ডায়াবিটিস রোগীরা অবশ্যই পায়ের যত্ন নিন, নাহলে হতে পারে বিপদ! জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞরা

Written by News Desk

Published on:

নভেল করোনা ভাইরাসের দৌলতে ‘কো-মর্বিডিটি’ শব্দটা এখন সকলের কাছেই খুব চেনা। কারণ, কোনও ব্যক্তির যদি কো-মর্বিডিটি থাকে এবং সেই ব্যক্তি যদি করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হন, তবে তাঁকে বাঁচানো খুবই কঠিন হয়ে ওঠে। যদিও এখন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার হার অনেকটাই বেশি, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে হার্টের অসুখ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, পূর্বে কোনও বড় অপারেশন ইত্যাদি কো-মর্বিডিটি যুক্ত লোকেদের সেরে ওঠার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। কখনও কখনও মৃত্যুও ঘটে রোগীর। আবার এই সমস্ত কো-মর্বিডিটির মধ্যে সবথেকে বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (IDF) এর সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৬৩ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় ৮৮ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই ৮৮ মিলিয়নের মধ্যে কেবলমাত্র ভারতবর্ষে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭৭ মিলিয়ন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৯%। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা হবে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩৬৬ মিলিয়ন।

ক্যান্সারের মতো দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে এই রোগ। ডায়াবেটিস হলে যেহেতু রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, তাই একে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে একে একে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে হার্ট, চোখ, নার্ভসহ নানা অঙ্গ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা পায়ের সমস্যায় বেশি ভোগেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে একে ‘ডায়াবেটিক ফুট’ বলে। এই রোগের ফলে দেখা দেয়, পায়ের ব্যাথা, পায়ের পাতা ভারি হয়ে যাওয়া, পা ফেলতে সমস্যা, পায়ের পাতায় নানারকম চর্মরোগ, পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফেটে যাওয়া। এর থেকেই তৈরি হয় ক্ষত, যা সারতে বহুদিন সময় লাগে। ২৫ শতাংশ মধুমেহতে ভোগা রোগীর মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। ডায়াবেটিক ফুট সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ জনেরও বেশি মানুষের পায়ের সমস্যা দেখা দেয়। এদের পায়ে আলসার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে পায়ের এই সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণ কেবলমাত্র পায়ের প্রতি অযত্ন। কারণ আমরা কেউই নিজের পা-কে নিয়ে ভাবি না। কিন্তু যেকোনও সংক্রমণের সূত্রপাত হয় পায়ের পাতা থেকেই। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তবে চলুন দেখে নিন ডায়াবেটিস রোগীরা পায়ের যত্ন নিতে কী কী করবে

কী কী করবেন
১) ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য, বিশেষ করে সিগারেট এড়িয়ে চলুন।

২) প্রতিদিন ভালো করে পায়ের পাতা পর্যবেক্ষণ করুন। কোথাও কোনও ক্ষত বা ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

৩) ডায়াবেটিস রোগী হলে, যখনই চিকিৎসকের কাছে চেকআপের জন্য যাবেন তখন অবশ্যই পায়ের পরীক্ষা করান।

৪) পা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এক্ষেত্রে মাইল্ড সোপ দিয়ে প্রতিদিন ভালো করে পায়ের পাতা পরিষ্কার করুন।

নিমেষেই গায়েব হবে মাথা ব্যথা! খান এই খাবারগুলি

৫) বাড়ি ফিরে গরম জলে বাথ সল্ট দিয়ে কিছুক্ষণ পা চুবিয়ে রাখুন।

৬) ভেজা অবস্থায় জুতো ও মোজা পরবেন না।

৭) মোজা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুতি বা উলের মোজা পরুন।

৮) সস্তার কোনও জুতো না পরে একটু ভালো, নরম ও আরামদায়ক জুতো পরবেন। খুব চাপা জুতো ব্যবহার করবেন না।

৯) নখ কাটার সময় খেয়াল রাখুন যাতে নখের কোণাগুলো বেশি কাটা না হয়।

১০) রাতে শুতে যাওয়ার আগে ভালো করে পা ধুয়ে ফুট ম্যাসাজ করুন, এতে রক্ত চলাচল ভালো হবে।

১১) পায়ের শুক্ষ চামড়া নিজে নিজে হাত দিয়ে টানবেন না।

১২) ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে পায়ে অলিভ অয়েল, ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।

১৩) ঘরের ভেতরে ও বাইরে খালি পায়ে হাঁটবেন না।

১৪) যাদের পায়ে ক্ষত বা ঘা আছে তাদের নিয়মিত ড্রেসিং করা উচিৎ, অন্যথায় ইনফেকশন বেড়ে যেতে পারে।

১৫) ভেরিকোস ভেইন রোগীরা রাতে শোবার সময় পায়ের নীচে বালিশ বা অন্য কিছু দিয়ে শোবেন, যাতে পা শরীরের তুলনায় সামান্য উঁচুতে থাকে। এই রোগীরা দীর্ঘ সময় একটানা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না, এতে পায়ে রস জমে পা ফুলে যেতে পারে।bs

Related News