কালোজিরার খাদ্যগুণ সম্পর্কে জেনেনিন বিস্তারিত ভাবে

কালোজিরা মৃত্যুছাড়া সকল রোগের ঔষধ রূপে কাজ করে। ‘কালোজিরা’ অত্যন্ত উপকারি একটি প্রাকৃতিক উপাদান। রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এর রয়েছে কার্যকরী ভূমিকা। ভেষজ চিকিৎসা থেকে শুরু করে কালোজিরা সব কজে এটি ব্যবহার করা হয়।

কালোজিরার মধ্যে রয়েছে আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, প্রোটিন ও ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো-হাইড্রেট ছাড়াও জীবণুনাশক বিভিন্ন উপাদান সমূহ। এছাড়া রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হর্মোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।

কালোজিরার জন্ম দক্ষিণে হলেও বাংলাদেশে এর ব্যবহার বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। তাছাড়া আমাদের দেশে মসলা হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়। প্রাচীনকালে আয়ুর্বেদীয় ও কবিরাজি চিকিৎসায় কালোজিরা ব্যবহার করা হতো।

কালোজিরার গুনাগুণ নিয়ে বিশ্বনবী হয়রত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য `সাম` ব্যতীত সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে কালো জিরায়। আর সাম হলো মৃত্যু।’ তাই সব রোগের মহৌষধ হোমিওপ্যাথিক ও দেশীয় চিকিৎসায় সহযোগী ঔষধ রূপে কালোজিরার ব্যবহার।

মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কানন অব মেডিসিন’-এ বলেছেন,‘কালোজিরা দেহের প্রাণশক্তি বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করে। কালোজিরা খাওয়ার ফলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সতেজ হয় ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।

কালোজিরা নিয়ে বিভিন্ন গবেষক বিভিন্নভাবে গবেষণা করে এর উপকার তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, কালোজিরা খেতে হবে পরিমিত। কেননা অনেকেরই কালোজিরা হজম করার শক্তি থাকে না। তাদের ক্ষেত্রে ধীরে-ধীরে কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

আসুন, জেনে নিই কালোজিরার খাদ্যগুণ সম্পর্কে

১.রক্ত সঞ্চালন: নিয়মিত কালোজিরা খেলে দেহে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয়। এতে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। আর রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেলে তা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। কালোজিরায় অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক রয়েছে। এটি খেলে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয় এবং মনে প্রশান্তি এনে দেয়।

২. চুল পড়া রোধে: কালোজিরা চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে চুল পড়া রোধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১ চা চামচ কালোজিরার তেল একসাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট মাসাজ করুন। ১ ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

৩. পেটে সমস্যা দূর করেঃ পেটে যে কোনো সমস্যা থাকলে কালোজিরাই এর সমস্যা সমাধান করতে পারে। এক্ষেত্রে কালোজিরা গুঁড়ো করে তিন চামচ দুধে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে টানা সাতদিন খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কালোজিরার ভূমিকা অত্যন্ত অপরিসীম। এটি যেকোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে।

৫. প্রসবকালীন ব্যথা নিরসনঃ প্রসবকালীন ব্যথা কমায় কালোজিরা। প্রসবকালীন ব্যথা নিরসনে কালোজিরা বেশ সাহায্য করে। এছাড়া প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৬. হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট দূরঃ হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট আছে তাদের জন্য কালোজিরা বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই প্রতিদিন সম্ভব না হলেও অন্তত দু-একদিন পর পর কালোজিরার ভর্তা রাখুন আপনার খাদ্য তালিকায়।

৭. রোগ বালাই দূরঃ পাইলস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও যকৃতের মতো বিভিন্ন সমস্যায় কালোজিরা খাবেন। এসব সমস্যা থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কালোজিরা বেশ কাজে দেয়।

৮. মাথাব্যথা দূর করেঃ অনেকের যখন-তখন মাথাব্যথা উঠে, তাদের জন্য কালোজিরা খুব কাজে দেয়। তাই কালোজিরার ভর্তা খাওয়ার পাশাপাশি সবসময় মুখে নিয়ে চিবোতে থাকবেন।

৯. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ কালোজিরা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ সহায়ক। কালোজিরা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

১০. সর্দি কাশি দূর করেঃ প্রচণ্ড সর্দি বা হাঁচি হলে একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কালোজিরা। এক টুকরো নরম কাপড়ে অল্প পরিমাণে শুকনো কালোজিরা নিয়ে বেঁধে হাতের তালুতে ঘষে নিতে হবে। এতে যে গন্ধটা বের হয় তা খুবই উপকারী। এটি নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকতে হবে।

১১. চর্ম রোগঃ শরীরে চর্মরোগ দূর করতে কালোজিরার ভূমিকা রয়েছে। কালোজিরা থেকে যে তেলটি তৈরি হয়, সেটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে মালিশ করতে হবে অথবা পুরো শরীরে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।

১৪. শিশুর স্বাস্থ্যেঃ শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতেও কালোজিরার গুরুত্ব রয়েছে। তাই শিশুদের কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

১৫. কিডনিঃ কিডনিতে পাথর হলে কালোজিরা সেবনে বেশ সুফল পাওয়া যাবে। কালোজিরা যতটুকু নেবেন তার সমপরিমাণে মধু মিশিয়ে নিন। কালোজিরা গুঁড়ো করে মধু মিশিয়ে দুই চামচ করে আধা কাপ গরম জলে দিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে হবে।

১৬. জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদানঃ কালোজিরাতে রয়েছে শরীরের রোগ জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এই উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোঁড়া, সংক্রামক রোগ কিংবা ছোঁয়াচে রোগ হয় না। তাই প্রতিদিন দুই-তিনটা করে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়া চেষ্টা করুন।

News Desk

Recent Posts

ঘরে রক্তচাপ মাপার সময় যে ভুলগুলো করবেন না

হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ হলো একটি ক্রনিক রোগ। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে এই রোগ থাকে। পাশাপাশি এর কারণে শরীরের অন্যান্য…

7 hours ago

সন্তানের মোবাইল আসক্তি কমাতে কী করবেন?

ছোট্ট সোনামনির হাতে কমবেশি সবাই মোবাইল তুলে দেন কোন না কোনো সময়। তবে কিছু সময়ের জন্য মোবাইল দেখা এক সময়…

9 hours ago

ক্যানসার হবে কি না জানতে পারবেন ৭ বছর আগেই

ক্যানসারের নাম শুনলেই কমবেশি সবাই আঁতকে ওঠেন। কঠিন এই ব্যাধি থেকে বাঁচতে সচেতনতা জরুরি। ক্যানসার রোগের আগাম খবর পেতে সারা…

1 day ago

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

হাঁপানি, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও অন্যান্য শ্বাসনালির সংক্রমণজনিত রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে নেবুলাইজার ব্যবহার করা হয়। রোগী যখন ইনহেলারের…

2 days ago

বারবার পানি পিপাসা লাগা কোনো রোগের লক্ষণ নয় তো?

গরমে অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। ফলে বারবার পানি পিপাসা লাগা স্বাভাবিক। আর এ সময় প্রচুর পরিমাণ…

2 days ago

মসলা চা পানে মিলবে যেসব উপকার

দিনে বেশ কয়েকবার চায়ের কাপে চুমুক না দিলে অনেকেরই দিন কাটে না। বিভিন্ন ধরনের চায়ের মধ্যে মসলা চায়ের স্বাদও যেমন…

2 days ago