যে বিষয়গুলো নিয়ে পুরুষরা কখনও কথা বলে না, যার ফল হয়ে দাঁড়ায় আত্মহত্যা, জেনেনিন বিস্তারিত

আপনি কি জানেন, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীতে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। যারা নিজের জীবন এভাবে শেষ করে দেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই কিন্তু পুরুষ। কেননা পুরুষরা অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ করেন না। নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলা অথবা কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার প্রবণতা পুরুষদের কম থাকে।
তাই এমন সিদ্ধান্ত এড়াতে জেনে নেয়া জরুরি যে পাঁচটি বিষয় নিয়ে পুরুষদের অবশ্যই খোলামেলা কথা বলা দরকার।

নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বলুন
জর্জিয়া টেক রিসার্জ ইনিস্টিটিউড নামের একটি রিসার্জ প্রতিষ্ঠান তিন হাজার মানুষের উপর নিঃসঙ্গতা নিয়ে একটি পরীক্ষা চালায়। যেখানে দেখা যায় যেসব ছেলেদের বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছর তারা বেশি নিঃসঙ্গয় ভুগেন। খুব দীর্ঘ সময়ের নিঃসঙ্গতা একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

পুরুষদের জন্য নিঃসঙ্গতা থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল। এছাড়া গবেষণায় আরো দেখা গেছে সহজে নিরাময় হয়না শরীরে এমন রোগের জন্ম দেয় নিঃসঙ্গতা। এছাড়া এটি মানুষের মধ্যে জন্ম দেয় বেপরোয়া আচরণ। এছাড়া একাকীত্বের সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশ জনিত রোগেরও সম্পর্ক রয়েছে।

২০১৭ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, মেয়েদের থেকে পুরুষেরো নিঃসঙ্গতায় পড়লে তাদের এ থেকে বের হয়ে আশা মুশকিল হয়ে পড়ে। এই গবেষণার প্রধান রবিন ডানবার বলছেন, যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিশাল ফারাক তারা দেখতে পেয়েছেন।

পুরুষরা নিজেদের একাকীত্ব স্বীকারও করেন না। ২০১৭-১৮ সালে যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে- একা বোধ করি না, এই কথাটিই বরং পুরুষরা মেয়েদের তুলনায় বেশি বলেন।

কান্না ও পুরুষালী ধারনা
সমাজের প্রচলিত একটি কথাই রয়েছে যে, ছেলেদের কাঁদতে নেই। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউগভ-এর ২০১৮ সালের এক হিসেব অনুযায়ী দেশটির ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষদের ৫৫ শতাংশ মনে করেন কান্না পুরুষের আচরণের সঙ্গে যায় না বা কান্না পুরুষালী বিষয় নয়।

আত্মহনন প্রবণতায় ভোগে এমন মানুষদের সহায়তা করে অস্ট্রেলিয়ান দাতব্য প্রতিষ্ঠান লাইফলাইন। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক কোলম্যান ওড্রিসকল বলছেন, আমরা খুব ছোটবেলা থেকে ছেলেদের এমনভাবে তৈরি করি যেন তাদের আবেগ প্রকাশ করতে নেই। সমাজ সেভাবেই ছেলেদের বড় করে তোলে। তাদের ধারনা দেয়া হয় যে আবেগ প্রকাশ করা দুর্বলতার লক্ষণ।

অথচ বহু গবেষণায় দেখা গেছে নিজের মন হালকা করার জন্য কান্না খুব কাজে আসে।

পরিবারের জীবিকার প্রধান দায়িত্ব পুরুষের জন্য বড় চাপ
যুক্তরাজ্যে এক গবেষণায় দেখা গেছে ৪২ শতাংশ পুরুষরা মনে করে তাদের নারী সঙ্গীদের তুলনায় তাদের আয় বেশি হওয়া উচিৎ। সেরকম একজন নাইজেরিয়ান ফুটবলার অলুমাইড ডরুযাইয়ে। তিনি বলছেন, আমি দেখেছি আমার বাবা ছিলেন পরিবারের প্রধান রুটির যোগানদাতা। দিনরাত খাটতেন। আমিও সেরকমই হয়েছি। যেকোনভাবেই হোক আমাকে অর্থ উপার্জন করতে হয়েছে কারণ আমাকে সেই পুরুষের ভূমিকাটি নিতে হয়েছে।

