পাইলস রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা! বিস্তারিত জানতে পড়ুন

স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের বরাতে আজকের লেখা ‘পাইলস রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা’। তবে পাইলস রোগের লক্ষণ বুঝতে পারলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

রাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার বয়স ২০ বছর। বিগত কয়েক বছর ধরে সে পেটের আমাশয় রোগের পাশপাশি, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া সমস্যায় ভুগছিলেন, তারপর বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসক তার রোগের উপসর্গ ইতিহাস শুনে এবং দৈহিক পরীক্ষা করে জানালেন- তার দ্বিতীয় পর্যায়ের পাইলস বা হেমোরয়েড হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসক তাকে মুখে খাওয়ার কিছু পাইলসের ওষুধ দিলেন এবং পায়ুপথে লাগানোর একটা মলম দিলেন। এতে তিনি রোগের কিছুটা উন্নতি পেলেও পুরোপুরি সেরে উঠলেন না। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ইউনানি চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।

চিকিৎসকের পরার্মশক্রমে প্রায় দুই থেকে তিন মাস হামদর্দের এ সমস্যার চিকিৎসা গ্রহণ করলেন। তারপর থেকে তার রক্তবিহীন স্বাভাবিক পায়খানা হয় এবং পায়ুমুখে বাহ্যিক আর কোনো ফুলাও অনুভূত হয় না। রিয়াজের মতো বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৫০ বছরের নিচে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে পাইলসের উপসর্গ বিভিন্ন মাত্রায় দেখা যায়।

হেমোরয়েড় সাধারণত পায়ুপথে ত্বকের নিচের ও মলাশয়ের ভেতরে এক ধরনের রক্তজালিকা। যখন পায়ুপথের এসব শিরার সংক্রমণ এবং প্রদাহ হয়, চাপ পড়ে, তখন হেমোরয়েড বা পাইলস সৃষ্টি হয়। সাধারণ কথায় যাকে অর্শ রোগ বলা হয়। আর ইউনানি পরিভাষায় বাওয়াসির বলে।

বাওয়াসির বা হেমোরয়েড বা অর্শ রোগের অবস্থান সাধারণত দুই ধরনের যথা-

* পায়ুপথের বহিঃ অর্শ রোগ
* পায়ুপথের অন্তঃ বা ভেতরের অর্শ রোগ
* আবার কখনো দুটো প্রকার বা অবস্থা একসাথেও থাকতে পারে।

পায়ুপথের ভেতরের অর্শ রোগ বা হেমোরয়েড ফুলে পায়ুমুখের বাইরে বের হয়ে আসার ডিগ্রির ভিত্তিতে চারটি পর্যায় বিভক্ত যথা :

প্রথম পর্যায়, (হেমোরয়েড ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে না, প্রলেপস হয় না)। দ্বিতীয় পর্যায়, (পায়খানার পর হেমোরয়েড ফুলে বাইরে বের হয়ে এবং তারপর আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়)। তৃতীয় পর্যায়, (হেমোরয়েড ফুলে বাইরে বের হয়ে এবং নিজে ঠিক করতে হয়। চতুর্থ পর্যায়, (হেমোরয়েড ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে বা প্রলেপস হয়ে এবং তা আর নিজে ঠিক করা যায় না)

পাইলসের (বাওয়াসির) প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা, ক্রনিক ডায়রিয়া, মলত্যাগে দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এ ছাড়া পারিবারিক ইতিহাস, আশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ভারী মালপত্র বহন করা, স্থূলতা, কায়িক শ্রম কম করা, গর্ভকালীন পায়ুপথে যৌনক্রিয়া, যকৃত রোগ বা লিভার সিরোসিস ইত্যাদি কারণে রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সর্বোপরি পোর্টলি ভেনাস সিস্টেমে কোনো ভাল্ব না থাকায় উপরিউক্ত যেকোনো কারণে পায়ু অঞ্চলে শিরাগুলোতে চাপ পড়ে, ফলে হেমোরয়েড সৃষ্টি হয়।

অর্শ রোগে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হচ্ছে- পায়ুপথের অন্তঃ বা ভেতরের অর্শ রোগে সাধারণত তেমন কোনো ব্যথা বেদনা, অস্বস্তি থাকে না। অন্যদিকে পায়ুপথের বহিঃ অর্শ রোগে- পায়ুপথ চুলকায়, বসলে ব্যথা করে, পায়খানার সাথে টকটকে লাল রক্ত দেখা যায় বা শৌচ করা টিস্যুতে তাজা রক্ত লেগে থাকে, মলত্যাগে ব্যথা লাগা, পায়ুর চারপাশে এক বা একের অধিক থোকা থোকা ফোলা থাকে।

চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করে ও রোগীর উপসর্গ শুনেই অর্শ রোগ শনাক্ত করতে পারবে। এ ছাড়া পায়ুনালীর সমস্যাগুলো খুব খারাপ কি না বা অন্য কোনো রোগ আছে কি না তা জানতে অ্যানোস্কপি বা সিগময়ডস্কপি বা কলোনস্কপি পরীক্ষা, মলের লুকায়িত রক্ত নির্ণয় পরীক্ষা (ওবিটি), মলের আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা করাতে পারেন।

