শরীর সুস্থ রাখার ৮টি সহজ উপায়, অবশ্যই করে দেখুন সুফল পাবেনই আপনিও

Written by News Desk

Published on:

সুস্থ থাকার জন্যে প্রয়োজন সুস্থ জীবনাচার। আমাদের জীবনাচারে কিছু কিছু পরিবর্তন আনতে পারলেই আমাদের সুস্থ থাকার ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। এজন্যে যেসব বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।

১. দম চর্চা করুন: দম হচ্ছে জীবনের মূল ছন্দ। প্রতিটি কোষের মূল খাবার হচ্ছে অক্সিজেন। দেহে যখন কার্বন ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ থাকে তখন দেহে ক্লান্তি ও অবসাদ ভর করে। আর দেহ যখন অক্সিজেন সমৃদ্ধ থাকে তখন দেহে প্রাণবন্ত থাকে। সঠিক ও পরিপূর্ণ দম নেয়ার অভ্যাস করতে হবে। আর বুক ফুলিয়ে দম নেয়ার মাধ্যমেই আমরা পরিপূর্ণ দম নিতে পারি। দিনে পাঁচ দফা দম চর্চা করুন। একেক দফায় ১৯ বার করে দম নিন। দম যত সঠিক হবে আমাদের এনার্জি লেভেল তত বাড়বে। সারাদিন পরিশ্রম করেও দেহ থাকবে ক্লান্তিহীন ও কর্মক্ষম। রোগ নিরাময়ে কোয়ান্টাম ব্যায়াম এবং সৌন্দর্যচর্চা বইটি থেকে আমরা এ বিষয়টি জানতে পারি।

২. বৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন: যেসব ভুল জীবনাচারের কারণে আমরা অসুস্থ হই, তার অধিকাংশই খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত। মুখরোচক ও গুরুপাক খাবার নয়, সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর ও মৌসুমি ফল খাবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। খাবার যত গুরুপাক ও সুস্বাদু হবে তা তত স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। যথাসম্ভব প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হোন। বর্জন করুন প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার। অতিরিক্ত তৈলাক্ত-ভাজাপোড়া ও অধিক চিনিযুক্ত খাবার, এলকোহল, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস বর্জন করুন।

কী খাচ্ছি তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ কখন খাচ্ছি এবং খাবার গ্রহণের সময় কী করছি। এজন্যে খাবার খেতে হবে শুকরিয়ার সাথে, পূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে এবং নীরব মনোযোগের সাথে। তাহলে শরীর সেই খাবার থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করবে। আর যত বিরক্তি নিয়ে খাবেন, খাবার সময় টিভি সিরিয়াল দেখা কিংবা পরচর্চা-পরনিন্দা ও নেতিবাচক আলাপ করতে করতে খাবেন তত এসিডিটি বাড়বে, শরীর হয়ে উঠবে এসিডিক, যা ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য জীবাণুর আগ্রাসনের অনুকূল। যার ফলে বাড়ে অসুস্থতার সম্ভাবনা।

৩. ব্যায়াম চর্চা করুন: সুস্থতার জন্যে সারা পৃথিবীতে এখন ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সাম্প্রতিককালে ২১ শে জুনকে বিশ্বযোগ দিসব হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। যোগ ব্যায়ামেরই আধুনিক সংস্করণ কোয়ান্টাম ব্যায়াম। অনুশীলনে সহজ। কার্যকারিতায় অনন্য। একবার শিখে নিলেই ঘরে বসে চর্চা করা যায়। কোয়ান্টাম ব্যায়াম শরীরের হরমোনাল, বায়ো-ইলেক্ট্রিক্যাল ও নার্ভাস সিস্টেমসহ দেহের সবগুলো সিস্টেমের মধ্যে আন্তঃপারস্পরিক ভারসাম্য বজায় রাখে দারুণভাবে। আমাদের মুনি-ঋষিরা যে এত সুস্থ দেহে, নীরোগ দেহে দীর্ঘ জীবনযাপন করে গেছেন, তার রহস্য এই যোগব্যায়াম। এজন্যে রোগ নিরাময়ে কোয়ান্টাম ব্যায়াম ও সৌন্দর্যচর্চা বইটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

