সমীক্ষা: এখন স্ট্রোকের সম্ভাবনা টের পাওয়া যাবে চোখ দেখেই! জেনেনিন পদ্ধতি

চোখ দেখে স্ট্রোকের ঝুঁকি আঁচ করা সম্ভব। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এ তথ্যটি জানা গেছে। তাদের মতে, বিভিন্ন দেশে পঙ্গুত্বের অন্যতম কারণ হলো স্ট্রোক। আর এই স্ট্রোকের সম্ভাবনা আগে থেকে রেটিনা দেখে আঁচ করা যাবে ভবিষ্যতে।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের আই রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মাদ কামরান ইকরামের মতে, রেটিনা মস্তিষ্কের ব্লাড ভ্যাসেলের তথ্য সরবরাহ করে থাকে। রেটিনা থেকে মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহের তথ্য জানার প্রক্রিয়াটি খুব বেশি ব্যয়বহুলও নয়।

সাম্প্রতিক এই গবেষণাটির সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছে, ‘হাইপার টেনশন’ নামের একটি জার্নালে। পুরো বিশ্বেই স্ট্রোকের একটি অন্যতম কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের ফলে কখন স্ট্রোক হবে সেটা আঁচ করা ডাক্তারদের জন্য এখনো অসম্ভবই রয়ে গিয়েছে।

গবেষণা দলটি প্রায় ১৩ বছর ধরে উচ্চরক্তচাপ জনিত কারণে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া ২ হাজার ৯০৭ জন রোগীর উপর গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী রোগীদের এর আগে কখোনো স্ট্রোক হয়নি। প্রত্যেক রোগীর রেটিনা বেজ লাইনের ছবি তুলে রাখা হয়েছিলো।

রেটিনা হলো চক্ষু গোলকের পেছনের আলোক সংবেদনশীল কোষের একটি স্তর। হাইপার টেনশনের কারণে রেটিনার ব্লাড ভেসেলের ক্ষতি হয়। একে বলা হয় হাইপারটেন্সিভ রেটিনোপ্যাথি। রেটিনার ছবি দেখে হাইপারটেন্সিভ রেটিনোপ্যাথিকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে- কম, মাঝারী এবং বেশি।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে ১৪৬ জনের রক্ত জমাট বাধা জনিত কারণে স্ট্রোক হয়েছিলো। অন্য আরো ১৫ জনের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে স্ট্রোক হয়েছিলো।

বিজ্ঞানীরা স্ট্রোকের জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করেছেন। যেমন- বয়স, লিঙ্গ, কোলেস্টেরলের মাত্রা, ডায়াবেটিস, শরীরের ওজন, ধূমপান এবং রক্তচাপ ইত্যাদি। গবেষক দলটি গবেষণা করে দেখেন যে হাইপারটেন্সিভ রেটিনোপ্যাথি যাদের কম তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়। আর যাদের মাঝারি ও বেশি তাদের এই ঝুকি ১৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। অর্থাত্‍, রেটিনার অবস্থা দেখেই স্ট্রোকের ঝুঁকি কতটুকু সেটা অনুমান করা যায়।

যারা নিয়মিত রক্তচাপের অসুধ সেবন করে তা নিয়ন্ত্রণ করছে তাদেরও রক্ত জমাট বেধে স্ট্রোকের ঝুঁকি হাইপারটেন্সিভ রেটিনোপ্যাথির থেকে অনুমান করা যায়। যদি হাইপারটেন্সিভ রেটিনোপ্যাথি কম থাকে সেক্ষেত্রে তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৯৬ শতাংশ বেড়ে যায়। মাঝারী বা বেশি থাকলে এই ঝুঁকি বেড়ে ১৯৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

ডাক্তার ইকরামের মতে, এটি একটি প্রাথমিক গবেষণা। এই গবেষণার প্রেক্ষাপটে আরো অনেক মেডিকেল রিসার্চ এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। কারণ এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি আগে থেকেই অনুমান করা সহজ হয়ে যাবে।bs

News Desk

Recent Posts

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

হাঁপানি, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও অন্যান্য শ্বাসনালির সংক্রমণজনিত রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে নেবুলাইজার ব্যবহার করা হয়। রোগী যখন ইনহেলারের…

15 hours ago

বারবার পানি পিপাসা লাগা কোনো রোগের লক্ষণ নয় তো?

গরমে অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। ফলে বারবার পানি পিপাসা লাগা স্বাভাবিক। আর এ সময় প্রচুর পরিমাণ…

22 hours ago

মসলা চা পানে মিলবে যেসব উপকার

দিনে বেশ কয়েকবার চায়ের কাপে চুমুক না দিলে অনেকেরই দিন কাটে না। বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যে মসলা চায়ের স্বাদও যেমন…

22 hours ago

গরমে বাড়তে পারে কিডনির সমস্যা, কীভাবে সতর্ক থাকবেন?

হঠাৎ করেই কিডনির সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতার কারণে হঠাৎই বিকল হতে পারে কিডনি। মূলত তাপমাত্রা ও…

23 hours ago

খাবার কেনার আগে প্যাকেটের কোন লেখা অবশ্যই পড়বেন?

কর্মব্যস্ত জীবনে কমবেশি সবাই এখন রেডিমেড খাবারের উপর নির্ভরশীল। এ কারণে বেশিরভাগ খাবারই এখন প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। প্রায়…

2 days ago

বিশ্বব্যাপী যে কারণে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

গরমে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে বাড়ে মৃতের সংখ্যাও। আজ ১৬ মে জাতীয় ডেঙ্গু দিবস। ডেঙ্গু…

2 days ago