সুস্বাদু জিরাজল দেবে এই ৯টি শারীরিক সমস্যার সমাধান, জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞরা

Written by News Desk

Published on:

স্বাদ আর গন্ধের বাইরেও জিরা জলের অনেক উপকারিতা আছে। জিরা জল পান করলে শরীর ঠাণ্ডা হয় এবং দেহে উৎপন্ন অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমে সতেজতায় ভরে ওঠে। এটি খুব স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে পেটের দূষিত পদার্থ কমাতে সহায়তা করে। জিরা জল জল জিরে নামেও পরিচিত। এটি ভারতের জনপ্রিয় একটি গ্রীষ্মকালীন পানীয় এবং আমাদের দেশেও বেশ পরিচিত। প্রাচীনকাল থেকেই অনেক রোগের জন্য মানুষ জিরা জল খেয়ে আসছেন। এর পুষ্টিগুণও রয়েছে বেশ। তাই জিরাজল কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা ব্যাখ্যা করতে এর কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরছি।

১. অনিদ্রা দূর করেঃ আপনি কি অনিদ্রা সমস্যা রয়েছে? তবে জিরা হতে পারে এর একটি সুন্দর সমাধান। জিরা গুঁড়ো এবং একটি কলা মিশিয়ে নিন। এটি নিয়মিত রাতে খান। এটি ভাল ঘুমাতে সাহায্য করবে। যাদের রাতের বেলা ভাল করে ঘুম আসে না, তারা প্রতিদিন ঘুমনোর আগে ১ চামচ চটকানো কলার সঙ্গে হাফ চামচ জিরা পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন। এই ঘরোয়া ওষুধটি খেলে ঘুমের আর তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কারণ জিরা এবং কলা এক সাথে খেলে মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নামে এক ধরনের রাসায়নিকের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই কেমিকালটি ঘুম আসার ক্ষেত্রে দারুনভাবে সাহায্য করে।

২. ওজন কমায়ঃ জিরা মেদ কমানোর জন্য খুবই কার্যকর। জিরা শরীরের মেটাবলিজম র‍্যাট বাড়িয়ে দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করে সাহায্য করে। মাত্র ১৫ দিন জিরা জল পান করলে পুরো শরীর থেকেই মেদ কমিয়ে ফেলা সম্ভব। ১ গ্লাস জলের মধ্যে ২ চামচ আস্ত জিরা ভিজিয়ে রাখতে হবে সারা রাত। সকালে সে জলটি ছেঁকে তার মধ্যে অল্প পরিমাণে লেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে এ জলটি খেলে দেখতে পাবেন এর যাদুকরী ফলাফল।

৩. হজমে সহায়কঃ হজম ক্ষমতার উন্নতিতে জিরার ভূমিকা অসাধারণ। জিরার থাইমল খাবার হজমে সহায়তা করে। তাই তো যারা হজমের রোগে ভুগছেন, তারা দিনে কম করে ৩ বার জিরা জল পান করলে উপকৃত হবেন। নিয়মিত জিরা জল পান করলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও গর্ভকালীন হজম এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে জুরি নেই জিরা জলের।

৪. শরীরকে হাইড্রেট করেঃ জিরা জলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার মাঝে একটি হচ্ছে গরম কালে এটি দেহকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। জিরা প্রাকৃতিক ভাবে দেহের তাপমাত্রা কমায়। আমাদের প্রতিদিনকার কর্মব্যস্ততার মাঝে আমরা অনেক সময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল খেতে ভুলে যাই এবং তৃষ্ণা পেলে জল খাই। জল কম খাবার ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। সকাল বেলা এক-গ্লাস জিরা জল পান করলে সেটি শরীরের জলের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনবার পাশাপাশি শরীরকে রিহাইড্রেট করে।

