আনারস খেলে কী হয়? দেখে নিন আনারসের কিছু গুনাগুন সম্পর্কে

মিষ্টি, সুস্বাদু ফল আনারস। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটিতে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এসব অপরিহার্য উপাদান আমাদের শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে আনারস খাওয়া কিংবা না খাওয়া নিয়ে নানারকম কথা প্রচলিত আছে। অনেককে একথাও বলতে শোনা যায় যে, আনারস আর দুধ একসঙ্গে খেলে বিষক্রিয়া হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে! সেগুলো কি সঠিক? জেনে নিন-

আনারস খেলে শরীরের যেসব উপকার হয়

খাবার যদি ঠিকভাবে হজম না হয় তবে শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। আর এই হজমশক্তি বাড়াতে আনারস বেশ কার্যকরী। আনারসে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে যা হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারস খান। উপকার মিলবে।

এই সময়ে ভাইরাসজনিত ঠান্ডা ও সর্দি-কাশির সমস্যা দেখা যায়। আনারসে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। তাই এটি সহজেই ঠান্ডা ও সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করে। এছাড়া জ্বর ও জন্ডিস প্রতিরোধে আনারস বেশ উপকারী। এমনকী নাক দিয়ে জল পড়া, গলাব্যথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসাবেও আনারসের রস খেতে পারেন।

আপনি যদি ওজন কমানোর চেষ্টা করে থাকেন তবে নিশ্চিন্তে আনারস খেতে পারেন। কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে। এছাড়া এতে কোন ফ্যাট না থাকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস খেলে বা আনারসের জুস পান করলে তা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

দাঁতের সমস্যা নিয়ে ভুগতে হয় অনেককেই। দাঁতের সুরক্ষায়ও যে আনারস কাজে লাগে তা কি জানা আছে? যদি আপনি নিয়মিত আনারস খান তবে জীবাণুর সংক্রমণ কম হয়, দাঁত ঠিক থাকে। এছাড়া মাড়ির যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে আনারস বেশ কার্যকরী।

চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়া রোগ “ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন” রোগটি হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে আনারস। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

আমাদের হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে আনারস। এতে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম যা হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এতে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। তাই হাড়ের সমস্যা প্রতিরোধে খাবার তালিকায় আনারস রাখুন।

কৃমি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে বেছে নিতে পারেন আনারসকে। যদি আপনার কৃমির সমস্যা থাকে আর নিয়মিত আনারস খান তবে দ্রুতই কৃমি দূর হবে। সেজন্য প্রতি ভোরে খালি পেটে আনারস খেতে হবে।

মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকে আমাদের দূরে থাকতে সাহায্য করে আনারস। আনারসে আছে উচ্চ মাত্রায় জলে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি এবং জলে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেল থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না।

দুধ-আনারস খেলে সত্যিই কি বিষক্রিয়া হয়?

লোকমুখে শোনা যায় দুধ-আনারস একসঙ্গে খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। চিকিসৎকদের মতে, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ দুধ-আনারস একসঙ্গে খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটে না।

আনারস একটি অ্যাসিডিক এবং টকজাতীয় ফল। দুধের মধ্যে যে কোনো টকজাতীয় জিনিস দিলে দুধ ছানা হয়ে যেতে পারে বা ফেটে যেতে পারে। হতে পারে বদহজম, পেট ফাঁপা, পেট খারাপ।তবে বিষক্রিয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে যাদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে, খালি পেটে আনারস খেলে তাদের এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই খালি পেটে আনারস ও টকজাতীয় কোনো খাবার খাবেন না।

একগ্লাস দুধ খাওয়ার পরপরই যদি আনারস খান তাহলে সঠিক খাদ্যের সমন্বয় হয় না। ফলে পাতলা পায়খানা, বদ হজম, অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই দুধ-আনারস একসঙ্গে না খেয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিরতি দেয়া যেতে পারে। কারণ একসঙ্গে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তবে খাদ্যে বিষক্রিয়া হওয়ার কোনো কারণ নেই।

গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে কি না?

গর্ভাবস্থায় আনারস খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরা। কারণ এতে রয়েছে উচ্চমানের ব্রোমেলিন যা জরায়ুকে নমনীয় করে ফলে যথাসময়ের আগেই প্রসবযন্ত্রণা দেখা দিতে পারে বা মিসক্যারেজ হতে পারে। বিশেষত এসব সমস্যা এড়াতে গর্ভধারণের প্রথম তিনমাস আনারস খাওয়া যাবে না। এরপর খাওয়া আপনার জন্য কতটা নিরাপদ তা বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে নিন।

কিছু সতর্কতা

যদিও আনারসে প্রচুর উপকারিতা রয়েছে কিন্তু এটি সবার জন্য ঠিক উপকারী নয়! কারণ আনারস খেলে কারও কারও এলার্জির সমস্যা যেমন বিভিন্ন ধরনের চুলকানি, ফুস্কুরি ইত্যাদি হতে পারে।

আনারসে চুর প্রাকৃতিক চিনি থাকায় তা ডায়বেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এর অতিরিক্ত চিনি আমাদের রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা আনারস কম খেলেই ভালো।

আনারস শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে বাঁধা প্রদান করে থাকে। তাই যারা আনারস খেলে এসব সমস্যায় ভোগেন তারা অবশ্যই আনারস থেকে দূরে থাকবেন।

News Desk

Recent Posts

সিলিং ফ্যান পরিষ্কারের ট্রিকস

সবার ঘরেই অন্তত একটি করে হলেও সিলিং ফ্যান আছে। এই গরমে যাদের ঘরে এসি বা এয়ার কন্ডিশন নেই, তাদের ভরসা…

8 hours ago

প্রতিদিন ১০ মিনিট হাসলে শরীরে যা ঘটে

বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই হাসতে ভুলে গেছেন। তবে হাসিখুশি থাকা যে শরীর ও মনের জন্য কতটা উপকারী, তা হয়তো অনেকেরই…

9 hours ago

গরমে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়লে দ্রুত যা করবেন

কোষ্ঠকাঠিন্য হলো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। এই তাপপ্রবাহে ডায়রিয়ার সমস্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই অনেকের আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও বেড়েছে। যারা এরই…

12 hours ago

এই গরমে শিশুকে সুস্থ রাখতে কী কী খাওয়াবেন?

তীব্র গরমে বড়দের পাশাপাশি হাঁসফাঁস করছে ছোটরাও। এ সময় শিশুদের কীভাবে সুস্থ রাখবেন তাই এখন বড় প্রশ্ন, প্রত্যেক মা-বাবার জন্য়।…

12 hours ago

ত্বকে হিট র‌্যাশ উঠলে সারাতে কী করবেন?

তাপপ্রবাহে সবার মধ্যেই অস্বস্তি বেড়েছে। গরমে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি ত্বকেও দেখা দেয় ঘামাচি, ফুসকুড়ি, ট্যানসহ নানা সমস্যা। তার মধ্যে…

13 hours ago

দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা যে কারণে বিপজ্জনক

কাজের ব্যস্ততা কিংবা আলস্যের কারণে অনেকেই দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাস হতে পারে বিপজ্জনক। এই অভ্যাসের কারণেই…

13 hours ago