অ্যালার্জির সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন এটির কারণ, উপসর্গ ও প্রতিরোধের সহজ উপায় দেখেনিন আপনিও

অ্যালার্জির সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। অনেকের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে। বর্ষা মৌসুমে অ্যালার্জির সমস্যা আরও বেড়ে যায়। অ্যালার্জি হচ্ছে ইমিউন সিস্টেমের একটা দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা। যা পরিবেশের কোনো অ্যালার্জেনের কারণে সৃষ্টি হয়।

এলার্জেন কী?

যদি কোনো বস্তু বা উপাদান মানুষের শরীরে হাইপারসেনসিটিভ প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেসব বস্ত বা উপাদনসমূহ সেসব মানুষের জন্য অ্যালার্জেন। এর ফলে কোনো অ্যালার্জেন শরীরের সংস্পর্শে এলে অ্যালার্জির বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যাকে বলা হয় অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন বলে।

আবার এটাকে হাইপেরসেন্সিটিভিটি রিয়েকশনও বলা হয়। হাইপারসেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশনকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। কোনো অ্যালার্জেন দ্বারা শরীরের যেসব হাইপারসেনসিটিভিটি রিয়েকশন দেখা দেয়, তাকে টাইপ ওয়ান হাইপারসেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশন বলা হয়। এলার্জি হিসেবে স্বাভাবিকভাবে আমরা যা বুঝে থাকি, তা মূলত টাইপ ওয়ান হাইপারসেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশনকে বোঝায়।

অ্যালার্জিক সাধারণ প্রতিক্রিয়াসমূহ

অনেক সময় দেখা যায়, বৃষ্টিতে ভিজলে, পুকুরে স্নান করলে, ধুলোবালিতে গেলে, একটু ঠান্ডা লাগলে বা কোনো ঠান্ডা পানীয় পান করলে কারো কারো সর্দি কাশি শুরু হয়। আবার একই কাজগুলো অন্যরা করলে তাদের কিছুই হয় না। এই স্বাভাবিক বস্তুগুলো যাদের জন্য অনেকের অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। যাকে বলা হয় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেন সমূহ আক্রান্ত হয় এবং হিস্টামিনের প্রভাবে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ মিউকাস তৈরি হয়। শ্বাসযন্ত্রে লুউকোট্রিন নামক এক প্রকার পদার্থ তৈরি হয়, যা কাশি তৈরিতে শ্বাসযন্ত্রকে উত্তেজিত করে।

নাক দিয়ে জল পড়া তথা সর্দি কাশি, সঙ্গে হালকা গায়ে গায়ে জ্বর থাকা এসব অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের কারণে হয়ে থাকে। অনেক সময় রাইনো ভাইরাস অ্যালার্জি হিসেবে কাজ করে।

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস বা চোখের অ্যালার্জি

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস মূলত চোখের একটি অ্যালার্জিজনিত রোগ। এ সময় চোখ লাল হয়ে থাকে, চোখ থেকে জল পড়ে ও চোখ ব্যথা করে। ৬-১২ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা দেয়। যাদের শরীর কোনো নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়; তাদের অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতো অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।

কিছু বাচ্চাদের দেখা যায়, পুকুরে স্নান করলে বা খেলাধুলা করলে কিংবা বাহিরে চলাফেরা করলে তাদের চোখ লাল হয়ে যায়, চোখ থেকে জল পড়ে চোখ চুলকায় এবং ব্যথা করে। এগুলো মূলত অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস এর কারণে হয়ে থাকে

ফুড অ্যালার্জি

অনেকের মাংস, বেগুন, চিংড়ি মাছে বা বাইরের খাবার খেলে শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। বমি বমি ভাব হয়। এগুলো মূলত অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে। তাদের শরীর ওইসব খাবারের জন্য উপযোগী নয়।

কারণ এসব খাবার তাদের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। তাই যেসব খাবার খেলে শরীরে চুলকানি বা র‌্যাশ দেখা দেবে; ওইসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

ড্রাগ অ্যালার্জি

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা কোনো অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে শরীর চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে যায়। তাহলে বুঝে নিতে হবে ওই অ্যান্টি-বায়োটিকের প্রতিও তার হাইপারসেনসিটিভিটি আছে। আর ওই অ্যান্টি-বায়োটিক তার জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করছে।

