সাবধান! আপনি কি টুথপিক ব্যবহার করেন, তাহলে এটা কতটা বিপজ্জনক? জেনেনিন

অনেককেই টুথপিক (দাঁতের খিলাল) দিয়ে দাঁত খোঁচাতে দেখা যায়। মূলত দাঁতের ফাঁকা আটকে থাকা খাবার বের করতেই খিলাল করে থাকেন। কেউ কেউ এতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যে, খাবার খাওয়ার পর দাঁত খোঁচাখুঁচি না করলে স্বস্তি পান না।

টুথপিককে সুবিধাজনক মনে হলেও এটা দাঁত পরিষ্কারের নিরাপদ উপায় নয়। দাঁতের ক্ষতি করতে না চাইলে এর পরিবর্তে চিকিৎসকদের অনুমোদিত পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।

টুথপিক ব্যবহারে দাঁতের যত ঝুঁকি

* মাড়িতে প্রদাহ হতে পারে: খিলাল করার সময় টুথপিক ভেঙে মাড়িতে আটকে যেতে পারে। ভাঙা টুথপিক মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যদি অপসারণে দেরি হয়। এটা নিজে নিজে বের করার সময় সতর্কতা অবলম্বন না করলে মাড়ির টিস্যু আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে- যা বিপজ্জনক ও অসহনীয় হতে পারে, বলেন নিউ ইয়র্কে অবস্থিত এনওয়াইইউ কলেজ অব ডেন্টিস্ট্রির সহকারী অধ্যাপক চেরিলিন পেজুলো।

খিলালের সময় দুর্ঘটনাবশত টুথপিক ভেঙে গেলে অস্থির হবে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সতর্কতা সহকারে বের করে আনুন অথবা কারো সাহায্য নিন। প্রয়োজনে নিরাপদভাবে বের করার জন্য ডেন্টিস্টের কাছে যেতে হবে।

* সংক্রমণ হতে পারে: অসাবধনায় টুথপিকের সূঁচালো অংশ মাড়িতে বা মুখে ভেতরে লেগে সহজেই ক্ষত হতে পারে। এই উন্মুক্ত ক্ষতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া এমনকি টুথপিকে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়া দ্বারাও সংক্রমণ হতে পারে, যদি তা পরিষ্কার স্থানে সংরক্ষণ করা না হয়। এছাড়া মুখের ভেতর প্রচুর ব্যাক্টেরিয়া তো রয়েছেই, এসবের মধ্যে ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণে ভোগাতে পারে। উন্মুক্ত ক্ষতের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে রক্তকে দূষিত করতে পারে। এটাকে সেপ্টিসেমিয়া বলে- এসময় জরুরি চিকিৎসা নিতে হয়, অন্যথায় জীবনের ঝুঁকি আছে। যারা নিয়মিতে দাঁতের পরিচর্যা করেন না, তাদের মুখের ভেতর রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু বেশি থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দাঁতে সমস্যা থাকলে শরীরে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, দাঁত ও মাড়ির রোগে রক্তপ্রবাহে ব্যাক্টেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে হার্টের ভালভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

* দাঁতের চিকিৎসা ব্যাহত করতে পারে: যারা দাঁতের চিকিৎসা নিচ্ছেন অথবা ডেন্টাল ওয়ার্ক (যেমন- ফিলিংস ও ভিনিয়ার্স) করেছেন, তাদের খিলাল থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় চিকিৎসা তেমন ফলপ্রসূ হবে না অথবা ডেন্টাল ওয়ার্কের ক্ষতি হবে। ডা. পেজুলো বলেন, ‘দাঁত পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের সময় দাঁতে সমস্যা বা ফাঁক থাকলে, টুথপিক ব্যবহারে অবস্থা আরো খারাপ হবে। এর ফলে ডেন্টাল ওয়ার্ক ঢিলা হবে বা ক্ষয়ে যাবে।’ ডেন্টাল ওয়ার্কের ম্যাটারিয়াল (যেমন- ফিলিং ম্যাটারিয়াল) প্রাকৃতিক দাঁতের মতো অত মজবুত নয় বলে খিলাল করলে সহজেই ক্ষয় বা ভেঙে যেতে পারে।

টুথপিকের পরিবর্তে যা ব্যবহার করবেন

যেহেতু টুথপিক দিয়ে খিলাল করলে দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি হতে পারে, তাই দাঁত পরিষ্কারের জন্য ডেন্টিস্ট অনুমোদিত উপায় অবলম্বন করা উচিত। এসব উপায় নিরাপদ ও টুথপিকের তুলনায় বেশি কার্যকর। ডা. পেজুলো টুথপিকের বিকল্প হিসেবে এসব মেথড সুপারিশ করেছেন- ডেন্টাল ফ্লস (বিশেষ করে ওয়াক্সেড ফ্লাট ফ্লস), প্লাস্টিক হ্যান্ডেলড ফ্লস স্টিকস এবং ওয়াটারপিক।

ওয়াটারপিকে জলের উচ্চ চাপে দাঁতের খাদ্যাংশ ও অন্যান্য কণা বের করা হয়। তিনি বলেন, সফট ফ্লসের ব্যবহার বা জলের চাপে দাঁত পরিষ্কার করলে মাড়ির সমস্যা বেড়ে যায় না, মাড়ির টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এবং প্রদাহ ও সংক্রমণের আশঙ্কাও নেই।

News Desk

Recent Posts

অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়, কঠিন রোগের লক্ষণ নয় তো?

গরমে ঘাম হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ঘামের সঙ্গে শরীরের দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। আর ঘাম হলে শরীরের অতিরিক্ত পানি ও…

8 hours ago

গরমে কেন বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি?

শুধু শীত নয়, গরমেও বাড়তে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। বিশেষ করে আপনার যদি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকে তাহলে…

10 hours ago

টয়লেটে মোবাইল ব্যবহার যে কারণে মারাত্মক

বর্তমানে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছোট-বড় সবাই। শুধু মোবাইল বললে ভুল হবে, স্মার্টফোনের ব্যবহার এখন বিশ্বব্যাপী। সারাক্ষণই এতে ব্যস্ত হয়ে সময়…

11 hours ago

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে যে সবজি খাবেন

গরমে অতীষ্ট এখন জনজীবন। এ সময় শরীরের উপর বিরাট ধকল যাচ্ছে কমবেশি সবারই। তীব্র গরমে রোদে বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ…

12 hours ago

শরীরের যে স্থান পরিষ্কার না করলে বাড়বে রোগব্যাধি

শরীর পরিষ্কার রাখতে গোসল করা জরুরি। তবে জানলে অবাক হবেন, গোসল করলেও শরীরের কয়েকটি স্থান পরিষ্কার হয় না সহজে। আর…

14 hours ago

ওষুধ ছাড়াই কিডনির পাথর গলানোর ঘরোয়া উপায়

কিডনিতে পাথর জমার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। যদিও এটি একটি সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা, তবুও এটি কারও কারও ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে।…

15 hours ago