April 14, 2024 | 5:44 AM

আপনার নিজেকে সুখী করার ক্ষমতা রয়েছে। বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, জীবনে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আনলেই, জীবনযাপন সহজেই অনেক উন্নত করা যায়।

এ প্রতিবেদনে কয়েকটি পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সুখী হতে পারবেন।

অন্য মানুষের জন্য অর্থ ব্যয় করুন

‘সাইকোলজিক্যাল বুলেটিন’ এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, নিজের বদলে অন্য মানুষের জন্য টাকা খরচ করলে আপনি বেশি সুখী বোধ করবেন। গবেষণায় 0 বলা হয়েছে, বড় মাপের দাতা লোকেরাই ছিল সবচেয়ে সুখী, তারা কত আয় করতো তা কোনো বিষয় ছিল না। তারা সবসময় বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার মাধ্যমে নিজেদের সুখ খুঁজে পেতেন।

নিজের প্রাপ্তিগুলো স্মরণ করুন

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্টিন সিলিগিম্যান প্রমাণ করেন যে, যারা প্রতি রাতে তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া তিনটি ভালো কাজের কথা লিখে রাখে তারা তুলনামূলকভাবে অনেক সুখী হয়। এমনকি এগুলো যে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে তা নয়: আপনার প্রিয়তমা আপনার দিকে তাকিয়ে হাসছে বা আপনার স্ত্রী আপনার খাবার কেনার কথা মনে রেখেছে, এগুলো ও হতে পারে।

নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোকেরা অ্যাডভেঞ্চারে যায়, নতুন অভিজ্ঞতা নেওয়ার চেষ্টা করে এবং তাদের রুটিন অনুযায়ী চলে সাধারণত তারা সুখী হয়। নতুন কিছুর চেষ্টা করা মস্তিষ্কের ফাংশন তীক্ষ্ণ এবং উদ্দীপ্ত রাখে।

আরো নীলে নিজেকে মেলে ধরুন

সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, নীল রঙের কাছে নিজেকে মেলে ধরার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, চাপ দূর হওয়া এবং সুখের প্রকাশ ঘটে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মানুষ নীল দেখে তখন তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ সুখের বৃদ্ধি ঘটায়। নীলের জন্য আমাদের ভালোবাসা পূর্বপুরুষের কাল থেকেই একটু বেশি। বিকেলে ও সন্ধ্যায় আকাশের রঙ দেখে একটি দিন ভালো অনুভুতি মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় এবং রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমের প্রত্যাশা ও দেয়।

নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

মনোবিজ্ঞানী জনাথন ফ্রিডম্যান দাবী করেন, যেসব ব্যক্তি নিজেদের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেন- হোক তা স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি, যারা লক্ষ্য নির্ধারণ করে না তাদের চেয়ে বেশি সুখী হয়।

এবং উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী রিচার্ড ডেভিডসন বলেন, একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা শুধু ইতিবাচক অনুভূতি সক্রিয় করে না, বরং নেতিবাচক আবেগগুলোও দমন করতে সহায়তা করে।

নিরপেক্ষ থাকুন

‘দ্য আল্টিমেট হ্যাপিনেস প্রেসক্রিপশন : সেভেন কি টু জয় অ্যান্ড এনলাইনমেন্ট’ বইয়ের লেখক ডা. দীপক চোপড়া বলেন, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা নিজেকে খুশি রাখার সবচেয়ে ভালো উপায়। তিনি বলেন, ‘আপনার মানসিক শক্তির ৯৯ শতাংশ রক্ষা করতে পারবেন এবং সুখী বোধ করবেন, যদি আপনি আপনার দৃষ্টিকোণ প্রতিহত করা বন্ধ করতে পারেন।

উপাসনালয়ে যান

একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব লোক নিয়মিত উপাসনালয়ে যান তারা বিধর্মীদের তুলনায় বেশি সুখী হয়ে থাকেন। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ব্রুস হ্যাডি, ২৫ বছর বয়সি মানুষের একটি গ্রুপে সুখের গবেষণা করে বের করেন যে, যারা উপাসনালয়ে গিয়েছিল তাদের স্বাস্থ্য স্লিম ছিল, তারা ক্যারিয়ার সম্পর্কে উদ্বেক এড়াতে সক্ষম হয়েছিল এবং মানসিকভাবে স্থিতিশীল ছিল।

প্রতি রাতে অন্তত ছয় ঘন্টা ঘুমান

ব্রিটিশ কোম্পানি ইউ ভ্যালি একটি গবেষণায় জানিয়েছে, প্রতি রাতে ৬ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের ব্যাঘাতহীন ঘুম মানুষকে সুখী করে তোলে। গবেষণায় ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মানুষদের তাদের সুখের স্তরকে এক থেকে পাঁচ রেট করা বলা হয়েছিল। যারা প্রতি রাতে ৬ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ঘুমায়, তারা স্তরের সবচেয়ে সুখী মানুষ ছিল।

আপনার যাতায়াত ২০ মিনিটে করুন

যে ব্রিটিশ গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত ছয় ঘণ্টা করে ঘুমানোর মাধ্যমে সুখী হওয়ার কথা বলা হয়েছে, সে গবেষণায় সুখীরা জানিয়েছেন, তারা মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছায়।

আপনার যাতায়াতের দৈর্ঘ্য বেশি হলে তা আপনার স্বাস্থ্য এমনকি ফিটনেসকেও প্রভাবিত করে।

অন্তত ১০ জন ভালো বন্ধু থাকা নিশ্চিত করুন

নোটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্করা জানিয়েছে যাদের ১০ জন ভালো বন্ধু আছে, তারা যাদের ৫ জন বা তারও কম বন্ধু আছে সেসব মানুষদের তুলনায় বেশি সুখী।

বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ‘যত বেশি তত আনন্দ’ কথাটা সত্যিই কাজের। একজন মানুষের যত বেশি বন্ধু আছে, সে তত বেশি সুখী। গবেষণায় বলা হয়েছে, আমাদের নিজের ব্যক্তিগত সুখ সমৃদ্ধির জন্য বেশি পরিমানে বন্ধুত্ব করা উচিত।

বিষন্ন ভাব নয়

আপনি দুঃখী থাকা সত্ত্বেও যখন সুখে থাকার অভিনয় করবেন, সত্যিই এটি আপনাকে সুখী করে তুলবে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু হাসির অভিনয় অনেক মানুষকে সুখের অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করেছে।

নিজেকে একটি রোমান্টিক সম্পর্কে রাখুন

আমাদের সুখের ওপর খুব বড় একটা প্রভাব রাখে, অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, যারা সম্পর্কের মধ্যে থাকে তাদের অন্যান্য মানুষের চেয়ে বেশি সুখী হতে দেখা যায়, যে সম্পর্কের মধ্যে শক্তিশালী অঙ্গীকার থাকে, সে সম্পর্ক বেশি সুখের হয়।