যেসব রোগ নিয়ে লজ্জা ও সংকোচ রয়েছে পুরুষের! বিস্তারিত জানতে বিষয়টি পড়ুন

Written by News Desk

Published on:

নারীরা প্রায়শই লজ্জা ও সংকোচের কারণে বেশ কিছু রোগ সম্পর্কে পরিবারের কাছে তথ্য গোপন করেন। তবে শুধু নারীরাই নয়, বিশ্বব্যাপী পুরুষেরাও অনেক সময় তাদের নানা অসুখ সম্পর্কে লজ্জাবোধ করেন এবং তথ্য গোপন করেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, পুরুষরা যেসব রোগের তথ্য গোপন করেন তার বেশিরভাগই প্রজননতন্ত্রের নানা অসুখ। যেমন অণ্ডকোষের নানাবিধ সমস্যা, ইরেক্টাইল ডিসফাঙ্কশন, প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন, ফিস্টুলা, হার্নিয়া, গাইনোকোমেশিয়া বা পুরুষের স্তন বৃদ্ধি এর মধ্যে কয়েকটি।

অণ্ডকোষের নানাবিধ সমস্যা

ইউরোলজিস্ট ডা. অণ্ডকোষের বেশ কয়েকটি অসুখ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। তিনি বলছেন, হাইড্রোসিল, যাতে অণ্ডকোষের বাইরের দিকে জল জমে, অণ্ডকোষ ফুলে যায়। প্রদাহ অথবা আঘাতের কারণে এটি হতে পারে। অণ্ডকোষের দুই পাশে, অথবা একপাশেও এটি হতে পারে।

তিনি বলছেন, অণ্ডকোষের বেশিরভাগ সমস্যায় অঙ্গটি ফুলে যাওয়া একটি লক্ষণ। বেশিরভাগ সমস্যায় ব্যথা হতে পারে।

এর প্রতিকার হিসেবে ডা. বলছেন, অণ্ডকোষের সমস্যা নিয়ে তখন অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে যখন খেয়াল করবেন যে অণ্ডকোষের অনুভূতি চলে গেছে। অণ্ডকোষে হাত দিলে, এমনকি উরুতেও একটু ঘষা লাগলে পুরুষদের এক ধরনের অনুভূতি হয়। সেই অনুভূতি যখন বোধ হবে না এবং আস্তে আস্তে অণ্ডকোষ ফুলে যাচ্ছে, এই দুটো সমস্যা খেয়াল করলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এর থেকে ক্যানসার হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গাইনোকোমেশিয়া

এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. বলছেন, গাইনোকোমেশিয়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে সৃষ্ট একটি অসুখ। সাধারণত কিশোর বয়সে ছেলেদের স্তন সামান্য বড় হয়ে পরে আবার কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যায়।

‘সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে গাইনোকোমেশিয়া হয়। উভয়-পাশে বা একপাশে এটি হতে পারে। সাধারণত এতে ব্যথা থাকে। বেশিরভাগ সময়ে এটা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। যদি এটা তিন সেন্টিমিটারের বেশি বড় হয়, আমরা হরমোন চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এটি ক্যানসার বা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা তৈরি করে না। তবে ছয় মাসের বেশি সময় থাকলে এটি আর ভালো হয় না। বয়স বেড়ে যাওয়ার পর যদি কেউ অস্বস্তি বোধ করেন তাহলে খুব সহজ অস্ত্রোপচার করে এটি অপসারণ করা যায়।’

ইরেক্টাইল ডিসফাংশন ও প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন

যে সমস্যায় পুরুষরা সবচেয়ে বেশি সংকোচ বোধ করেন তা হল যৌন মিলনের সময় পুরুষাঙ্গ শক্ত না হওয়া যাকে বলে ইরেক্টাইল ডিসফাঙ্কশন। সঙ্গম শুরু করার পর খুব দ্রুত বীর্যপাত হওয়া এটিকে বলা হয় প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন।

‘বেশিরভাগ পুরুষ জীবনে কোন না কোন সময় এটির মুখোমুখি হয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের কোন শারীরিক সমস্যা রয়েছে। অনেক সময় ক্লান্তি, উদ্বেগের কারণে সাময়িক সমস্যা হতে পারে। তবে কারো যদি নিয়মিত এই সমস্যা হয় তাহলে তার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।’

যৌনাঙ্গের রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, হরমোনজনিত সমস্যা, কোন ঔষধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এই সমস্যার কারণ হতে পারে। ডা. বলছেন, এই সমস্যা দুটি বেশিরভাগ সময় চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়।

শারীরিক কষ্ট ও নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকা স্বত্বেও পুরুষেরা কেন তাদের কিছু অসুখের কথা গোপন করছেন এমন এমন প্রশ্নের জবাবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বলছেন, নারী ও পুরুষের অসুখ নিয়ে লজ্জার কারণ দুই রকম এবং বিষয়টি সামাজিকভাবে শিক্ষার একটি ফল।

পুরুষেরা দুর্বল হবে না, তার যৌনতা তার শক্তির উৎস সামাজিকভাবে পুরুষদের এমন শিক্ষা দেয়ার কারণে তারা এসব অসুখকে তারা পুরুষত্বের উপরে আঘাত মনে করে।

‘অনেক সময় দেখা যায় তারা ভাবে শেয়ার করলে বুলিং করবে হাসাহাসি করবে, পুরুষত্বে সমস্যা আছে বলে লেবেল করবে। পুরুষরা ভাবে যে সেক্সুয়াল বিষয় তাদের শক্তির উৎস। এই বিষয়ে সামর্থবান না হতে পারলে তাদের পুরুষালী ধারনা ও ইগো আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমনকি স্ত্রীরাও খোঁটা দিয়ে থাকে এসব কারণে তারা লজ্জা বা সংকোচ বোধ করে।’

পুরুষদের এসব সমস্যার সমাধানে সামাজিকভাবেই তার শিক্ষার পরিবর্তন দরকার। তবে তিনি মনে করেন তার সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন তার স্ত্রী ও সঙ্গী। যাদের পক্ষে সমস্যা আঁচ করা অন্যদের চেয়ে সহজ।

তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন যে দোষারোপ ও বিদ্রূপ না করে সঙ্গী যদি বরং তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে মানসিক সমর্থন জোগায় সেটি হবে অসুখটি সারিয়ে তোলার অনেক বড় একটি ধাপ।

Related News