আপনার সতর্ক থাকা উচিৎ ওজন কমানো নিয়ে ১০টি ভুল তথ্য সম্পর্কে, জেনেনিন

Written by News Desk

Published on:

ওজন কমানো সহজ কাজ না। ইন্টারনেটে থাকা প্রচুর ভুল তথ্যের কারনে ওজন কমানো আরো কঠিন হয়ে যায়। এ কারনে এই আর্টিকেলে ওজন কমানো সম্পর্কে ১০টা সবচেয়ে বেশী প্রচলিত ভুল তথ্য উল্লেখ করা হলো। ওজন কমানো নিয়ে যে ১০টি ভুল তথ্য সম্পর্কে আপনার সতর্ক থাকা উচিৎ

১) সব ক্যালরি সমান : ক্যালরি হচ্ছে শক্তি মাপার একটা উপায়। আপনার যে খাবার খান, তাতে ক্যালরি থাকে এবং আপনার শরীর বিভিন্ন কাজে সেই ক্যালরি ব্যায় করে। আপনি যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে আপনার শরীর প্রতিদিন যতটুকু ক্যালরি ব্যায় করে, আপনাকে তার চেয়ে কম ক্যালরি খেতে হবে। একজন স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক মানুষের স্বাধারণত প্রতিদিন ২৫০০ ক্যালরি দরকার। যদি আপনি প্রতিসপ্তাহে হাফ কেজি ওজন কমাতে চান, তাহলে প্রতিদিন ২০০০ ক্যালরির বেশি খাওয়া যাবে না। একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর সাধারণত প্রতিদিন ২০০০ ক্যালরি দরকার এবং প্রতিসপ্তাহে হাফ কেজি ওজন কমাতে চাইলে ১৫০০ ক্যালরি মতো খেতে হবে।

এগুলো মানে এই না যে সকল ক্যালরি আপনার শরীরে একই প্রভাব ফেলবে। ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য শরীরের ভিতরে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করে। যেমন একটা তাজা আপেল থেকে পাওয়া ক্যালরি, আইসক্রিম থেকে পাওয়া ক্যালরির মতো কাজ করবে না। ওজন কমাতে চাইলে শর্করা ও ফ্যাট কম খান এবং আমিষ বেশি খান। আমিষ মেটাবোলিজম বাড়ায় এবং ক্ষুধা কমায়। এর ফলে ওজন কমানো সহজ হয়।

২) ওজন টানাভাবে কমানো সম্ভব : ঠিকভাবে খেলে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলেই যে প্রতিসপ্তাহে আপনার ওজন কমবে, তা ভাবা ভুল। কিছু সপ্তাহে আপনার ওজন একটু বাড়তে পারে, কিছু সপ্তাহে কমতে পারে। এটা নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণ নেয়। শরীরের ওজন কয়েক কেজি বাড়া কমা একেবারে স্বাভাবিক। যেমন মাঝেমধ্যে আপনার পাচনতন্ত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাদ্য জমা থাকতে পারে অথবা আপনার শরীর বেশি জল ধরে রাখতে পারে। এর ফলে ওজন বেশী হত পারে। আপনার ওজন যদি লং-টার্মে কমতে থাকে, তাহলে মাঝেমধ্যে একটু বাড়লে সেটা নিয়ে চিন্তা করেন না।

৩) ঔষধ খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব :  ওজন কমানোর ঔষধের বিজ্ঞাপন সব জায়গায় দেখা যায়। এগুলো খেলে নাকি আপনার ওজন ম্যাজিকের মতো কমে যাবে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে এসব ঔষধ ওজন কমাতে কোন সাহায্য করে না। কিছু কিছু মানুষের এসব ঔষধ খাওয়ার সময় ওজন কমে। তবে সেটা ঔষধের কারণে কমে না। এসব ঔষধ খাওয়ার সময় মানুষ সাধারণত খাবার হিসাব করে খায়, ব্যায়াম করে। এ কারণে ওজন কমে।

৪) শর্করা খেলে ওজন বাড়ে : শর্করা কম খেলে ওজন কমে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিত শর্করা কম খেলে এবং আমিষ বেশি খেলে ক্যালরি মাপা ছাড়ায় ওজন কমে। তার মানে এই না যে শর্করার কারণে ওজন বাড়ে। চিনি, ফলের জুস (লেবু বাদে), আটার তৈরি জিনিস, চাল, চকোলেট, ইত্যাদি শর্করা খেলে ওজন বাড়ে। তবে সবজি, ফল, বাদাম, ইত্যাদি শর্করাযুক্ত খাবার অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।

৫) ফ্যাট খেলে ওজন বাড়ে : যেহেতু আমরা শরীরের চর্বি কমানোর চেষ্টা করছি, সেহেতু ফ্যাট খাওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু বিষয়টা এতো সহজ না। চর্বিতে এমন কোন বিশেষ জিনিস নেই, যার কারণে ওজন বাড়ে। তবে এটা সাধারণত যেসব খাদ্যে প্রচুর ক্যালরি থাকে, সেসব খাদ্যে থাকে। যদি আপনি ক্যালরি মেপে খেতে পারেন, তাহলে চর্বি খেলে আপনার ওজন বাড়বে না। অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বেশি ফ্যাট এবং কম শর্করা খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব। অতিরিক্ত শর্করা এবং ক্যালরিযুক্ত খাদ্যের সাথে ফ্যাট খেলে অবশ্যই ওজন বাড়বে। তবে এটা শুধুমাত্র ফ্যাটের জন্য হবে না।

