জেনেনিন যেসব খাবার অংশ কোনো দিন ফেলে দিতে নেই

Written by News Desk

Published on:

এমন কিছু ফ্রেশ খাবার রয়েছে যাদের খোসা ও বিচির পুষ্টি উপকারিতা থাকলেও অধিকাংশ মানুষ তা ফেলে দেয়। এর কারণ হতে পারে, এসব খোসা ও বিচির ব্যবহার বা পুষ্টি উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা না থাকা। এ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* লেবু ও কমলার খোসা
লেবুর রস বের করেই খোসাটি ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেবেন না। অরল্যান্ডো হেলথ ফিজিশিয়ান গ্রুপের ডায়েটিশিয়ান লরেন পপেক বলেন, ‘খাবার সাজানো এবং স্বাদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে লেবুর খোসার কিছু চমৎকার ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া লেবুর খোসাতে কিছু ভালো পুষ্টি উপকারিতা রয়েছে। পপেক বলেন, ‘দুই টেবিল চামচ খোসায় তিন গ্রাম ফাইবার আশা করতে পারেন। লেবুর রসালো অংশের তুলনায় খোসায় ৫ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে এবং এতে অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলও থাকে, যেমন- রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, নিয়াচিন, ফোলেট, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম।’ পপেকের খোসার প্রিয় ব্যবহার হচ্ছে: ভিনিগ্রেট বা ম্যারিনেডে খোসা ব্লেন্ড করা অথবা এক খন্ড খোসা স্মুদিতে দেওয়া, খোসা গ্রেট করে মটরশুটির ওপর ছিঁটানো, দই বা কটেজ পনিরে খোসা ব্লেন্ড করা অথবা ওটমিল-সিরিয়াল-কেক, কফি অথবা চায়ে যোগ করা। শুধু লেবুর খোসাতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না: স্বাদের জন্য কমলা, লাইম ও মোসাম্বির খোসাও ব্যবহার করতে পারেন।

কলার খোসা
বেশির মানুষই কলা খেয়ে নরম ও নমনীয় খোসা ফেলে দেয়। কিন্তু এমনটা করা উচিৎ নয়: কলার খোসায় ট্রাইপ্টোফ্যান থাকে, যা মুড ও নার্ভ ইমপালস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য সুখ হরমোন সেরোটোনিন বৃদ্ধি করে, বলেন পপেক। কলার খোসা ব্যবহারের কয়েকটি সৃজনশীল উপায় হচ্ছে: খোসা নরম করতে অন্তত ১০ মিনিট সিদ্ধ করুন। এটি আপনি স্মুদি, স্টির-ফ্রাইজ অথবা স্যূপে যোগ করতে পারেন। অথবা পিউরি করে মাফিন বা কেক বেটারে যোগ করতে পারেন। ট্রিটের জন্য কলাকে খোসাসহ স্লাইস করে বেক করতে পারেন।

* তরমুজের খোসা ও বিচি
তরমুজের ভেতরের রসালো অংশটুকু সাধারণত খাওয়া হয়। কিন্তু আপনি তরমুজের খোসা ও বিচি থেকেও কিছু শক্তিশালী পুষ্টি পাবেন। তরমুজের খোসা ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে খোসার সবুজ অংশের নিচের সাদা অংশ কেটে নিন এবং আপনার রান্নায় এটি ব্যবহার করুন। পপেক বলেন, ‘এটিতে অ্যামিনো অ্যাসিড সাইট্রুলিন থাকে, যা আরজিনাইনে রূপান্তরিত হয়- যা সংবহন, ইমিউনিটি, রক্তপ্রবাহ ও যৌন তাড়না বৃদ্ধি করতে এবং মাংসপেশীর ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। দ্য জার্নাল অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব স্পোর্টস নিউট্রিশনে প্রকাশিত ২০১৬ সালের একটি গবেষণা এ তথ্যকে সমর্থন করছে। এছাড়া এটিতে ভিটামিন সি ও বি৬ থাকে, যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত রাখে, তিনি বলেন। ব্লেন্ডারে স্মুদিতে তরমুজের খোসা যোগ করুন। অথবা এ খোসা খন্ড খন্ড করে কেটে ফ্রুট সালাদ, সালসা বা চাটনিতে যোগ করুন। অথবা আলু ও গাজরসহ স্যুপে মেশান। ওভেনে তরমুজের বিচি রোস্ট করতে পারেন। অলিভ অয়েল ও লবণে ৩৫০ ডিগ্রিতে তরমুজের বিচি ১০ থেকে ১৫ মিনিট রোস্ট করে সালাদের ওপর ছিঁটান অথবা ট্রেইল মিক্সে যোগ করুন, বলেন পপেক।

