ডায়াবেটিক রোগীর খাদ্যতালিকা যেমন হবে, জেনেনিন

সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস এখন এক মহামারী রোগ। মাত্র কয়েক দশক আগেও এটি ছিল খুব স্বল্প পরিচিত রোগ। অথচ বর্তমানে শুধু উন্নত বিশ্বেই নয়, বরং উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত বিশ্বেও অসংক্রামক ব্যাধির তালিকায় ডায়াবেটিস অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৭৯ লাখ ৫০ হাজার এবং প্রতি বছর গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্থূলতা বা ওজন বৃদ্ধি, মেদবাহুল্য, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, মানসিক চাপ, ধূমপান ইত্যাদির কারণে এ রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে।

এ ছাড়াও অনিয়িমিত জীবনযাপন, দ্রুত নগরায়ন এবং পাশাপাশি উচ্চ শর্করা এবং কম আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বংশগত কারণেও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনটি ‘ডি’ মেনে চলা জরুরি। যেমন- ডায়েট, ডিসিপ্লিন এবং ড্রাগ।

এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও প্রাথমিক পদক্ষেপ হল ডায়েট তথা খাদাভ্যাস। ডায়াবেটিক রোগীর খাদ্যাভ্যাসে কিছু সাধারণ নিয়মাবলী মেনে চলা উচিত, যেমন-

>> তিনবেলার খাবার ছয়বারে ভাগ করে খেতে হবে এবং কোনো বেলার খাবারই বাদ দেওয়া যাবে না।

>> চর্বিজাতীয় খাবার কম গ্রহণ এবং মিষ্টি জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে।

>> ওজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হবে।

>> খাবার খেতে কোনো অসুবিধা হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করে ঔষুধ সমন্বয় করে নিতে হবে।

>> প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ডায়াবেটিক রোগীরা যা যা খেতে পারবেন-

লাউ, পেঁপে, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউশাক, লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, কলমিশাক ইত্যাদি শাক-সবজি খাওয়ায় কোনো বাঁধা-নিষেধ নেই ডায়াবেটিক রোগীর জন্য।

তবে মিষ্টিকুমড়া, গাজর, বরবটি, বেগুন, ঢেঁড়স, মটরশুঁটি, কাকরোল, করল্লা ইত্যাদি সবজি খেতে হবে পরিমাণমতো।

এ ছাড়াও ডায়াবেটিক রোগীর জন্য কালোজাম, লেবু, আমড়া, বাতাবি লেবু, বাঙ্গি, জামরুল, আমলকি, কচি ডাবের জল, মিষ্টি ছাড়া ফলের আচার ইত্যাদি ফলমূল খেতেও কোনো নিষেধ নেই। তবে সব ফলমূলই নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।

যেমন- ছোট একটি আমের অর্ধেক, একটি বড় পাকা পেয়ারা, বড় আকারের ৬টি লিচু বা মিষ্টি কুল, একটি আতা ফল, কাঁঠালের তিনটি মাঝারি আকারের কোয়া, একটি মাঝারি আকারের কমলা খেতে পারবেন।

সেইসঙ্গে আপেল বা মাল্টা, আধা কাপ পাকা বেল, ২ চামচ কোরানো নারকেল, তরমুজ এক টুকরা কিংবা একটি বড় কলার অর্ধেক ডায়াবেটিক রোগী একদিনে খেতে পারেন।

প্রতিদিন এসব ফলের যেকোনো একটি অথবা পরিমাণমত খাওয়া যাবে। তবে একাধিক ফল একসঙ্গে খাওয়া উচিত হবে না।

এভাবে একজন ডায়াবেটিক রোগী সকাল ৮-৮:৩০টার দিকে সকালের নাস্তা সেরে ফেলবেন। সকালের নাস্তায় ২টি ছোট ও পাতলা আটার রুটি, একটি ডিম সেদ্ধ এবং বাধা-নিষেধ নেই এরকম ফল বা সবজি ইচ্ছেমত খেতে পারেন।

বেলা ১১ টার দিকে হালকা খাবার হিসাবে এক কাপ দুধ বা মুড়ি, বিস্কুট, খই, নুডুলস বা ডাল/চিনাবাদাম ৩০ গ্রাম অথবা পরিমাণমত যে কোনো একটি ফল খেতে পারেন।