৬) ওজন কমানোর জন্য সকালের খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ :  কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যারা সকালের খাবার খায় না, তাদের ওজন স্বাধারণত বেশি হয়। এতে প্রচুর মানুষ বিশ্বাস করা শুরু করেছে যে ওজন কমানোর জন্য সকালের খাবার খেতেই হবে। কিন্তু এটা হওয়া সম্ভব যে – যারা সুস্থ্য জীবনধারা পরিচালনা করে, তারা নিয়মিত সকালবেলা খাবার খায়। সাম্প্রতিক একটি গবেষণাতে দেখা গিয়েছে মানুষ সকালবেলা খাবার খাক বা না খাক, এটা সরাসরি তাদের ওজনের উপর কোন প্রভাব ফেলে না।সকালে খাবার খেলে যে মেটাবোলিজম বাড়ে বা অল্প অল্প করে দিনে কয়েকবার খেলে ক্যালরি বেশি পুড়ে, সেটাও ভুল কথা।

৭) ডায়েটের সাহায্যে ওজন কমানো সম্ভব : ওজন কমানোর ডায়েট অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রায় সবাই ডায়েটের সাহায্যে ওজন কমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে ডায়েট দীর্ঘমেয়াদী সল্যুশন হিসেবে কাজ করে না। ৮৫% মানুষ ডায়েটের সাহায্যে ওজন কমানোর এক বছর পরে আবার আগের অবস্থায় ফেরত যায়। এছাড়া দেখা গিয়েছে যে যারা ডায়েট করে, ভবিষ্যতে তাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আপনি যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে আপনাকে শুধু ডায়েট করলে হবে না। আপনার পুরো মানসিকতা বদলানো লাগবে। আপনার জীবনধারা পরিবর্তন করে একজন স্বাস্থ্যকর এবং সুখী মানুষ হবার চেষ্টা করুন। আপনি যদি ব্যায়াম করেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং ঠিকমতো ঘুমান, তাহলে আপনার ওজন কমবে। কয়েক মাসের জন্য ডায়েট অনুসরণ করে প্রতি রাত্রে খালি পেটে ঘুমাতে গেলে লং-টার্মে কোন ফল পাওয়া যাবে না।

৮) ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করা লাগবে : ওজন কমাতে হলে আপনার শরীর প্রতিদিন যতটুকু ক্যালরি ব্যায় করে, আপনাকে তার থেকে কম ক্যালরি খেতে হবে। তাই ওজন কমানোর জন্য আপনাকে ব্যায়াম করার দরকার নেই। এর চেয়ে কম খাওয়া বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ব্যায়াম করে খুব বেশি ক্যালরি পুড়ে না। একজন ৫০ কেজি ওজনের মানুষ ১০ মিনিট দৌড়ালে ১১৪ ক্যালরি পুড়ে। ওজন যদি ৮০ কেজি হয়, তাহলে ১৭০ ক্যালরি পুড়ে। তবে অধিকাংশ সময় এই অল্পটুকুই অনেক হতে পারে। এছাড়া ব্যায়ামের অনেক উপকার আছে। তাই সকলের ব্যায়াম করা উচিত। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। দৌড়ানো অথবা সাইকেল চালানো ব্যায়ামের মধ্যে পড়ে। যদি আপনার ওজন খুব বেশী হয়, তাহলে এর চেয়ে বেশি সময় ব্যায়াম করতে পারলে ভালো। আপনার যদি ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকে, তাহলে প্রথমে প্রতিদিন ১০ মিনিট করে দৌড়ানোর চেষ্টা করুন। আস্তে আস্তে সময় বাড়ান। যদি প্রথম থেকেই প্রতিদিন আধাঘন্টা করে ব্যায়াম করার চেষ্টা করেন, তাহলে অল্প কয়েকদিন পরে ধৈর্য হারাবেন।

৯) জুস খেয়ে দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব :  ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামে এটার বিজ্ঞাপন প্রচুর দেখা যায়। এটাতে আপনাকে কয়েক দিনের জন্য অন্যান্য খাবারের বদলে কয়েক গ্লাস করে জুস খেতে হবে। এর ফলে, বিজ্ঞাপন দাবী করে, আপনার ওজন কমে যাবে। এটা করলে এটা ঠিক যে আপনার শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে কম ক্যালরি পাবে। তবে ফলের জুসে প্রচুর মিষ্টি থাকে যার কারণে ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারে এবং ওজন বাড়তে পারে। এছাড়া আপনি যদি শুধু জুস খাওয়া শুরু করেন, তাহলে আপনার শরীর বুঝতে পারবে না কখন আবার খাবার খেতে পাবে। এর ফলে আপনার মেটাবোলিজম কমে যাবে এবং আপনার শরীর কম ক্যালরি পোড়াবে। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে জুস খাওয়ার দিন শেষ হলে ক্ষুধার কারনে আপনি প্রচুর খাবার খাবেন। এতে ওজন আবার বেড়ে যাবে।

১০) সবার সমানভাবে ওজন কমে : দেখা গেলো আপনারা দুই বন্ধু একসাথে ওজন কমানোর চেষ্টা করা শুরু করেছেন। আপনার একই খাবার খাচ্ছেন, একই সমান ব্যায়াম করছেন, একই সমান ঘুমাচ্ছেন। কিন্তু ২ সপ্তাহে তার ৫ কেজি ওজন কমেছে, আপনার কোন ওজন কমে নি। এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। একেকজনের শরীর একেকভাবে কাজ করে। কেউ কেউ দ্রুত ওজন কমাতে পারে, কারো কারো একটু বেশি সময় লাগে। তাই ধৈর্য্য না হারিয়ে ঠিকমতো খান এবং ব্যায়াম করতে থাকুন। আপনার ওজন কমবেই।

Related News