বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরা কি করোনার টিকা নিতে পারবেন? কি জানাচ্ছে চিকিৎসকেরা

Written by News Desk

Published on:

করোনা মহামারি থেকে মুক্তির আশা দেখাচ্ছে টিকা। প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া নিয়ে জটিলতা না থাকলেও গর্ভবতী বা স্তন্যপান করানো মায়েরা টিকা নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে নানা মত রয়েছে।

করোনার টিকা গর্ভবতী বা স্তন্যপান করানো নারী ও শিশুর ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো গবেষণা বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নেই। চিকিৎসা সংক্রান্ত নৈতিকতা বিবেচনায় গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী নারীদের প্রথম দিকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর অন্যতম কারণ হলো, শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা। টিকায় গর্ভবতী নারীর ক্ষতি হয় কিনা সে আশঙ্কাও ছিল। যে কারণে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক নীতিমালা এখনো প্রণয়ন করা হয়নি।

চলতি বছরের মে মাসে কানাডার ন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কমিটি অন ইমিউনাইজেশন (এনএসিআই) গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী নারীদের করোনার টিকা নিতে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু সংস্থাটি নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়নি। এনএসিআই’র বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার টিকার উপকারিতা গর্ভবতী নারী ও গর্ভস্থ শিশুর ঝুঁকি অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ টিকা গ্রহণে যে উপকারিতা পাওয়া যাবে তা ঝুঁকির চেয়ে বেশি হতে পারে।

এনএসিআই সাম্প্রতিক এক গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে এ পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের তত্ত্বাবধানে করা গবেষণা বলছে, এমআরএনএ টিকা গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ। টিকা নিলে গর্ভবতী নারীদের থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া হয়। এর চিকিৎসা গর্ভবতী নয় এমন নারীদের তুলনায় গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বেশি জটিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা থেকে ধারণা পাওয়া গেছে, এমআরএনএ টিকা থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়।

তবে এসব নারী ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য এমআরএনএ টিকা আসলেই নিরাপদ কিনা নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার অপেক্ষায় থাকতে হবে। আশার কথা হলো, এ বিষয়ে কিছু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ এবং ফাইজার/বায়োএনটেক গর্ভাবস্থায় এমআরএনএ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করছে।

তাহলে কি গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদায়ী নারী করোনার টিকা নেবেন না? আশঙ্কা অনেকাংশে দূর করতে একটি জরিপ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি অনলাইনভিত্তিক জরিপে ১ লাখ ৩০ হাজার গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী নারী জানান, তারা করোনার টিকা নিয়ে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেননি। তারা ফাইজার এবং মডার্নার এমআরএনএ টিকা নিয়েছেন। এতো গেল মায়েদের কথা, সাম্প্রতিক গবেষণাও বলছে টিকা নেয়ার পর অর্জিত অ্যান্টিবডি গর্ভফুল অতিক্রম করে গর্ভস্থ বাচ্চার কাছে পৌঁছতে পারে এবং বুকের দুধের সঙ্গে শিশুর শরীরেও যেতে পারে। ফলে এ ধরনের শিশুরা সুরক্ষা পেতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ডা. এস এম মোস্তফা জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিস্তারিত গবেষণা না থাকার কারণে আমাদের দেশে গর্ভবতী নারী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের টিকা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে অনেক দেশে ঝুঁকিতে থাকা এসব নারীদের করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকার এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে পারে।’

Related News