যদি কারো এমন হয়ে থাকে; তাহলে সে ওই অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তন করে অন্য ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। কোনো মেডিসিন ব্যবহারের ফলে যদি কোন হাইপেরসেন্সিটিভিটি রিয়েকশন শুরু হয়; তবে ওই অ্যালার্জিকে ড্রাগ অ্যালার্জি বলা হয়ে থাকে

এনাফাইলেক্টিক রিঅ্যাকশন

এনাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন হচ্ছে এক প্রকার ইমারজেন্সি অ্যালার্জিক কন্ডিশন। ধরুন, কারো শরীরে একটি কীটপতঙ্গের সংস্পর্শ লেগেছে অথবা কোনো ছোট মশা কিংবা অন্যান্য কীটপতঙ্গ কামড় দিয়েছে এর কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল ত্বকে লাল চাকা হয়ে গেছে।

এর ফলে শরীর প্রচণ্ড চুলকায়। সারা শরীর ব্যথা করে। এই অবস্থাগুলোকে এনাফাইলেক্ট্রিক রিঅ্যাকশন বলে। যাদের শরীর হাইপারসেনসিটিভ; তাদের ক্ষেত্রে মশার কামড়ে কিংবা ছারপোকার কামড়ে এনাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে।

এটপিক অ্যাকজিমাও এক প্রকার অ্যালার্জি স্কিন কন্ডিশন। যা অ্যালার্জিক রিয়েকশনের কারণে হয়ে থাকে।

অ্যালার্জির চিকিৎসা

প্রথমে জেনে রাখা ভালো, অ্যালার্জির স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। কারণ এর সম্পর্ক ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে। তাই যাদের যেসব বস্তু বা খাবারে অ্যালার্জি আছে, তা পরিহার করে চলাই ভালো। আর অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারণের কারণে যাদের অ্যালার্জিক উপসর্গগুলো দেখা দেয়; তারা মেডিসিন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।

মেডিকেশন

অ্যালার্জিতে যেহেতু হিস্টামিন প্রচুর রিলিজ হয় তাই অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে হিস্টামিন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। আর সেজন্য অ্যালার্জিক কন্ডিশনে অ্যান্টি-হিস্টামিন হচ্ছে অ্যালার্জির মূল চিকিৎসা।

তবে অবশ্যই অ্যালার্জির চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতিত কোনো চিকিৎসা নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। যে কোনো শারীরিক সমস্যায় নিকটস্থ চিকিৎসক কিংবা সরাসরি হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন।

News Desk

Recent Posts

ডাবের পানি নাকি স্যালাইন গরমে কোনটি বেশি উপকারী?

তীব্র গরমে দিনেরবেলা বাইরে বের হলেই শরীর দিয়ে ঘামের স্রোত বেয়ে চলে সবারই, ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে শুরু…

4 hours ago

সানস্ক্রিন মাখলেই মুখ ঘামে? যা করবেন

তাপমাত্রার পারদ ৪০ এর নিচে নামছেই না। কাঠফাটা রোদে বেরোলে ত্বক পুড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে বের হওয়া…

5 hours ago

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে শুধু ভালোবাসাই যথেষ্ট?

প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ভালোবাসার মাধ্যমে। এর থেকেই দুজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ একে অপরের সঙ্গে আজীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন।…

6 hours ago

ত্বকের ফাটা দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

শরীরের ফাটা দাগ বা স্ট্রেচ মার্ক ত্বকের সৌন্দর্য অনেকটাই কমিয়ে দেয়। এই দাগ একবার পড়লে তা আর সহজে দূর হয়…

8 hours ago

ত্বকের যে রোগ অবহেলা করলেই বিপদ হতে পারে

ত্বকে নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন কারণে এসব চর্মরোগ হয়ে থাকে। তবে অনেকেই প্রথমদিকে এসব রোগকে উপেক্ষা করেন।…

8 hours ago

কিডনি ও লিভার সুরক্ষিত রাখবে যে পানীয়

‘ডিটক্স ড্রিংকস’ এর উপকারিতা অনেক। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এ পানীয়। সঙ্গে শরীরের সব ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে ক্লিঞ্জার…

9 hours ago