৫. ঠান্ডা-জ্বরের প্রকোপ কমায়ঃ জিরা জলে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ যা ঠান্ডা লাগা এবং জ্বরের প্রকোপ কমাতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে বলে জানা যায়। জ্বরের প্রকোপ কমাতে ১ চামচ জিরা এবং অল্প পরিমাণ আদা, ১ গ্লাস জলে মিশিয়ে নিন তারপর জল ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিন। এই ছেঁকে নেওয়া জল দিনে ২-৩বার পান করুন। তাহলেই দেখবেন জ্বর বা ঠান্ডা জণিত কষ্ট কমে যাবে।

৬. বদহজম রোধ করেঃ দিনের শুরুতে এক-গ্লাস জিরা জল খেয়ে নিলে সেটি পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভালো কারণ এটা ডায়রিয়া, সকালবেলার শরীর খারাপ, গা গোলানো এবং ডিসপেপসিয়ার মতন বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকার করে। এ জল এনজাইমের সংশ্লেষণে সাহায্য করে, কারণ এই এনজাইম ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট ও গ্লুকোজকে ভাঙে।

৭. কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করেঃ যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা দিনে দুইবার এই জিরা জল পান করতে পারেন। অথবা ১ চামচ জিরা ভেজে নিয়ে গুঁড়ো করে নিন। তারপর সেই পাউডার ১ গ্লাস জলে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। এক্ষেত্রে, জিরা পাউডার এবং জলের সঙ্গে অল্প করে মধু মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে । এমনটা করলে বেশি উপকার পাবেন বলে আশা করা।

৮. রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায়ঃ জিরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। জিরা জল আয়রন শক্তির মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি মাধ্যমে সেলুলার স্তরে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি করে।

৯. শরীর থেকে টক্সিক উপাদান দূর করেঃ শরীরের থেকে টক্সিক উপাদান পরিষ্কার করতে এই জিরা জলের জুড়ি মেলা ভার। সারা রাত জল ভিজিয়ে রাখুন জিরা। সকালে খালি পেটে খান। এতে সারা দিন শরীর ঝরঝরে থাকে।

বাড়িতেই তৈরি করুন স্বাস্থ্যকর জিরা জল: জিরা রান্নায় মসলা হিসেবে ব্যবহার হলেও এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আর যদি আপনি চান তাহলে বাড়িতে আসা অতিথি বা নিজেদের জন্য বাজার থেকে কেনা কোমল পানীয়ের বদলে পান করতে পারেন মজাদার ও স্বাস্থ্যকর জিরা জল। এটি তৈরি করতে খুবই অল্প উপকরণ লাগে। তৈরিতে সময়ও লাগে কম। আসুন জেনে নিই কীভাবে তৈরি করবেন জিরা জল।

উপকরণ: ভাজা জিরার গুড়ো (প্রতি এক গ্লাসের জন্য হাফ চামচ করে) ২ চামচ, তেঁতুলের কাথ ২ চামচ, কাঁচা মরিচের রস ২ চামচ, আখের গুড় ২ টেবিল চামচ, খাবার লবণ স্বাদমতো, বিট লবণ সামান্য, পুদিনা পাতা কুচি ২ চা চামচ (ইচ্ছা), জল ৪ গ্লাস

প্রণালি: প্রথমে জলে গুড় ভিজিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর গুড় নরম হলে গুলিয়ে নিনl এরপর ভাজা জিরা গুড়ো আর পুদিনা পাতা বাদে বাকি সব উপকরণ জলের সঙ্গে মিশিয়ে ঠাণ্ডা হবার জন্য ফ্রিজে রাখুনl পরিবেশনের আগে ভাজা জিরা গুড়ো ও পুদিনা পাতা মিশিয়ে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন ‘জিরা জল’l

আপনি চাইলে সবকিছু একবারে মিশিয়ে রাখতে পারেন আগে থেকেই কিন্তু এতে করে ভাজা জিরা ও পুদিনা পাতার চনমনে রিফ্রেশিং ফ্লেভার খানিকটা নষ্ট হয়ে যাবেl তাই পরেই মেশালেই ভালো করবেন।bs

Related News