গবেষণায় উঠে এলো বিশেষ তথ্য, জন্ডিসের ওষুধ নাকি এখন অ্যালকোহল? জেনেনিন বিস্তারিত

জন্ডিস আমাদের দেশে খুব পরিচিত। লিভারের বহুল পরিচিত অসুখটির নাম জন্ডিস। চোখ ও প্রস্রারের রংসহ সারাদেহ হলুদ হয়ে যাওয়া হলো জন্ডিসের উপসর্গ। আমাদের পেটের ডান পাশের ওপেরর দিকে থাকে লিভার বা যকৃত। যকৃত মানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রোটিন, শকরা এবং চর্বি জাতীয় পদার্থের বিপাক নিয়ন্ত্রণ এবং সেগুলো হতে শক্তি উৎপাদন লিভারের কাজ। লিভার থেকে বিভিন্ন হরমোন এবং এনজাইম তৈরি হয়। এছাড়া লিভার থেকে পাজমা প্রোটিন এবং রক্ত জমাট বাঁধার বিভিন্ন উপাদান তৈরি হয়। আবার যকৃত থেকেই নিঃসৃত হয় বাইল বা পিওরস বা চর্বি জাতীয় খাবার বিপাক সহায়তা করে। লিভার আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। দেহের রক্ত প্রতি মুহূর্তে লিভারের ভেতর যায়। লিভার দেখে রক্তের সব উপাদান ঠিক আছে কিনা এবং রক্তে ক্ষতিকর কোন পদার্থ আছে কিনা। রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা থাকলে লিভার নিজের সঞ্চিত গ্লুাকোজের থেকে সেটা পূরণ করে আর রক্তে গ্লুকোজ বেশি হলে তা লিভারের গ্লুকোজের হিসেবে জমা হয়।

লিভারকে আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন বহু জিনিস আমরা খাই। এদের মধ্যে অ্যালকোহল অন্যতম। আমাদের দেশে অবশ্য অ্যালকোহলের তীব্রতা বেশি নয়। যদিও ইদানীং উচ্চবিত্ত পরিবারে তা বাড়ছে। এছাড়া নিম্নবিত্তদের মধ্যে অ্যালকোহল গ্রহণের তীব্রতা আশঙ্কাজনক। এগুলো বিভিন্নভাবে লিভারের কোষকে ধ্বংস করে। কিছু ওষুধ যেসব আমরা সরবরাহ ব্যবহার করি যেমন প্যারাসিটামলের মাত্রা বেশি হলেও লিভার কোষ আক্রান্ত হয়। অ্যালকোহলের বিপাক হয় মূলত যকৃতে। প্রথমে অ্যালকোহল পরিবর্তিত হয় এসিটালডিহাইডে। এরপর এসিটালডিহাইড পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয় এসিটেট। এই ক্রিয়া বিক্রিয়াতে বিভিন্ন এনজাইম ব্যবহৃত হয়। এভাবে যে এসিটেট তৈরি হল তা বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়া শেষে ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়। তারপর এই ফ্যাটি এসিড মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ লিভারে সঞ্চিত হয়। ফলে ধ্বংস হয় লিভার কোষ। অ্যালকোহলের বিষক্রিয়ায় লিভারের যে ক্ষতি হয় “ফ্যাটি লিভার” তার মধ্যে প্রধান। তবে আমার কথা এই যে এই অবস্থা পরিবর্তনশীল। ড্রাগ সেবন বন্ধ করলে লিভার তার পূর্বের অবস্থা ফিরে পেতে পারে। অ্যালকোহল একটি জটিল বাসায়নিক পদার্থ। এর বিপাক ক্রিয়ায় বহু টক্সিক মেটাবোলাইট তৈরি হয়। এসবের উপস্থিতিতে লিভাবে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত পরিবর্তন দেখা যায়। একে বলে অ্যালকোহলিক পেপাটিটাইটিস। লিভারে প্রদাহ হলে দেখা দেয় জন্ডিস, পেটে ব্যাথা এবং শেষে লিভার বড় হয়ে যায়। দীর্ঘদিন লিভারে প্রদাহ থাকলে তা থেকে সিরোসিস হয়। এতে লিভারের স্বাভাবিক গঠনকাঠামো নষ্ট হয়ে যায়। লিভার বিপাকীয় কার্যাবলী ঠিকমত করতে পারে না। ফলে পেটে ও পায়ে জল জমে, জন্ডিস দেখা যায় এবং আরো নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। অনেক জটিলতার পর্যায়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তার ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্রেইন এবং কিডনি। ঠিক কতটুকু অ্যালকোহল থেকে লিভারের ক্ষতি হয় তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তার কারণ এর সাথে রয়েছে দেহের ওজন, আকার আকৃতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষতি ইত্যাদির ঘনিষ্ট সম্পর্ক। অনেকেই একটানা ৫-১০ বছর অ্যালকোহল সেবনের পর অসুস্থ হয়।

News Desk

Recent Posts

অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়, কঠিন রোগের লক্ষণ নয় তো?

গরমে ঘাম হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ঘামের সঙ্গে শরীরের দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। আর ঘাম হলে শরীরের অতিরিক্ত পানি ও…

8 hours ago

গরমে কেন বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি?

শুধু শীত নয়, গরমেও বাড়তে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। বিশেষ করে আপনার যদি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকে তাহলে…

10 hours ago

টয়লেটে মোবাইল ব্যবহার যে কারণে মারাত্মক

বর্তমানে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছোট-বড় সবাই। শুধু মোবাইল বললে ভুল হবে, স্মার্টফোনের ব্যবহার এখন বিশ্বব্যাপী। সারাক্ষণই এতে ব্যস্ত হয়ে সময়…

11 hours ago

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে যে সবজি খাবেন

গরমে অতীষ্ট এখন জনজীবন। এ সময় শরীরের উপর বিরাট ধকল যাচ্ছে কমবেশি সবারই। তীব্র গরমে রোদে বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ…

12 hours ago

শরীরের যে স্থান পরিষ্কার না করলে বাড়বে রোগব্যাধি

শরীর পরিষ্কার রাখতে গোসল করা জরুরি। তবে জানলে অবাক হবেন, গোসল করলেও শরীরের কয়েকটি স্থান পরিষ্কার হয় না সহজে। আর…

14 hours ago

ওষুধ ছাড়াই কিডনির পাথর গলানোর ঘরোয়া উপায়

কিডনিতে পাথর জমার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। যদিও এটি একটি সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা, তবুও এটি কারও কারও ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে।…

15 hours ago