March 27, 2024 | 6:08 PM

হৃদযন্ত্রের নিজস্ব রক্ত সরবরাহ হঠাৎ যে কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে হার্ট অ্যাটাক হয়। হার্টের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এই ঘটনাকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলা হয়।

বিভিন্ন কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ হলো রক্তনালি সংক্রান্ত হৃদরোগ বা করোনারি হার্ট ডিজিজ। এছাড়া রক্তে অক্সিজেনের অভাব অথবা মাদকের অপব্যবহারের কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। কিছু বিষয়ের কারণে করোনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন-

>> ধূমপান
>> উচ্চ রক্তচাপ
>> রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকা
>> অস্বাস্থ্যকর চর্বিবহুল খাবার খাওয়া
>> শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
>> অতিরিক্ত ওজন
>> ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায় কী?

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো জীবনধারা পরিবর্তন। যাদের এরই মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তারাও সুস্থ জীবনধারা মেনে চলে পুনরায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারবেন।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের প্রধান উপায় ৩ উপায় হলো- ধূমপান থেকে বিরত থাকা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা ও স্বাস্থ্যকর-সুষম ডায়েট মেনে চলা।

>> ধূমপান ধমনীকে শক্ত ও সরু করে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে ও রক্তচাপ বাড়ায়। এভাবে এটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই ধূমপান ত্যাগ করুন।

>> ডায়েটে চর্বিবহুল খাবার খেলে ধমনিগুলো ক্রমশ শক্ত ও সরু হতে থাকে। ফলে রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ আরও বাধাগ্রস্ত হয় ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

উচ্চ মাত্রায় চর্বিবহুল খাবার খাওয়া চালিয়ে গেলে ধমনীর ভেতরে আরও কোলেস্টেরল প্ল্যাক জমতে থাকে। এর কারণ হলো, চর্বিবহুল খাবারে অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল থাকে। বিশেষ করে উচ্চ মাত্রায় স্যাচুরেটেড চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন-

>> ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার
>> চর্বি ও চর্বিযুক্ত মাংস
>> ডালডা, ঘি ও মাখন
>> সসেজ
>> চিজ
>> ক্রিম বা ননী
>> কেক ও বিস্কুট
>> পেস্ট্রি ও পিৎজা
>> নারকেল তেল ও পাম তেল দিয়ে তৈরি খাবার (যেমন- কনডেন্সড মিল্ক, চকলেট ও আইসক্রিম)

>> বেশি বেশি ফলমূল, শাকসবজি, রুটি-পাউরুটি (বিশেষ করে লাল আটার রুটি ও হোলগ্রেইন পাউরুটি) ও মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। মাংস খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। ডালডা, মাখন, ঘি ও চিজের পরিবর্তে অলিভ অয়েলের মতো উদ্ভিজ্জ তেল খাওয়ার অভ্যাস করুন।

আর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট জাতীয় ওষুধ সেবন করবেন না। কিছু সাপ্লিমেন্ট (যেমন: বেটা-ক্যারোটিন) শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

>> দৈনিক ব্যায়াম করার ফলে হার্ট ও রক্তনালিগুলো সুস্থ থাকে। এভাবে রক্তচাপ কমে আসে। নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপ কমানো আরও সহজ হয়। সাধারণত হাঁটা, সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানোর মতো কম শ্রমসাধ্য ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

>> রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগলে তা রোগীর ধমনী ও হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার মাধ্যমে প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

>> পাশাপাশি খাবারে লবণের পরিমাণও কমিয়ে ফেলতে হবে। লবণে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। যত বেশি লবণ খাওয়া হবে রক্তচাপও তত বাড়তে থাকবে। দিনে দেড় গ্রামের বেশি লবণ খাবেন না।

>> ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত হলে হার্টকে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এতে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমবে।