সাবধান! অতিরিক্ত চিনি খেয়েই প্রতিবছর মারা যায় “এত কোটি” মানুষ, জানাচ্ছে গবেষণা

নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বিজ্ঞানীরা জানালেন অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে নানা রোগে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ মারা যান। সংক্রামক রোগে যত মানুষ আক্রান্ত হন, তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষ অসুস্থ হন চিনির বিষক্রিয়ায়।

চিনি খেলে ওজন বাড়ে। ডায়াবেটিস থাকলে বাড়ে তার প্রকোপ। এছাড়াও মাত্রার চেয়ে বেশি খেলে হার্ট ও লিভার জখম হয়, হরমোনের মাত্রা ওঠা-নামা করে, কোলেস্টেরল-ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে, বাড়ে কিছু ক্যান্সারের আশঙ্কাও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, স্বাভাবিক অবস্থায় পুরুষদের দিনে ৯ চামচ ও মহিলাদের ৬ চামচের বেশি চিনি খাওয়া বারণ। আমেরিকান সরকারের ডায়াটেরি গাইড লাইন অনুযায়ী দিনে যত ক্যালোরি আমরা খাই তার ১০-১৫ শতাংশের কম আসা উচিত চিনি থেকে। কিন্তু বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এই মাত্রা খুব কম মানুষই মানেন। ১০–১৫ শতাংশ তো দূরে কখনও তা ২৫ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়।

হরমোন চিকিৎসকদের মতে ওজন বাড়লে, ডায়াবেটিস-রক্তচাপ মাত্রা ছাড়ালে, হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়লে বাড়ে কোভিডের আশঙ্কা ও জটিলতা। এমনিতেও বেশি মিষ্টি খেলে শরীরের প্রদাহের প্রবণতা বেড়ে কোভিডের আশঙ্কা ও প্রকোপ বাড়তে পারে। কাজেই কোভিডের এই সময়ে চিনি খাওয়া যথাসম্ভব কমানো উচিত।

প্রসেসড খাবারেও থাকে প্রচুর চিনি, তা সে খেতে মিষ্টি হোক বা না হোক। যেমন, কর্নফ্লেক্স পাউরুটি, বিস্কুট, মেয়োনিজ ও অন্যান্য স্যালাড ড্রেসিং ইত্যাদি। প্যাকেটের ফলের রস, বিয়ার, সস, কেচাপ, ক্যান্ডি, নরম পানীয় ইত্যাদিরও এক হাল।

খাওয়ার পর অনেকেরই একটু মিষ্টি না খেলে মন ভরে না। তাই বলে কৃত্রিম চিনি নয়, খান প্রাকৃতিক চিনি।

মনে রাখবেন, চিনির বদলে কৃত্রিম চিনি বা অ্যাসপারটেম খাবেন না। কারণ তাতে ওজন যে কমবেই, এমন নিশ্চয়তা নেই। বিভিন্ন সমীক্ষায় বরং এর উল্টোটাই প্রমাণিত হয়েছে। তার পাশাপাশি মাইগ্রেন, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, গা– বমি বমি ভাব, ঘুমের সমস্যা, পেট ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন সন্ধিতে ব্যথা, মানসিক অবসাদ, এমনকি মস্তিষ্কের ক্যান্সারের আশঙ্কাও বাড়তে পারে। অর্থাৎ চিনির চেয়েও সে বেশি ক্ষতিকর।

তাহলে খান ভিটামিন-মিনারেলে ঠাসা প্রাকৃতিক চিনি। যেমন- গুড়, আখের রস, নারিকেল চিনি, খেজুর, কিসমিস বা অন্য শুকনো বা টাটকা ফল। তবে ক্যালোরি বেশি বলে মাত্রা রেখে খাবেন।

ভাবছেন গুড় বা আখের রস খাওয়া গেলে চিনি কেন নয়? চিনিরও তো মূল উৎস সেই আখ?

ঠিক কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আখের রস থেকেই চিনি বানানো হয়। কিন্তু বানানোর সময় এমন সব পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যাওয়া হয়, যাতে একদিকে তার গুণ শেষ হয়ে যায়, অন্যদিকে সালফার ডাই-অক্সাইড নামের এক ক্ষতিকর রাসায়নিক এতে মেশানো হয়। এর প্রভাবে বাড়তে পারে শ্বাসকষ্টের প্রকোপ।

আন্তর্জাতিক হিসেব অনুযায়ী চিনিতে সালফার ডাই-অক্সাইডের মাত্রা যা থাকার কথা, এ দেশে থাকে তার প্রায় ৭ গুণেরও বেশি। অতএব লাগাম টানুন চিনিতে। সতর্ক হন আজই।rs

News Desk

Recent Posts

তুলসি পাতা চিবিয়ে খাওয়া যে কারণে ক্ষতিকর

তুলসি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, একথা সবারই জানা। এটি একটি জাদুকরী ভেষজ যা সব ধরনের রোগ নিরাময় করতে পারে! যুগ…

23 mins ago

অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়, কঠিন রোগের লক্ষণ নয় তো?

গরমে ঘাম হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ঘামের সঙ্গে শরীরের দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। আর ঘাম হলে শরীরের অতিরিক্ত পানি ও…

11 hours ago

গরমে কেন বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি?

শুধু শীত নয়, গরমেও বাড়তে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। বিশেষ করে আপনার যদি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকে তাহলে…

13 hours ago

টয়লেটে মোবাইল ব্যবহার যে কারণে মারাত্মক

বর্তমানে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছোট-বড় সবাই। শুধু মোবাইল বললে ভুল হবে, স্মার্টফোনের ব্যবহার এখন বিশ্বব্যাপী। সারাক্ষণই এতে ব্যস্ত হয়ে সময়…

13 hours ago

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে যে সবজি খাবেন

গরমে অতীষ্ট এখন জনজীবন। এ সময় শরীরের উপর বিরাট ধকল যাচ্ছে কমবেশি সবারই। তীব্র গরমে রোদে বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ…

15 hours ago

শরীরের যে স্থান পরিষ্কার না করলে বাড়বে রোগব্যাধি

শরীর পরিষ্কার রাখতে গোসল করা জরুরি। তবে জানলে অবাক হবেন, গোসল করলেও শরীরের কয়েকটি স্থান পরিষ্কার হয় না সহজে। আর…

16 hours ago