনীয়। স্থানীয় খাবার খান তবে বেশি নয় মাঝারি পরিমাণে খান।

4.নিয়মিত হোন:
সাধারণত তিন মাস অন্তর ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করানোর জন্য বলা হয়। আপনার ডাক্তারের কথা মতো দিনে নিয়মিত পরীক্ষা করান।

5.ব্যায়াম ও জীবনযাত্রা:
ব্যায়াম আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এর জন্য আপনি ভালোবোধ করবেন। বেশি ব্যায়াম মানে বেশি শর্করা নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং বিপাকীয় শর্করা এবং রক্তে এর মাত্রা কমানোর জন্য এটি আবশ্যক। “প্রতিদিন 20-30 মিনি হাঁটা, জিমে যাওয়া অথবা যে কোনও ব্যায়াম করলে T2DM ভালো নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে” বলে জানিয়েছেন ডঃ রবিকিরণ। চেন্নাইয়ের ডায়াবেটিস কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট অনুসারে, শরীর সুস্থ রাখতে খাবারের পাশাপাশি ব্যায়াম করাও গুরুত্বপূর্ণ। ফর্মূলা ব্যবহার করে আপনার শরীর স্বাস্থ্যকর কিনা দেখুন: (সেমিতে উচ্চতা – 100) 0.9 দিয়ে গুণ; তারপর প্রতিদিন নিজের ওজন দেখুন এবং আপনার ব্যায়ামের নিয়ম পর্যবেক্ষণ করুন। ওজন কমানোর জন্য আপনাকে যা ক্যালোরি জমে তার থেকে বেশি পোড়াতে হবে।

6.শান্ত থাকুন এবং ঘুমান:
উদ্বেগ ব্লাড সুগার বাড়ায়, ইনসুলিন প্রতিরোধের দিকে নিয়ে যায় ফলে আপনার ডায়াবেটিস আরও বেড়ে যায়। একটি বা দুটি ডি-স্ট্রেসার ব্যবহার করুন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে ব্লাড সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং ব্লাড সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে ঘুম হবে না। ডাক্তারের পরামর্শ এবং বিশ্রাম নিয়ে চক্রভেদ করুন। ঘুমের সঙ্গে আপোস করবেন না এবং প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান।

News Desk

Recent Posts

হার্টের ধমনী ব্লক হয়েছে কি না জানাবে ৪ লক্ষণ

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত হলো হৃৎপিণ্ড। এটি মানুষের জীবদ্দশায় কখনো বিশ্রাম নেয় না। দিনে অন্তত এক লাখ বার…

2 hours ago

গরমে ‘এনার্জি বুস্টার’ হিসেবে কোন খাবার খাবেন?

গরমে ত্বক হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ। তাই এ সময় ত্বকের জন্য দরকার বাড়তি যত্ন, না হলে ত্বক হারায় উজ্জ্বলতা ও সতেজতা।…

3 hours ago

এই গরমে পটল খাওয়ার ৭ উপকারিতা

পটলের নাম শুনলে অনেকেই নাক সিঁটকায়। আবার অনেকেই আছেন, যারা ভাজা হোক বা ভর্তা, পটল খেতে ভালবাসেন। যারা নিয়মিত পটলের…

3 hours ago

জেনে নিন খাবার স্যালাইনের সঠিক ব্যবহার

ডায়রিয়া, কলেরা, বমি, আমাশয়, পাতলা পায়খানা, অতিরিক্ত ঘাম বা অন্য যে কোনো কারণঘটিত পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে খাবার স্যালাইন বা ওরাল স্যালাইন…

7 hours ago

গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে কোন ফল খাবেন?

প্রচণ্ড এই গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ফলে এ সময় খাদ্যতালিকায় বেশ কিছু ফল রাখা উচিত, যাতে গরমেও শরীর ঠান্ডা…

8 hours ago

প্রচণ্ড দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা আয়রনের ঘাটতি নয় তো?

এই গরমে সুস্থ থাকাটাই এখন চ্যালেঞ্জের। এ সময় অনেকেই শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় বিশেষ করে দূর্বলতা, ক্লান্তি ও মাথা ঘোরার মতো…

8 hours ago