বিয়ের পর যার যেটা কর্তব্য, জেনেনিন

বিয়ে শুধু দুজন নারী-পুরুষের দাম্পত্য জীবনই নয়, এ ক্ষেত্রে যুক্ত হয় দুটি ভিন্ন পরিবার—তাদের সংস্কৃতি, জীবনযাপন। আমাদের সমাজে নানা কারণেই মেয়েদের জন্য বিয়ে বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। নিজের পরিবার ছেড়ে আসার কষ্ট সামলাতে না-সামলাতেই শ্বশুরবাড়ির এক অচেনা পরিবেশ ও জীবনযাপনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয় অধিকাংশ মেয়েকে। হঠাৎ করেই পাল্টে যায় তাঁর বহুদিনের অভ্যস্ত জীবনযাপন।

বিয়ে-পরবর্তী এই নাজুক সময়টাতে কীভাবে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া যাবে আর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরাই বা এ ক্ষেত্রে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন, তার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে একটি সুন্দর দাম্পত্য জীবন।

এ প্রসঙ্গে একটি বহুলপ্রচলিত বিতর্ক থেকেই যায়। বউয়ের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে দায়ভার কার বেশি? বউ, না শ্বশুরবাড়ির? আসলে যেকোনো সম্পর্কই পারস্পরিক আস্থার ওপর গড়ে ওঠে। তাই এ ব্যাপারে নতুন বউয়ের যেমন দায়িত্ব থাকে, তেমনি সমান দায়িত্ব বর্তায় শ্বশুরবাড়ির। তবে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব থাকে স্বামীর। স্ত্রীর সঙ্গে বাড়ির একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরিতে স্বামীর বলিষ্ঠ ও কৌশলী ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীর কৌশল নিয়ে পরে আলোচনায় আসি। প্রথমে জানা যাক, স্বকীয়তা ঠিক রেখে কীভাবে একটি মেয়ে অচেনা পরিবেশকে নিজের করে নিতে চেষ্টা করতে পারেন।
নতুন বউয়ের করণীয়

মানসিক প্রস্তুতি: শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার আগেই মাথায় রাখতে হবে যে সেখানকার পরিবেশ তার এত দিনের চেনা পরিবারের মতো না। যেমন—সেই পরিবারের আচার-আচরণ, খাবারদাবার, জীবনযাপনের ধরন, রুচি ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে আগেই যদি তিনি শ্বশুরবাড়ির পরিবেশ নিয়ে স্বামী বা অন্য কারও কাছ থেকে ধারণা নিয়ে রাখেন, তবে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।

সময় নিন: শ্বশুরবাড়ির সব বিষয়ে জড়িত হওয়ার আগে সময় নিন। পরিবারের সবার মনমানসিকতা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার কাছে তাঁরা কী আশা করেন, সেটা জানার চেষ্টা করুন। একই সঙ্গে আপনাকেও তাঁদের বুঝতে দিন। নিজের ভাল লাগা, মন্দ লাগার বিষয়গুলো গল্পচ্ছলে জানান।

যোগাযোগ স্থাপন: শ্বশুরবাড়ির মানুষের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলুন। নিজের পরিবারের সঙ্গে যেভাবে মিশতেন, সেভাবে মেশার চেষ্টা করুন।

শ্বশুরবাড়ির ত্রুটি-বিচ্যুতি: শ্বশুরবাড়ির কোনো কিছু ভাল না লাগলে সে বিষয় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দেখানোই ভাল। মনে রাখবেন, সবকিছুরই ভাল-মন্দ থাকে। তাই খারাপটাকে উপেক্ষা করে যদি ভাল দিকগুলোর প্রতি মনোযোগী হন, তবে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। সুতরাং, তাঁদের ভাল দিকগুলো গ্রহণ করুন। যে বিষয়গুলো আপনার ভালো লেগেছে, তার প্রশংসা করুন। সামান্য প্রশংসা আপনার জন্য অনেক কিছু সহজ করবে।

অন্যের সমালোচনায় যোগ না দেওয়া: শ্বশুরবাড়ির কেউ অন্য কারও সমালোচনা করলে আপনি তাতে যোগ দেবেন না। একজনের কথা অন্যজনকে বলা থেকে বিরত থাকুন।

রূঢ় আচরণে প্রতিক্রিয়া: কারও আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকলে মনের মধ্যে পুষে রাখবেন না। তবে সেটা এমনভাবে প্রকাশ করুন, যাতে সেই ব্যক্তির মনে আঘাত না লাগে বা লজ্জা না পায়; কিন্তু বুঝতে পারেন যে আপনি কষ্ট পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে রূঢ় হওয়া বা অতিমাত্রায় নমনীয় থাকা—কোনোটাই ঠিক নয়।

সমালোচনার ক্ষেত্রে: কেউ আপনার সমালোচনা করলে তর্ক করবেন না। মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনুন। সমালোচনা গ্রহণযোগ্য হলে ভুল স্বীকার করুন। গ্রহণযোগ্য না হলে উপেক্ষা করুন।

নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সময় নিন: মনে রাখবেন, শুধু শ্বশুরবাড়ি নয়, যেকোনো পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সময় লাগবে। এ সময়টুকুতে আপনি আপনার নিজস্বতা ঠিক রেখেই যদি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন, তবে সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই আপনার অনুকূলে চলে আসবে। তাই এই প্রাথমিক মানিয়ে নেওয়ার সময়টাতে আপনার ধৈর্য, বিবেচনা আর সহনশীলতাই নির্ধারণ করবে শ্বশুরবাড়ির অচেনা পরিবেশটা কতটুকু আপনার নিজের হয়ে উঠল।

স্বামীর ভূমিকা

স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নাজুক ও টানাপোড়েনের জায়গাটিতে থাকেন স্বামী। তবে তাঁর বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা এই জটিল বিষয়টিকে অনেক সহজ করতে পারে। মনে রাখুন, নিজের পরিবার ছেড়ে আসার কষ্ট এবং সেই সঙ্গে নতুন পরিবেশকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা—এই দুই-ই স্ত্রীর জন্য বেশ কঠিন। এ সময়ে স্ত্রীর জন্য স্বামীর আন্তরিক চেষ্টা এবং ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই।

১. প্রথমেই স্ত্রীর প্রতি আপনার সহযোগী মনোভাব ব্যক্ত করুন। তার যেকোন সমস্যায় আপনি তার পাশে আছেন, সে বিষয়ে আশ্বস্ত করুন।

২. বাড়ির পরিবেশ, নিয়ম-রীতি এবং সবার সম্পর্কে স্ত্রীকে প্রাথমিক ধারণা দিন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে তাঁর কী রকম দায়িত্ব হবে, সেটা স্পষ্ট করে বলুন।

৩. স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সমান মনোযোগ দিন। কারও সামনে কাউকে হেয় করবেন না। স্ত্রী সম্পর্কে পরিবারের সামনে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস প্রকাশ থেকে বিরত থাকুন।

৪. নতুন পরিবেশে স্ত্রী কোন অসুবিধাবোধ করলে সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনুন। তার সমস্যা আপনি বুঝতে পেরেছেন, সেটা প্রকাশ করুন এবং মানিয়ে নিতে সাহায্য করুন।

৫ স্ত্রীর সঙ্গে একান্ত সময় কাটান, গল্প করুন, বাইরে বেড়ান। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সমালোচনা উপেক্ষা করুন। একই সঙ্গে তাঁদের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে দিন। তাদের প্রতি আপনার ভালোবাসা যে আগের মতোই আছে, সেটা নানাভাবে প্রকাশ করুন।

৬. শ্বশুরবাড়ি মানে স্ত্রীর পরিবারের প্রতি আন্তরিকতা দেখান। তাঁদের খোঁজখবর নিন। তাঁদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে যান। স্ত্রীর কাছে তাঁদের সমালোচনা থেকে বিরত থাকুন।

৭. নতুন পরিবেশে স্ত্রীর মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকে প্রশংসা করুন। অন্যের সামনে তাঁর সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন।

৮. গল্পচ্ছলে আপনার কাছে আপনার পরিবারের গুরুত্বের কথা স্ত্রীকে জানান।

৯. মা, ভাবি বা বোনের গুণের সঙ্গে স্ত্রীকে তুলনা করবেন না।

১০. কোন ভুলত্রুটি করলে তাঁর আত্মমর্যাদাবোধকে সম্মান করে বুঝিয়ে বলুন।

News Desk

Recent Posts

প্রতিদিন ১০ মিনিট হাসলে শরীরে যা ঘটে

বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই হাসতে ভুলে গেছেন। তবে হাসিখুশি থাকা যে শরীর ও মনের জন্য কতটা উপকারী, তা হয়তো অনেকেরই…

43 mins ago

গরমে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়লে দ্রুত যা করবেন

কোষ্ঠকাঠিন্য হলো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। এই তাপপ্রবাহে ডায়রিয়ার সমস্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই অনেকের আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও বেড়েছে। যারা এরই…

3 hours ago

এই গরমে শিশুকে সুস্থ রাখতে কী কী খাওয়াবেন?

তীব্র গরমে বড়দের পাশাপাশি হাঁসফাঁস করছে ছোটরাও। এ সময় শিশুদের কীভাবে সুস্থ রাখবেন তাই এখন বড় প্রশ্ন, প্রত্যেক মা-বাবার জন্য়।…

3 hours ago

ত্বকে হিট র‌্যাশ উঠলে সারাতে কী করবেন?

তাপপ্রবাহে সবার মধ্যেই অস্বস্তি বেড়েছে। গরমে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি ত্বকেও দেখা দেয় ঘামাচি, ফুসকুড়ি, ট্যানসহ নানা সমস্যা। তার মধ্যে…

4 hours ago

দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা যে কারণে বিপজ্জনক

কাজের ব্যস্ততা কিংবা আলস্যের কারণে অনেকেই দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস হতে পারে বিপজ্জনক। এই অভ্যাসের কারণেই…

4 hours ago

পাইলসের সমস্যা চিরতরে সারবে যে নিয়ম মানলে

পাইলসের সমস্যায় অনেকেই কষ্ট পান। এটি গুরুতর রোগ হলেও অনেকেই অবহেলা করেন। যদি প্রথমদিকেই পাইলসের সমস্যায় চিকিৎসা নেওয়া হয়, তাহলে…

7 hours ago