ব্রকলির ডাটা
আপনি সম্ভবত ব্রকলির মাথাটাই খান, কিন্তু ব্রকলির স্টক বা ডাটাও অবহেলা করার মতো কোনো জিনিস নয়, বলেন পপেক। তিনি যোগ করেন, ব্রকলির ডাটায় সালফোরাফ্যান (একটি ফাইটোকেমিক্যাল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যার প্রদাহ-বিরোধী গুণ রয়েছে) থাকে, যা কোষকে ডিএনএ ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে, কার্সিনোজেন বা ক্যানসার-সৃষ্টিকারী পদার্থ নিষ্ক্রিয় করে এবং হেমানজিওমা বা রক্তনালীতে টিউমার সৃষ্টিতে বাধা দেয়। ব্রকলির ডাটার ছাল তুলে স্লাইস বা খুব ছোট ছোট খন্ড করে সালাদ বা ডিপের সঙ্গে মিশিয়ে কাঁচা খেতে পারেন। যদি কাঁচা খেতে পছন্দ না করেন, তাহলে রান্না করে খেতে পারেন। স্টিম, রোস্ট বা সাউটি করে খেতে পারেন। অথবা স্যুপে যোগ করতে পারেন। অথবা পিউরি করে সস, পেস্টো, হিউমাস বা বেবি ফুডে যোগ করতে পারেন।

* আনারসের শাঁস
আনারসের শাঁস আবর্জনার ঝুঁড়িতে ফেলে দেবেন না। আপনি সকল ধরনের রেসিপিতে এ শাঁস ব্যবহার করতে পারেন এবং এতে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল থাকে, বলেন পপেক। আনারসে ব্রোমিলেন (একটি প্রোটিন-হজমকারক এনজাইম) থাকে; এটিতে প্রদাহ-বিরোধী উপাদান রয়েছে এবং এটি আর্থ্রাইটিস ও মাংসপেশির ব্যথা উপশম করতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এটিতে অ্যান্টিকোয়াগিউল্যান্ট উপাদানও থাকে- যার মানে হচ্ছে এটি রক্ত জমাটবদ্ধতার প্রোটিন ফাইব্রিনকে ভাঙ্গে, যা সম্ভাব্য ক্যানসার-বিরোধী প্রতিক্রিয়া।’ আনাসের শাঁসের ব্যবহারের নমুনা হচ্ছে: এ শাঁসকে খন্ড খন্ড করে কাটুন এবং ফ্রুট সালাদ, স্ল, চাটনি বা সালসাতে যোগ করুন অথবা স্মুদিতে ব্লেন্ড করুন। অথবা কিউব করে কেটে পরে ব্যবহারের জন্য ফ্রিজে রাখুন। অথবা স্বাদ বৃদ্ধি করতে জল, চা বা অন্যান্য পানীয়তে যোগ করুন। অথবা ছোট ছোট ডাইস বা কিউব করে কেটে স্টির ফ্রাইয়ে যোগ করতে পারেন বা অলিভ অয়েলে সাউটি করতে পারেন। অথবা সুস্বাদু ডেজার্টের জন্য গ্রীক দইয়ে যোগ করতে পারেন অথবা এটিকে সিফুড ম্যারিনেড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

* গাজরের সবুজ অংশ
আপনি হয়তো মচমচে গাজর খেয়ে এটির শীর্ষস্থ সবুজ অংশ ফেলে দেন। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, গাজরের এ অংশটুকুও খাওয়ার জন্য নিরাপদ এবং এটি যেকোনো ডিশে যোগ করার জন্য একটি ভালো ঔষধি বিকল্প। যদি আপনি গাজরের ওপরের সবুজ অংশের তিক্ত বা কটু স্বাদ পছন্দ না করেন, তাহলে স্যুপ স্টকের জন্য এ সবুজ অংশকে সিদ্ধ করতে পারেন।

পেঁয়াজের খোসা
পেঁয়াজের খোসা রান্নার আগে ফেলে দেওয়ার মতো কোনো জিনিস নয়। পেঁয়াজের খোসায় উচ্চমাত্রায় কুয়েরেক্টিন (ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের একটি ফ্লেভানয়েড-পলিফেনল টাইপ) থাকে- যা রক্তচাপ কমায়, ধমনীতে প্লেক গঠন প্রতিরোধ করে এবং হার্টকে সুস্থ রাখে। হলুদ পেঁয়াজের তুলনায় লাল পেঁয়াজে বেশি কুয়েরেক্টিন থাকে। পপেক বলেন, ‘পুরো পেঁয়াজ স্যূপ, স্টক, চিলি অথবা সসে যোগ করুন, তারপর খাওয়ার পূর্বে খোসা ফেলে দিন।’

Related News