সাবধান! আয়না ভাঙলে হতে পারে বিপদ, এটা কী সত্যি নাকি ভুল, জেনেনিন বিস্তারিত

আদিকাল থেকেই মানুষের মধ্যে বিভিন্ন কুসংস্কার বাস করছে। ইতিহাসের গলি ধরে অনেক কুসংস্কারের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায়। যেমন- ২ হাজার থেকে ৩ হাজার বছরের পুরনো একটি কুসংস্কার হচ্ছে, বাড়িতে কোনো আয়না ভাঙলে পরের সাত বছর ধরে দুঃখ-দুর্দশায় ভুগতে হয়। আদিকাল থেকেই মানুষ এই কুসংস্কার নিয়ে বেঁচে আছেন।

প্রাচীন গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্যে বিশ্বাস করা হতো, প্রতিবিম্বিত চিত্র রহস্যময় শক্তির আধার। আয়না ভাঙার কুসংস্কারটি সম্ভবত ওই যুগ থেকেই জনপ্রিয় হতে শুরু করে।

ঐতিহাসিক উৎস

গ্রীকরা বিশ্বাস করত জলে পড়া প্রতিবিম্বে মানুষের আত্মার স্বরূপ প্রকাশ পায়। তবে পালিশ করা ধাতব পৃষ্ঠ থেকে প্রথম আয়না তৈরি করতে শেখেন রোমান কারিগররা। রোমানরা বিশ্বাস করত, তাদের দেবতারা এসব আয়নার ভেতর দিয়ে মানুষের আত্মা দেখেন। আয়নার কোনো ক্ষতি করাকে তারা ভীষণ অসম্মানজনক মনে করতেন। রোমানদের বিশ্বাস ছিল, কেউ আয়নার ক্ষতি করলে দেবতারা তার ওপর দুর্ভাগ্যের বৃষ্টি বর্ষণ করেন।

তৃতীয় শতাব্দীর দিকে কাচ থেকে আয়না তৈরি শুরু হয়। তখন কাচের আয়না ভেঙে যাওয়া নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। তবে রোমানদের বিশ্বাস ছিল যে সাত বছর পর দুর্ভাগ্য কেটে যায়।

সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক উৎস

মানবমন অনবরত অচেতনভাবে প্যাটার্ন খুঁজতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তা পার হওয়ার সময় পরিচিত ট্র্যাফিক প্যাটার্ন দেখে আমরা দুর্ঘটনা থেকে নিজেদের বাঁচাই।

তবে আমাদের মস্তিস্ক কখনো কখনো অবাস্তব কিছু প্যাটার্নও গঠন করে। ধরুন, কোনো বন্ধু আপনাকে একটা সৌভাগ্য আনার মুদ্রা দিল। আপনি এসবে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু পরের কয়েকটা দিন আপনার ভালো গেলো। ব্যাপারটা স্রেফ কাকতালীয় হলেও আপনার মস্তিষ্ক নতুন একটা প্যাটার্ন তৈরি করে নিল। আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করলেন যে বন্ধুর দেওয়া মুদ্রার জন্য আপনার কপাল ভালো যাচ্ছে। এভাবেই জন্ম হলো একটি কুসংস্কারের।

সামাজিকীকরণের সময় বাবা-মা বা অন্য বিশ্বস্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু কুসংস্কার পাই। এভাবে কিছু কুসংস্কার প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মুখে মুখে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমের সাহায্যে পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকে। যত বেশি মানুষ এসব কুসংস্কারকে সমর্থন দেয়, এগুলো তত বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্থায়িত্ব লাভ করে।

আয়না ভাঙা উপকারী নাকি ক্ষতিকর

কুসংস্কারের কারণে আমরা যদি আয়না নাড়াচাড়া করার সময় সাবধান থাকি, তাতে কোনো ক্ষতি নেই। মোটা দাগে কঠিন পরিস্থিতিতে কুসংস্কার আমাদের মানসিক চাপ কমিয়ে কাজের মান বাড়াতে পারে। কুসংস্কার কখনো কখনো বেশ মজাদারও হয়। এগুলো নিয়ে দারুণ আড্ডা দেওয়া যায়, ফলে পারস্পরিক বন্ধন বাড়ে।

অবশ্য মুদ্রার উল্টো পিঠও আছে। কুসংস্কারের জন্য অনেকসময় আমরা মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক থাকি। কুসংস্কার এমন কিছু মিথ্যা বিশ্বাস, যা প্রায়ই আমাদের মনে উদ্বেগ ও অপরাধবোধ সৃষ্টি করে। অনেক সময় কোনো ঘটনার জন্য কুসংস্কারের বশে আমরা অযথাই নিজেদের দায়ী করি, কিংবা প্রত্যাশিত ফললাভের জন্য ভুল পথ ধরি। তখন কুসংস্কার আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।

News Desk

Recent Posts

কান পরিষ্কার করতে গিয়ে এই ভুল করছেন না তো?

কান শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ। তবুও বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই অঙ্গটি নিয়ে উদাসীনতা দেখা যায়। গোসল করতে গিয়ে কানে পানি ঢুকে…

8 hours ago

মায়ের শরীরে যে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত তাকে ডাক্তার দেখাবেন

বয়স বাড়তেই বাবা-মা সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর সন্তানেরও উচিত এ সময় বাবা-মায়ের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হওয়া। বিশেষ করে…

11 hours ago

প্রতিদিন গোসলে সাবান ব্যবহার কী ভালো?

গোসলের সময় কমবেশি সবাই সাবান ব্যবহার করেন। যাতে ত্বকে জমে থাকা ময়লা বা জীবাণু ধুয়ে যায়। তবে প্রতিদিন ত্বকে সাবান…

15 hours ago

ফুসফুস ভালো রাখতে কী খাবেন?

মানব শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ হলো ফুসফুস। এর সাহায্যেই শরীরে পৌঁছায় অক্সিজেন। আর এই অঙ্গের সাহায্যেই অক্সিজেন মিশে যায় রক্তে।…

1 day ago

ত্বকে অতিরিক্ত আঁচিল হওয়া কঠিন রোগের লক্ষণ নয় তো?

অনেকের ত্বকেই অতিরিক্ত আঁচিল দেখা দেয়। নারী-পুরুষ উভয়েরই আঁচিল হওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁচিল হওয়ার…

1 day ago

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ কী? এর লক্ষণই বা কী কী?

ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় বর্তমানে অনেকেই ভুগছেন। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা আবার দু’ভাবে বিভক্ত- অ্যালোহলিক ও নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। অ্যালকোহলিক ফ্যাটি…

3 days ago