একটা কথা আমরা সবাই জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম, অর্শ রোগ যেহেতু জীবনধারা ও খাদ্যাভাসের সাথে অনেকাংশে জড়িত। তাই শৃঙ্খলিত জীবন যাপনই রোগ প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় তথা প্রথম মাধ্যম। তাই নিয়ম করে অতিরিক্ত কোথ না দিয়ে সাবলীলভাবে মলত্যাগ করা, যেগুলো ফল খোসাসহ খাওয়া যায়, তা খোসাসহ খাওয়া। আশযুক্ত খাবার শাকসবজি বেশি খাওয়া, পর্যাপ্ত জল পান করা, নিয়মিত ব্যয়াম করা, লাল গোশত পরিহার করুন, প্রাথমিক অবস্থায় উষ্ণ জল এবং ক্রনিক বা রোগ পুরনো হলে শীতল জল নিতম্ব স্নান করতে পারেন।

অর্শ রোগ প্রতিকারের আগে মূল লক্ষ্য হবে অর্শ রোগ হওয়ার মূল কারণগুলো শনাক্ত করে তা প্রতিরোধ করা। অর্শ রোগ প্রতিকারে যেসব ভেষজ উপাদান কার্যকর তা হচ্ছে- বাসক, থানকুনি, আমলকী, হরিতকি, মেহেদি পাতা, ইসবগুল, নিমপাতা ও নিমতেল, ভাংপাতা, মুকিল, জিংগবিলোবা।

অর্শ রোগকে রোগের ধরনভেদে চারটি ডিগ্রিতে ভাগ করে এর পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ডিগ্রির সাধারণত ওষুধ দিয়ে সারে। রক্তপাতযুক্ত অর্শ রোগে বাসক পাতার রস ১ চামচ করে দিনে তিনবার সেবন করুন।

অথবা হরিতকি ওই এক চামচ পরিমাণ দৈনিক একবার গরম জল সহ সেবন করুন। সাতটি নিমফুল বা নিম বীজের মজ্জা জল সহ সকালে সেবন করুন। ইসবগুল এক চামচ পরিমাণ জল সহ রাতে সেবন করুন। আর ইসবগুল, নিমপাতা ও নিমতেল, মুকিল এ-জাতীয় বিভিন্ন ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি ইউনানি ওষুধ ট্যাবলেট টোনালেক্স, হ্যানরয়েড, হ্যানরয়েড বি, কবি, মুকিল, মাজুন ওশবা, সফুফ ইন্দেমালি, ট্যাবলেট পিবলিউ (বন্দিশ খুন) হামদর্দের ক্লিনিকগুলো থেকে চিকিৎসকের পরার্মশ মতো খেতে পারেন। এ ছাড়া অর্শ রোগ যদি ভেষজ ওষুধ যা অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ও প্রতিরোধ চিকিৎসায় না সারে, তাহলে একজন কলোরেক্টাল সার্জনের পরামর্শ মতো চিকিৎসা নিতে পারেন। যদি এ রোগ ডায়াগনোসিস না করানো হয় বা চিকিৎসা না নেয়া হয়, তাহলে দেহ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে, পায়ুপথে ক্যান্সার হতে পারে।rs

News Desk

Recent Posts

মাছের তেল খেলে শরীরে কী ঘটে?

মাছের তেল শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এ কারণে পুষ্টিবিদরা মাছের তেল খাওয়ার পরামর্শ দেন। এতে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।…

17 hours ago

গাছপাকা নাকি কৃত্রিমভাবে পাকানো আম চিনবেন যেভাবে

বাজারে এখন পাকা আম উঠতে শুরু করেছে। তবে সেগুলো আদৌ গাছপাকা নাকি কৃত্রিমভাবে পাকানো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। গাছপাকা হলে…

18 hours ago

বেশি তরমুজ খেলে কি সত্যিই ওজন বাড়ে?

বাজারে এখন তরমুজ বেশ সহজলভ্য। এই রসালো ফল খেতে কমবেশি সবাই পছন্দ করেন। তবে প্রতিদিন এই ফল খাওয়া কি স্বাস্থ্যের…

21 hours ago

ঘরে রক্তচাপ মাপার সময় যে ভুলগুলো করবেন না

হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ হলো একটি ক্রনিক রোগ। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে এই রোগ থাকে। পাশাপাশি এর কারণে শরীরের অন্যান্য…

2 days ago

সন্তানের মোবাইল আসক্তি কমাতে কী করবেন?

ছোট্ট সোনামনির হাতে কমবেশি সবাই মোবাইল তুলে দেন কোন না কোনো সময়। তবে কিছু সময়ের জন্য মোবাইল দেখা এক সময়…

2 days ago

ক্যানসার হবে কি না জানতে পারবেন ৭ বছর আগেই

ক্যানসারের নাম শুনলেই কমবেশি সবাই আঁতকে ওঠেন। কঠিন এই ব্যাধি থেকে বাঁচতে সচেতনতা জরুরি। ক্যানসার রোগের আগাম খবর পেতে সারা…

3 days ago