April 14, 2024 | 10:14 AM

নিজেকে আমরা সবাই অনেক ভালোবাসি। কিন্তু অন্ধ ভালবাসা অনেক সময় হতে পারে আপনার নিজের জন্যই ক্ষতিকর। সফল মানুষেরা শুধু নিজের যোগ্যতাকে নয়, জানেন দুর্বলতাকেও। আর দুর্বল দিক সবারই থাকে। এতে লজ্জার কিছু নেই। দুর্বলতাকে ঢেকে দৃঢ় চিত্তের মুখোশ পরাই বরং ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, এই কাজটি যারা করেন তারা নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনেন। কারণ সামর্থ্যের বাইরে কাজ নিয়ে ফেলেন তারা। অতিরিক্ত চাপে ভেঙে পড়েন শারীরিক-মানসিক উভয়ভাবেই। নিজেকে বুঝতে, সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে করুন এই প্রশ্নগুলো….

অন্যের চোখে নিজেকে বড় করার চেষ্টা করছেন না তো?

‘আমি সবকিছু পারি’ বলে আপনি হয়ত নিজের আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করার চেষ্টা করছেন, নিজেকেও বুঝ দিচ্ছেন যে, আপনি পারবেন। আপনি যদি কাজটাতে দক্ষ না হন তাহলে কিন্তু আদতে আপনার ফলাফল আরও খারাপ হবে। সফল ব্যক্তিরা নিজেদের ত্রুটি জানেন। তারা সেগুলো শুধরে নিতে সচেষ্ট হন, আর এভাবেই আরও দক্ষ হয়ে ওঠেন।

জীবনের একটি বড় বাস্তবতা ‘ব্যর্থতা’, সেটিকে অস্বীকার করছেন না তো?

কাজের ক্ষেত্রে হার থাকবে, জয় থাকবে, সফলতার সাথে থাকবে ব্যার্থতাও। আপনি বলছেন “ব্যার্থতার কোন সুযোগই নেই”। এই কথায় সুযোগটা বাস্তবেই উধাও হয়ে যাবে না। বরং এই মনস্তত্ত্ব আপনার মাঝে আরও চেষ্টা করার প্রবণতাকে রোধ করতে পারে। যেসব মানুষ দৃঢ়ভাব ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত থাকে তারা দেখাতে চায় যে তারা অনেক দক্ষ। পরে তারাই আবার বেশী ভেঙ্গে পড়ে। সফল মানুষেরা ব্যার্থতার সম্ভাবনাকে স্বীকার করেই তাদের পরিকল্পনা তৈরি করে। ফলে তা বেশি কার্যকর হয়।

আত্মমূল্যায়ণ নাকি অপরের মূল্যায়ণ, কোনটাকে বেশী গুরুত্ব দেন আপনি?

যেসব মানুষেরা কঠিন হওয়ার অভিনয় করে তারা অন্যের কাছে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ। অন্যের মতামত, মূল্যায়ণকে ইতিবাচক করতেই শ্রম দেয় তারা। কিন্তু একজন প্রকৃত দৃঢ় মনের ব্যাক্তি যা করেন আত্মবিশ্বাসের সাথে করেন। নিজের ভেতর থেকে তারা শক্তি পান, নিজেকে প্রমাণের জন্য যাবতীয় কাজ করেন। প্রয়োজনে সাহায্য নেন এবং নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে এগিয়ে যান।

আবেগের প্রকাশ কি আপনার চোখে দূর্বলতার লক্ষণ?

দৃঢ়তা নকলভাবে প্রকাশকারী মানুষেরা প্রায়ই যেটা করেন, তারা নিজের আবেগকে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন। তারা একমাত্র যে আবেগটি প্রকাশ করেন তা হল, রাগ। দুঃখ, ভয়, উত্তেজনা এর সবকিছুই তারা চেপে রাখেন নিজের মধ্যে যতটা সম্ভব। প্রকৃত দৃঢ় ব্যাক্তিরা নিজের আবেগকে স্বীকার করেন। তারা ভয় ভীত হন না। নিজের আবেগ নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন না। বরং তা প্রকাশ করে সেই অবস্থান থেকে ভাল অবস্থায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। বরং অযথা রাগ প্রকাশ থেকে বিরত থাকেন।

কষ্ট হলেও তা অস্বীকার করেন কী?

দৃঢ়তাহীন মানুষেরা একা একা কষ্ট সহ্য করতে পারাকে বিশেষ কৃতিত্বের বিষয় মনে করেন। তারা নিজের শরীরকে যন্ত্রের মত খাটাতে পছন্দ করেন আর এভাবে নিজেকে শক্তিশালী মনে করেন। শারীরিকভাবে কোন সমস্যা হতে থাকলেও তারা সেটা এড়িয়ে যান। এটি অবশ্যই অনেক ক্ষতিকর। একজন শক্ত মনের মানুষ নিজের চিকিৎসা করাবেন, সুস্থ হবেন এবং দ্বিগুণ উদ্দীপনায় কাজ শুরু করবেন। এতে কাজও ভাল হবে আবার নিজেও সুস্থ থাকবেন।

সব একা করতে যেয়ে প্রায়ই কি গোল পাকিয়ে ফেলেন আপনি?

মানুষ চাইলেও সব করতে পারে না।আর সব করতে না পারাটাই স্বাভাবিক। একজন দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন ব্যাক্তি এটা মেনে নেন, খুজে বের করেন কী কী তার পক্ষে আসলেই করা সম্ভব। সেই কাজগুলো ভালভাবে করেন। কিন্তু নকলভাবে নিজেকে দৃঢ় প্রকাশ করতে চাওয়া ব্যাক্তি সব কাজই করতে চান এবং পরে সামলাতে পারেন না।

নিয়ন্ত্রণই কি আপনার প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার?

মনোবল দৃঢ় না থাকলে তা থাকতে একজন দুর্বল মানুষ অন্যের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করেন। জোর করে নিজের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রকৃত মনোবল সম্পন্ন ব্যাক্তির নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রয়োজন নেই। তার ব্যক্তিত্বই তার চারপাশে প্রভাব বিস্তার করে।

নিজেকে চেনা নিজেকে গড়ে তোলার জন্য খুবই জরুরী। নিজের ভুলকে জানুন, স্বীকার করুন, শুধরে নিন। গুণকেও জানুন, প্রকাশ করুন, আত্মবিশ্বাসী হোন। এক সময় ভেতর থেকেই একজন মনোবল সম্পন্ন মানুষে পরিণত হবেন আপনি