পরিবারের সবার রুটির যোগান দেয়া পুরুষের দায়িত্ব এই ধারনার কারণে পুরুষরা অনেকেই বাড়তি চাপের মধ্যে থাকেন। পুরুষদের জন্য এই দায়িত্ব বাড়তি বোঝা বলে মনে করা হয়। অর্থনৈতিক বোঝা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।

বেকারত্বের সঙ্গে আত্মহত্যার সম্পর্ক রয়েছে বলে ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও বাস্তবতা
গবেষকরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম সম্ভবত খুব গভীর প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা যত বেশি সময় কাটাই তাতে আমরা আরো বেশি নিঃসঙ্গ ও বিষণ্ণ হয়ে পরি।

এই গবেষণার লেখক মেলিসা হান্ট বলছেন, সামাজিক যোগাযোগের ব্যবহার কমিয়ে দিলে সাধারণত বিষণ্ণতা ও নিঃসঙ্গতার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এমন কি আছে যা আসলে ক্ষতিকর?

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক অস্কার ইয়াবারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যা দেখা যায় তা খুব কম ক্ষেত্রেই বাস্তব জীবনের প্রতিফলন। আপনি এতে ঢুকে যা দেখছেন তা সচরাচর খুবই বাছাই করা বিষয়াদি। কিন্তু মানুষ তবুও নিজের জীবনের সঙ্গে তার তুলনা করে।

নিজের শরীর সম্পর্কে ধারনা
যুক্তরাজ্যে গত বছর লাভ আইল্যান্ড নামে টেলিভিশনে একটি রিয়ালিটি শো-তে অংশ নিয়ে কিছুটা খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এমন একজন জশ ডেনজেল। তিনি বলছেন, এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার আগে তিনি সারাদিন জিমে কাটাতেন।

তারপরও আয়নায় নিজের দিকে তাকাতেন এবং নিজের শরীর নিয়ে সংকোচ বোধ করতেন।

তিনি আরো বলেন, এখনো সৈকতে হয়ত আমার পাশ দিয়ে দারুণ সিক্স প্যাক শরীর নিয়ে কেউ হেঁটে যাচ্ছে, আমি তখন নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেকেই খুব হীন পুরুষ মনে হয়েছে।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি দারুণ ফিগার নিয়ে এখন অনেকেই খুব চিন্তা করেন। তাই স্থূল হয়ে যাওয়া বা শরীরের কোন খুঁতের সঙ্গেও মানসিক স্বাস্থ্যের যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়।

News Desk

Recent Posts

নারীদের শরীরে ডায়াবেটিসের যে ৬ লক্ষণ দেখা দেয়

ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ, যা সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্ভাগ্যবশত ডায়াবেটিসের কোনো প্রতিকার নেই। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ…

8 hours ago

মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া কঠিন রোগের লক্ষণ নয় তো?

দাঁত বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এর অর্থ হলো, আপনি পাইওরিয়া বা দাঁত-মাড়ি সংক্রমণে ভুগছেন। তবে জেনে…

9 hours ago

নখের ইনফেকশন সারাবেন যেভাবে

নখের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। তার মধ্যে নখের ইনফেকশন অন্যতম। এক্ষেত্রে নখ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। নখ কালো হতে পারে…

11 hours ago

দুপুরের ঘুম শরীরের জন্য ভালো নাকি খারাপ?

দুপুরে ভরপেট খাওয়ার পর বিছানায় গা এলিয়ে দেন অনেকেই। যাকে বলা হয় ভাতঘুম। দুপুরের ঘুমের মধ্যে অনেকেই শান্তি খুঁজে পান।…

12 hours ago

বাবা-মায়ের যে ভুলে সন্তান রাগী ও জেদি হয়ে ওঠে

সন্তান লালন-পালন করা সহজ কাজ নয়। তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে কখনো কখনো কঠোর হতে হয় আবার কখনো ভালোবাসা দিয়ে তাদের মন…

12 hours ago

হঠাৎ মাথাব্যথায় হতে পারে স্ট্রোক, জানুন লক্ষণ

স্ট্রোক শুধু বয়স্কদেরই নয়, বরং তরুণদের মধ্যেও হতে পারে যখন তখন। চিকিৎসকদের মতে, স্ট্রোক আক্রান্তকে যত তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে…

13 hours ago