সাথে সাথে সুযোগ পেলেই হাঁটুন। যে দূরত্বে হেঁটে যাওয়া যায়, সেখানে হেঁটে যান। মনে রাখবেন, যত আরাম তত ব্যারাম। যত ব্যস্ত তত সুস্থ। যত আপনি পরিশ্রমী হবেন, শ্রম করবেন তত শরীর সুস্থ থাকবে। আর যত অলস ও আরামপ্রিয় হবেন, শরীর তত অসুস্থ হয়ে পড়বে। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন।

৪. ছন্দায়ন ও পরিশীলন: ছন্দায়ন মানে যে কাজের জন্যে যে সময় নির্ধারিত সে সময়ে সেই কাজ করুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং নির্ধারিত সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠার অভ্যাস করুন। যেমন : কাজের সময় কাজ, খাওয়ার সময় খাওয়া, উপাসনার সময় উপাসনা, নামাজের সময় নামাজ, ঘুমের সময় ঘুম। বিদূষী খনা বলে গেছেন, `সকাল শোয়, সকাল ওঠে; তার কড়ি বদ্যি না লুটে।` অর্থাৎ রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠতে পারার অভ্যাস অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ এবং ঔষধপথ্য থেকে দূরে রাখবে।

পরিশীলন মানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। দেহ-মনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে পারলে সুস্থতার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা সহজতর হয়। রসুলুল্লাহ (স) এর ব্যক্তিগত খরচ খুব কম ছিল। কিন্তু তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছ্ন্নতার জন্যে তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখতেন। গৃহ, ব্যক্তিগত ব্যবহৃত জিনিস, কাপড় চোপড়, কর্মস্থল অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন আর গুছিয়ে থাকার ব্যাপারে আমরা কতটা সচেতন? পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি থাকলে দেহ-মনে সারাক্ষণ চনমনে ভাব অনুভব করা যায়। সুস্থতার জন্যে প্রতিদিন গোসল করুন। সাথে সাথে মনের পরিচ্ছন্নতাও অনেক জরুরি।

৫. ভার্চুয়াল ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকুন: কেউ যদি আত্মাকে কলুষিত করে তাহলে তার প্রভাব দেহে পড়বেই। ভার্চুয়াল ভাইরাস এবং দেহ-মনের সুরক্ষা কখনো একসাথে চলতে পারে ন। কারণ এরা শক্র পক্ষ। ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি নানারকম সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব এবং টেলিভিশন আসক্তি মানুষকে মানসিকভাবে বিষিয়ে তুলছে। ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। আপনি ভালো আছেন, তৃপ্তিতে আছেন বোঝা যাবে আপনার ঘুম ভালো হচ্ছে কিনা তা দেখে। কারণ প্রকৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী ওষুধ হচ্ছে ঘুম। এখন বলা হচ্ছে, পারিবারিক বা পেশাগত কারণের চেয়ে অনিদ্রার মূল কারণ ভার্চুয়াল ভাইরাসের আসক্তি। আসলে যিনি কমপক্ষে ২০০ বার স্মার্টফোন স্পর্শ করেন তার ভালো ঘুম আসবে কীভাবে? এজন্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিহার করুন। যাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই তারা ফিচার ফোন ব্যবহার করুন। রাত ১১টার পরে সব ধরনের ইন্টারনেট আসক্তি ও স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকুন। আপনার ঘুম হবে চমৎকার। যা আপনাকে দুশ্চিন্তামুক্ত ঝরঝরে দিন উপহার দেবে।

