বিশ্বাস সাফল্যের ভিত্তি? দেখেনিন একঝলকে

সাফল্য মানে শুধু অর্থ বিত্ত খ্যাতি প্রতিপত্তি নয়, সাফল্য মানে কল্যাণকর সবকিছু করার বা পাওয়ার ক্ষমতা। প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তরের সামর্থ্যই। এ এক বিরামহীন প্রক্রিয়া।

সাফল্যের জন্যে, মন ও মস্তিষ্কের অফুরন্ত শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্যে প্রথমত প্রয়োজন এর ওপরে বিশ্বাস স্থাপন। বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘আমি পারব, এই দৃঢ় বিশ্বাসই সকল সাফল্যের ভিত্তি’।

তারা বলেন, পারব বলে বিশ্বাস করলে আপনি অবশ্যই পারবেন। আসলে বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য, সকল অর্জনের ভিত্তি। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে। বিশ্বাসই মেধাকে বিকশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগায় আর দক্ষতা সৃষ্টি করে।

বিশ্বাস কীভাবে যোগ্যতা ও সাফল্য সৃষ্টি করে তার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। হাজার বছর ধরে দৌড়বিদরা মনে করতেন চার মিনিটে এক মাইল দৌড়ানো সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলতেন যে, মানুষের পায়ের পেশির শক্তি ও ফুসফুসের সামর্থ্য-এ দুটোই এক্ষেত্রে অন্তরায়। এমনকি চেষ্টা করলে সে মারাও যেতে পারে। হাজার বছর পর ইংল্যান্ডের যুবক রজার ব্যানিস্টার প্রথম বিশ্বাস শুরু করলেন, চার মিনিটে এক মাইল দৌড়ানো যাবে।

অনুশীলনের পর অনুশীলন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৯৫৩ সালে তিনি চার মিনিটে এক মাইল দৌড়ের রেকর্ড করলেন। তার ১৫ দিনের মাথায় জন ল্যান্ডি চার মিনিটের চেয়ে দুই সেকেন্ড কমে এক মাইল দৌড়ালেন। বিস্ময় কিন্তু ওখানে নয়, বিস্ময় তারপরে। পরবর্তী ৩০ বছরে হাজারেরও বেশি দৌড়বিদ চার মিনিটে এক মাইল দৌড়িয়েছেন। যখন মানুষ বিশ্বাস করত যে, সম্ভব নয়, কেউ পারেনি। যেদিন রজার ব্যানিস্টার বিশ্বাস করলেন এবং করে দেখিয়ে দিলেন, তারপর হাজার জন পারলেন।

বিজ্ঞানের অগ্রগতির যে ইতিহাস, এটিও বিশ্বাসের বিজয়ের ইতিহাস। যে-কোনো প্রযুক্তি প্রথমে বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেছেন যে, এটি তৈরি করা সম্ভব, এটি বানানো সম্ভব। তারপরে তিনি বানিয়েছেন। আপনি দেখুন, বিমানের ইতিহাস। হাজার বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে, বাতাসের চেয়ে ভারী বস্ত্ত আকাশে উড়বে না। ওড়েনি। প্রথমে রাইট ব্রাদার্স বিশ্বাস শুরু করলেন যে, না, বাতাসের চেয়ে ভারী বস্ত্ত আকাশে উড়বে যদি তার দেহ এবং ডানার অনুপাত ঠিক হয় এবং তাতে গতির সঞ্চার করা যায়। অন্যান্য বিজ্ঞানীরা তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু রাইট ব্রাদার্স বিশ্বাসে অটল থাকলেন। বিমান তৈরি করলেন। সভ্যতার চেহারা পাল্টে গেল।

পৃথিবীর যত বড় বড় ধনকুবের, তার শতকরা ৯০ জন খুব সাধারণ অবস্থা থেকে উঠে এসেছেন এই বিশ্বাসকে সম্বল করে। আমেরিকায় তার সময়কার সবচেয়ে বড় ধনকুবের এন্ড্রু কার্নেগি বস্তির ছেলে ছিলেন। ১২ বছর যখন তার বয়স তখন তিনি একটি পাবলিক পার্কে ঢুকতে চেয়েছিলেন। দারোয়ান তাকে ঢুকতে দেয় নি তার ময়লা নোংরা পোশাকের জন্যে।

কিন্তু সেই ১২ বছর বয়সী ছেলেটির মনে এত প্রত্যয়, এত বিশ্বাস ছিল যে, সেখানে দাঁড়িয়ে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যেদিন আমার টাকা হবে, সেদিন এই পার্কটা আমি কিনে ফেলব। ৩০ বছর পরে এন্ড্রু কার্নেগি তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছিলেন। তিনি সেই পার্কটি কিনেছিলেন। সেখানে একটি নতুন সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন। সে সাইনবোর্ডে লেখা ছিল-‘আজ থেকে দিনে বা রাতে, সকালে বা বিকেলে, যে-কোনো বয়সের, যে-কোনো মানুষ, যে-কোনো পোশাকে এই পার্কে প্রবেশ করতে পারবে’।

বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস-এর যে পার্থক্য, ছোট্ট একটি উদাহরণ দিয়ে আমরা বোঝাতে পারি। আপনার সামনে মেঝেতে যদি ছয় ইঞ্চি চওড়া একটি কাঠের তক্তা বিছিয়ে দেয়া হয় এবং বলা হয়, ভাই বা বোন! এর ওপর দিয়ে একটু হেঁটে যান। আপনি কী করবেন? আপনি দৌড় দেবেন। কারণ আপনি জানেন যে, আপনার পা ফেলার জন্যে ছয় ইঞ্চির চেয়ে বেশি জায়গার দরকার নেই। কারো পায়ের পাতাই ছয় ইঞ্চি চওড়া নয়।

কিন্তু এই তক্তাটাই যদি একটি উঁচু বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে রাস্তার ঐ পারের একটি বিল্ডিংয়ের ছাদে লাগিয়ে দেয়া যায় আর বলা হয় যে, ভাই বা বোন! একটু আগে আপনি কী সুন্দর দৌড় দিয়েছিলেন-এবার দৌড় দিতে হবে না, আস্তে আস্তে টুক টুক করে হেঁটে যান। আপনি কী করবেন? প্রথমে সামনের দিকে তাকাবেন। দেখবেন যে, কত দূর? তারপরে নিচের দিকে তাকাবেন যে, কত উঁচুতে? তারপর মনে হবে যে, যদি পড়ে যাই? এক পা, দুই পা, তিন পা। ব্যস, পড়ে গিয়ে একেবারে আলুর দম হয়ে যাবেন।

প্রথমবার পারলেন, দ্বিতীয়বার পারলেন না কেন? কারণ প্রথমবার আপনার মনে কোনো প্রশ্নই জাগে নি, পড়ে যাওয়ার কোনো চিন্তাই আসে নি। দ্বিতীয়বার আপনার মনে প্রশ্ন ঢুকে গেছে, যদি পড়ে যাই? অথচ সার্কাসে আপনারা দেখেছেন, দড়ির ওপর দিয়ে ১২ বছরের কিশোর দৌড়ে চলে যাচ্ছে। সে পারছে, আপনি পারছেন না কেন? কারণ সে বিশ্বাস করছে যে, সে পারবে। আর আপনার মনে প্রশ্ন জেগে গেছে, যদি পড়ে যাই?

আসলে আমাদের সবকিছুই আছে, অভাব শুধু বিশ্বাসের। আমরা নিজেদেরকে বিশ্বাস করতে পারি না। বিশ্বাস করতে পারি না যে, আমিও পারি। বিশ্বাস করতে পারি না যে, আমিও পারব। যেদিন বিশ্বাস করতে পারবেন যে, আমিও পারি, সেদিন আপনার প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়া পাওয়ায় রূপান্তরিত হবে। বিশ্বাসই আপনাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেবে।

News Desk

Recent Posts

ব্রেইন স্ট্রোকের প্রাথমিক ৭ লক্ষণ এড়িয়ে গেলেই বিপদ

শরীরের কোনো স্থানে ঠিকমতো রক্ত চলাচল করতে না পারলে ওই অংশের কোষগুলো প্রাণ হারাতে শুরু করে। মাথাতেও এই ঘটনা ঘটতে…

2 hours ago

প্রতিদিন আমলকি খেলে কী হয়?

স্বাস্থ্যের উন্নতি থেকে শুরু করে মুখের ব্রণের মতো সমস্যা দূর করে তাই একে উপকারিতার স্টোরহাউজ বলা হয়। বলছি আমলকির কথা।…

3 hours ago

সিলিং ফ্যান পরিষ্কারের ট্রিকস

সবার ঘরেই অন্তত একটি করে হলেও সিলিং ফ্যান আছে। এই গরমে যাদের ঘরে এসি বা এয়ার কন্ডিশন নেই, তাদের ভরসা…

14 hours ago

প্রতিদিন ১০ মিনিট হাসলে শরীরে যা ঘটে

বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই হাসতে ভুলে গেছেন। তবে হাসিখুশি থাকা যে শরীর ও মনের জন্য কতটা উপকারী, তা হয়তো অনেকেরই…

16 hours ago

গরমে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়লে দ্রুত যা করবেন

কোষ্ঠকাঠিন্য হলো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। এই তাপপ্রবাহে ডায়রিয়ার সমস্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই অনেকের আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও বেড়েছে। যারা এরই…

18 hours ago

এই গরমে শিশুকে সুস্থ রাখতে কী কী খাওয়াবেন?

তীব্র গরমে বড়দের পাশাপাশি হাঁসফাঁস করছে ছোটরাও। এ সময় শিশুদের কীভাবে সুস্থ রাখবেন তাই এখন বড় প্রশ্ন, প্রত্যেক মা-বাবার জন্য়।…

18 hours ago