হেঁচকি ওঠার আসল রহস্য কি এবং সেটা কমাতে যা করবেন, জেনেনিন অবশ্যই

হেঁচকির প্রকোপ খুব সাধারণ একটি বিষয়। খাবার খাওয়ার সময়, গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজের মধ্যে এমনকি কোন কারণ ছাড়াই যখন তখন মানুষের হেঁচকি শুরু হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিপাকতন্ত্রের গোলমালের কারণেই মানুষের হেঁচকি আসে।

বিজ্ঞানীরা শত শত বছর ধরে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিহীন এই শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যার সুনির্দিষ্ট কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। হেঁচকির সময় শ্বাসনালীতে সামান্য খিঁচুনির মত হয়, যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত বাতাস প্রবেশ করে। তখন ভোকাল কর্ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে ‘হিক’ শব্দ তৈরি হয়।

ফুসফুসের নীচের পাতলা মাংসপেশীর স্তর, যেটিকে ডায়াফ্রাম বলে, এটির হঠাৎ সংকোচনের ফলে হেঁচকি তৈরি হয়।

হেঁচকি ওঠার কারণ
হেঁচকি ওঠার একশো’র বেশি মেডিক্যাল কারণ থাকতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো খুবই সামান্য কারণেই হয়ে থাকে। চিকিৎসকদের মতে কি কি কারণে হেঁচকি হতে পারে তা এবার জেনে নেওয়া যাক-

* হেঁচকির সবচেয়ে সাধারণ কারণ দ্রুত খাবার গ্রহণ করা। দ্রুত খাওয়ার কারণে খাবারের সঙ্গে সঙ্গে পেটের ভেতর বাতাস প্রবেশ করার ফলে ‘ভ্যাগাস’ নার্ভের কার্যকলাপ বাধাগ্রস্ত হয়, যার কারণে হেঁচকি তৈরি হয়।

* চেতনানাশক, উত্তেজনাবর্ধক, পার্কিনসন্স রোগ বা কেমোথেরাপির বিভিন্ন ধরনের ওষুধ নেয়ার ফলেও হেঁচকি তৈরি হতে পারে। এছাড়া কিছু অসুখের ক্ষেত্রেও মানুষের হেঁচকি হতে পারে।

* কিডনি ফেল করলে, স্ট্রোকের ক্ষেত্রে, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রেও অনেকের হেঁচকি তৈরি হতে পারে।

* হাসি বা কাশির মধ্যে অতিরিক্ত মদ্যপান, অতিদ্রুত খাবার গ্রহণ করা বা ঝাঁঝসহ পানীয় বেশি পরিমাণে খেলে হেঁচকি শুরু হতে পারে। তবে কোনো ধরনের কারণ ছাড়াও হেঁচকি আসাটা একেবারেই অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

হেঁচকি থামানোর উপায়
ঘরোয়াভাবে হেঁচকি থামানোর প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে মূলত দুইটি মূলনীতি অনুসরণ করা হয়। একটি হলো রক্তে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে শ্বাসনালীতে খিঁচুনি বন্ধ করা। আরেকটি হলো শ্বাসপ্রশ্বাস ও গলধকরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা ‘ভ্যাগাস’ স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করা।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী কয়েকটি পদ্ধতিতে হেঁচকি থামানো যায়। যেমন-

* কাগজের ব্যাগে নিঃশ্বাস ফেলা (ব্যাগ মাথা দিয়ে ঢুকাবেন না)
* দুই হাঁটু বুক পর্যন্ত টেনে ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া
* বরফ ঠাণ্ডা জল খাওয়া
* কিছু দানাদার চিনি খাওয়া
* লেবুতে কামড় দেয়া বা একটু ভিনেগারের স্বাদ নেয়া
* স্বল্প সময়ের জন্য দম বন্ধ করে রাখা

হেঁচকি সাধারণত আপনা থেকেই ভাল হয়ে যায়, তবে যদি অতি দীর্ঘসময় ধরে হেঁচকি উঠতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। হেঁচকির তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।

News Desk

Recent Posts

শব্দদূষণে বাড়ে হৃদরোগ-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি, বলছে গবেষণা

গাড়ির আওয়াজে অনেকেরই বুক ধড়ফড় করতে শুরু করে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, তীব্র যানজট ও সেই কারণে সৃষ্ট শব্দদূষণের সঙ্গে…

7 hours ago

হার্টের ধমনী ব্লক হয়েছে কি না জানাবে ৪ লক্ষণ

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত হলো হৃৎপিণ্ড। এটি মানুষের জীবদ্দশায় কখনো বিশ্রাম নেয় না। দিনে অন্তত এক লাখ বার…

12 hours ago

গরমে ‘এনার্জি বুস্টার’ হিসেবে কোন খাবার খাবেন?

গরমে ত্বক হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ। তাই এ সময় ত্বকের জন্য দরকার বাড়তি যত্ন, না হলে ত্বক হারায় উজ্জ্বলতা ও সতেজতা।…

12 hours ago

এই গরমে পটল খাওয়ার ৭ উপকারিতা

পটলের নাম শুনলে অনেকেই নাক সিঁটকায়। আবার অনেকেই আছেন, যারা ভাজা হোক বা ভর্তা, পটল খেতে ভালবাসেন। যারা নিয়মিত পটলের…

12 hours ago

জেনে নিন খাবার স্যালাইনের সঠিক ব্যবহার

ডায়রিয়া, কলেরা, বমি, আমাশয়, পাতলা পায়খানা, অতিরিক্ত ঘাম বা অন্য যে কোনো কারণঘটিত পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে খাবার স্যালাইন বা ওরাল স্যালাইন…

16 hours ago

গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে কোন ফল খাবেন?

প্রচণ্ড এই গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ফলে এ সময় খাদ্যতালিকায় বেশ কিছু ফল রাখা উচিত, যাতে গরমেও শরীর ঠান্ডা…

17 hours ago