৬.পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করুন: যাদের সুষম পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন রয়েছে, তারা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘায়ু হন। কারণ এসব মানুষের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর, এরা কমবেশি নিয়মিত ব্যায়াম করেন। সব মিলিয়ে তাদের জীবনধারা অনেক সুস্থ। যে সব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজমান, সেসব পরিবারের সদস্যদের ক্যান্সারের মতো অসুখে পড়ার সম্ভাবনা কম। গবেষকরা মনে করেন, প্রিয়জনদের প্রতি দায়িত্ববোধই এসব মানুষকে দীর্ঘজীবন লাভের ব্যাপারে আশাবাদী ও অনুপ্রাণিত করে তোলে। পরিবারের সদস্যদের প্রতি একাত্মতা বাড়াতে সবার খোঁজ খবর নিন, দিনে অন্তত একবেলা তাদের সাথে খাবার গ্রহণ করুন। এই যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক সৃষ্টি খুব বেশি প্রয়োজন সুস্থতার ক্ষেত্রে।

৭. ধর্মবাণীর চর্চা করুন: যা কিছু সত্য, যা কিছু সুন্দর, প্রতিটি ধর্মবাণী তা-ই প্রকাশ করে। প্রতিটি ধর্মই আমাদের নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়। জীবনযাপনকে অর্থপূর্ণ করার নির্দেশনা দেয় ও নৈতিক ভিতকে মজবুত করে। যত ধর্মের বাণীর সাথে একাত্ম থাকবেন তত মন প্রশান্ত থাকবে এবং নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। এবং এর প্রভাব আপনার দেহের ওপর পড়বে। এজন্যে নিয়মিত আল কোরআন মর্মবাণী পড়ুন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্মবাণী পড়ুন।

৮. মেডিটেশন করুন: পৃথিবীজুড়ে স্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, সুস্থতার জন্যে নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা চালিয়ে যেতে। তারা বলেছেন, শতকরা ৭৫ ভাগ রোগের ক্ষেত্রে কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। এজমা, আইবিএস, এলার্জি, মাইগ্রেন, ব্যথা-বেদনাসহ এ ধরনের রোগগুলোকে চিকিৎসকরা মনোদৈহিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মনের দুঃখ-কষ্ট, রাগ-ক্ষোভ, দুশ্চিন্তা- হতাশা দূর হয়ে গেলেই স্বাভাবিকভাবে ভালো হয়ে যায় এ রোগগুলো। আর নিজেকে স্ট্রেসমুক্ত করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় মেডিটেশন। মেডিটেশনের স্তরেই মানুষ উপলব্ধি করে নিজের প্রতি মনোযোগী হওয়ার গুরুত্ব।

নবীজী (স) এর একটি হাদীস হচ্ছে, তোমাদের শরীরের হৃদপিণ্ডের পাশে একটি মাংসপিণ্ড আছে তা ভালো থাকলে সারা দেহ ভালো থাকে আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, সমস্ত দেহ খারাপ বা দূষিত হয়ে যায়। এজন্যে মনের সুস্থতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনে যদি রাগ-ক্ষোভ-ঈর্ষা-ঘৃণা দিয়ে পরিপূর্ণ রাখি তার দুগর্ন্ধ তো চারপাশে পড়বেই। মনকে আর্বজনা বা দূষণমুক্ত করার জন্যেই প্রয়োজন মেডিটেশনের।

গবেষণায় দেখা গেছে, আসক্ত মানুষের মস্তিষ্কের নিউরোনে এক ধরনের জড়তা থাকে। নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তারা। আশার কথা, নিয়মিত মেডিটেশন চর্চায় নিউরোনের এ জড়তা কেটে যায়। তাই কেউ যদি ফাস্টফুডের আকর্ষণ ছেড়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাহলে তারা আজই শুরু করতে পারেন মেডিটেশন।

বুদ্ধবাণী বলা হয়েছে, ‘ভালো স্বাস্থ্য পেতে হলে আগে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, তোমার অনিয়ন্ত্রিত মন তোমার যত ক্ষতি করতে পারে, তোমার সবচেয়ে বড় শত্রুও তোমার অত ক্ষতি করতে পারে না।‘

আর মনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যেই প্রয়োজন মেডিটেশন। বৈজ্ঞানিক জীবনাচার আপনার অনুসরণ করা সহজ হবে যদি মেডিটেশনকে আপনি সঙ্গী বানাতে পারেন। একজন ধ্যানীকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় গড়পড়তা মানুষের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ।rs

Related News