২-২:৩০ টার দিকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন একজন ডায়াবেটিক রোগী। দুপুরের খাবারে ২.২৫ কাপ পরিমাণ ভাত এর সাথে ২ টুকরো মাছ বা মাংস, ২ কাপ পরিমাণ মাঝারি-ঘন ডাল এবং পরিমাণমতো যেকোনো একটি সবজি খেতে পারেন।

বিকেল ৫-৫:৩০ টার দিকে নাস্তা করতে পারেন। এসময় সকাল ১১ টার হালকা খাবারের মতো নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে পারেন।

রাত ৮-৮:৩০ টায় রাতের খাবার হিসেবে ৪টি ছোট-পাতলা আটার রুটি, এক টুকরা মাছ বা মাংস, এক কাপ মাঝারি-ঘন ডাল ও পরিমাণমত যেকোনো একটি সবজি খাওয়া যেতে পারে।

রাত ১১-১১:৩০ টার দিকে এক গ্লাস দুধ বা দুইটা বিস্কুট অথবা ছোটো একটি পাউরুটি কিংবা পরিমাণমতো একটি ফল খেয়ে আধা ঘণ্টা হালকা হাঁটাহাঁটি করে একজন ডায়াবেটিক রোগী রাতে ঘুমাতে যেতে পারেন।

অনেকের মধ্যেই একটি ভুল ধারণা কাজ করে যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি খাবার স্যালাইন খেতে পারবেন না। ডায়াবেটিক রোগীরা খাবার স্যালাইন খেতে পারবেন, শুধু ডায়রিয়া হলে বা বারবার বমি হলে। তবে ডায়াবেটিক রোগীর জন্য বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ধরণের কোমল পানীয় পান করা অনুচিত।

কারণ এসব পানীয়তে থাকে মাত্রাতিরিক্ত ক্যালোরি। যেসব কোমল পানীয়ের উপরে ‘ডায়েট’ লেখা থাকবে তা সতর্কতার সঙ্গে পরিমিতভাবে পান করা যাবে। আরো একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, ডায়াবেটিক রোগীর যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে; তাহলে তিনি ডিম, দুধ ইত্যাদি খেতে পারবেন না।

আসলে উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে দুধ বা ডিমের কোনো সম্পর্ক নাই। রক্তচাপ বাড়ে লবণ ও লবণাক্ত খাবার (চিপস, লবণযুক্ত বাদাম, মাছ ইত্যাদি) খেলে। তাছাড়া অনিদ্রা, মানসিক দুঃশ্চিন্তা ইত্যাদি কারণেও রক্তচাপ বাড়তে পারে। একজন ডায়াবেটিক রোগী চাইলে প্রতিদিন ১টা ডিম ও ১ কাপ দুধ খেতে পারেন।

News Desk

Recent Posts

হার্টের ধমনী ব্লক হয়েছে কি না জানাবে ৪ লক্ষণ

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত হলো হৃৎপিণ্ড। এটি মানুষের জীবদ্দশায় কখনো বিশ্রাম নেয় না। দিনে অন্তত এক লাখ বার…

1 hour ago

গরমে ‘এনার্জি বুস্টার’ হিসেবে কোন খাবার খাবেন?

গরমে ত্বক হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ। তাই এ সময় ত্বকের জন্য দরকার বাড়তি যত্ন, না হলে ত্বক হারায় উজ্জ্বলতা ও সতেজতা।…

1 hour ago

এই গরমে পটল খাওয়ার ৭ উপকারিতা

পটলের নাম শুনলে অনেকেই নাক সিঁটকায়। আবার অনেকেই আছেন, যারা ভাজা হোক বা ভর্তা, পটল খেতে ভালবাসেন। যারা নিয়মিত পটলের…

2 hours ago

জেনে নিন খাবার স্যালাইনের সঠিক ব্যবহার

ডায়রিয়া, কলেরা, বমি, আমাশয়, পাতলা পায়খানা, অতিরিক্ত ঘাম বা অন্য যে কোনো কারণঘটিত পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে খাবার স্যালাইন বা ওরাল স্যালাইন…

6 hours ago

গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে কোন ফল খাবেন?

প্রচণ্ড এই গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ফলে এ সময় খাদ্যতালিকায় বেশ কিছু ফল রাখা উচিত, যাতে গরমেও শরীর ঠান্ডা…

6 hours ago

প্রচণ্ড দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা আয়রনের ঘাটতি নয় তো?

এই গরমে সুস্থ থাকাটাই এখন চ্যালেঞ্জের। এ সময় অনেকেই শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় বিশেষ করে দূর্বলতা, ক্লান্তি ও মাথা ঘোরার মতো…

7 hours ago