বাতাস দিয়ে তৈরি হবে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য

মানুষের সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ বিশুদ্ধ খাবারের বিকল্প নেই। তাই খাবার নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার শেষ নেই।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের তৈরি করছে ফিনল্যান্ডের কিছু বিজ্ঞানী। বাতাস দিয়ে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য তৈরি করেছেন তারা।

ফিনল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই খাবার পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে সয়া’র প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারবে। -খবর বিবিসি বাংলা।

তাদের দাবি, এই খাবার তৈরিতে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন প্রায় শূন্যের কোঠায় থাকবে। আর প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সৌর অথবা বাতাস দিয়ে তৈরি হয়।

এই বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন যদি বাস্তব রূপ পায়, তা হলে কৃষির মাধ্যমে বর্তমানে যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

স্বাদহীন এই প্রোটিন

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইলেক্ট্রোলাইসিস ব্যবহার করে জল থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করে সেই হাইড্রোজেন বাতাস থেকে নেয়া কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও খনিজ পদার্থ মাটিতে পাওয়া যায়। এমন এক প্রকার ব্যাকটেরিয়াকে খাইয়ে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য তৈরি করা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘সোলেন’, যা খেতে একদম স্বাদহীন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রোটিন সরাসরি খাওয়া নয়; বরং অন্য ধরনের খাবারের সঙ্গে এটি যুক্ত করে পুষ্টিগুণ বাড়ানো যায়।

এটিকে ব্যবহার করে বিস্কুট, পাস্তা, নুডুল বা রুটি– এমনকি কৃত্রিম মাংস বা মাছ তৈরি সম্ভব। এই প্রোটিন গবাদিপশুর খাবারও হতে পারে।

ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি শহরের পাশে অবস্থিতি এই ‘সোলেন’ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা পাসি ভাইনিক্কা। যুক্তরাজ্যের ক্র্যানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
তিনি বলছিলেন, এমন খাবার উৎপাদন প্রযুক্তির ধারণা প্রথম এসেছে ষাটের দশকে। আশা করছেন ২০২২ সালের মধ্যে তারা কাজ শেষ করতে পারবেন।
এই প্রকল্পের জন্য তারা তহবিল তৈরি করছেন। এখনও পর্যন্ত ৫৫ লাখ ইউরো জোগাড় হয়েছে। ফ্যাক্টরি পর্যায়ে সোলেন তৈরির কাজ তারা শুরু করতে চান ২০২৫ সালে।
বিদ্যুতের দাম এখানে বড় একটি বিষয় বলছিলেন পাসি ভাইনিক্কা। তবে সৌর বিদ্যুৎ প্রযুক্তি যেভাবে সামনে এগোচ্ছে, তাতে করে এর দাম হয়তো ভবিষ্যতে আরও কমে আসবে।

সয়ার সঙ্গে যে কারণে তুলনা

সয়া থেকে তৈরি প্রোটিন খুব উন্নত বলে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। যা মাংস বা মাছ জাতীয় প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে অনেক গ্রহণীয়।

পৃথিবীর আয়ু কিছুটা বাড়বে?

পরিবেশবাদী ক্যাম্পেইনার জর্জ মনবিয়ট এই প্রোটিন উৎপাদনকারী প্রযুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, গবাদিপশু লালনপালন করে মাংস বা অন্যান্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে ব্যাপক পরিমাণে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণতার অনেক বড় একটি উৎস।

জর্জ মনবিয়ট বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনেরও বড় কারণ হচ্ছে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা। আর খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ রকম একটি সময়ে এসে ‘কৃষিবিহীন খাদ্য’ উৎপাদন এই গ্রহ এবং তার মানুষকে রক্ষায় বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলবে বলে তিনি মনে করেন।

News Desk

Recent Posts

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

হাঁপানি, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও অন্যান্য শ্বাসনালির সংক্রমণজনিত রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে নেবুলাইজার ব্যবহার করা হয়। রোগী যখন ইনহেলারের…

2 hours ago

বারবার পানি পিপাসা লাগা কোনো রোগের লক্ষণ নয় তো?

গরমে অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। ফলে বারবার পানি পিপাসা লাগা স্বাভাবিক। আর এ সময় প্রচুর পরিমাণ…

9 hours ago

মসলা চা পানে মিলবে যেসব উপকার

দিনে বেশ কয়েকবার চায়ের কাপে চুমুক না দিলে অনেকেরই দিন কাটে না। বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যে মসলা চায়ের স্বাদও যেমন…

10 hours ago

গরমে বাড়তে পারে কিডনির সমস্যা, কীভাবে সতর্ক থাকবেন?

হঠাৎ করেই কিডনির সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতার কারণে হঠাৎই বিকল হতে পারে কিডনি। মূলত তাপমাত্রা ও…

10 hours ago

খাবার কেনার আগে প্যাকেটের কোন লেখা অবশ্যই পড়বেন?

কর্মব্যস্ত জীবনে কমবেশি সবাই এখন রেডিমেড খাবারের উপর নির্ভরশীল। এ কারণে বেশিরভাগ খাবারই এখন প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। প্রায়…

1 day ago

বিশ্বব্যাপী যে কারণে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

গরমে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে বাড়ে মৃতের সংখ্যাও। আজ ১৬ মে জাতীয় ডেঙ্গু দিবস। ডেঙ্গু…

1 day ago