April 13, 2024 | 5:08 PM

মধুর ব্যবহার ডায়েটে নতুন নয়। ওজন হ্রাস থেকে শুরু করে শক্তিবৃদ্ধির ডায়েট, সবেতেই মধু যোগ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা।সকালে উঠে গরম জল লেবু–মধু দিয়ে খেয়ে, তার পর ব্যায়াম করে দেখুন কী হয়, দ্বিগুণ উৎসাহে ব্যায়াম করতে পারবেন৷ ব্যায়াম শেষে গ্রিন টি–তে মধু মিশিয়ে খান৷ তরতাজাভাব যেমন আসবে, পুষ্টিও পাবেন তেমন৷ব্রেকফাস্টে ফলটলের সঙ্গে বা সিরিয়ালে মধু মিশিয়ে খেলে তো কথাই নেই৷ সারা দিনের শক্তির জোগান মোটামুটি সে–ই দিয়ে দেবে৷ শেষ দুপুরের ঘুম-ঘুমভাব কাটাতেও কাজে আসবে মধু মেশানো গ্রিন টি৷ প্রচুর চিনি দিয়ে বানানো চা–কফি বা ঠান্ডা পানীয়র স্বাস্থ্যকর বিকল্প৷

কাজেই এবার থেকে চিনির পাট তুলে দিয়ে মধু মজুত রাখুন হাতের কাছে৷ চাক ভাঙা মধুতে যে বিপুল পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আছে, সে করতে পারে না হেন কাজ নেই৷ রান্না করতে গিয়ে অল্প পুড়ে গেলে কিংবা কেটে গেলে এক ফোঁটা মধু লাগিয়ে দিলেই হয়৷ কারণ এতে আছে জীবাণু ও ছত্রাকনাশক গুণ৷ ঠান্ডা লেগে গলা খারাপ হলেও খেতে পারেন৷ আবার প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে শরীরের উপকারি ব্যাকটিরিয়ারা যদি প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়, সেখানেও অদ্বিতীয় মধু৷বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হিসাবে এর তুলনা নেই৷ অর্থাৎ এর প্রভাবে শরীরের উপকারি ব্যাকটেরিয়ারা আবার নতুন করে জেগে ওঠে৷

নিয়মিত মধু খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের ক্ষতি করার ক্ষমতা কমে যায়৷ কমে রক্তচাপ৷ স্ট্রোক, ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও কমতে পারে বলে জানা গিয়েছে৷ভাবছেন, এত মধু খেলে ওজন বাড়বে, আর তার হাত ধরে বাড়বে হৃদরোগের আশঙ্কা? চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করছেন, কারণ আপনি চিনির বদলে মধুকে ধরেছেন৷ অর্থাৎ পুষ্টিহীন ক্যালোরির বদলে পুষ্টিকর ক্যালোরিকে সঙ্গী করেছেন৷ কাজেই ওটুকু মধুর কারণে অন্তত ওজন বাড়বে না৷ বরং কমবে খানিকটা৷ বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সে রকমই প্রমাণিত হয়েছে৷

মধু নিয়ে গবেষণা পরিসংখ্যানের হিসাব আগে থেকেই ছিল৷ কারণ মধু তো আর আজকের জিনিস নয়, সভ্যতার আদি যুগ থেকেই গ্রিস, ইজিপ্ট, রোম, চিনের পাশাপাশি আমাদের দেশেও এর ওষধী গুণ সম্বন্ধে মানুষ ওয়াকিবহাল ছিলেন৷ রূপচর্চার অঙ্গ হিসেবে এর ব্যাপক প্রচলন ছিল৷ এর পর সবকিছুকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু হয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা৷ প্রতিটি পরীক্ষাতেই পাশ করে যায় সে৷

হার্টের উপর মধুর প্রভাব বুঝতে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলকে টেষ্টটিউবে নিয়ে তাতে মধু ঢ়েলে বিজ্ঞানীরা দেখেন এলডিএল যেভাবে মূলত হার্টের ক্ষতি করে, অক্সিজেনের সঙ্গে মিশে জারিত হয়ে কনজুগেটেড ডাইন নামের উপাদান তৈরি করে, সেই পদ্ধতিকে ধীর করে দেয় মধু৷ এই পদ্ধতি ধীর হওয়া মানে রক্তবাহী ধমনিতে কম চর্বি জমা— যাকে চলতি কথায় বলে ধমনি ব্লক হওয়া৷ যার ফলে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, সবেরই আশঙ্কা কিছুটা কমে৷

২০০৮ সালে ইরানের গবেষকরা ৩৮ জন মোটা মানুষকে প্রতি দিন ৭০ গ্রাম করে প্রাকৃতিক মধু খাওয়ান৷ ৩০ দিন পর দেখা যায় অতখানি করে মধু খাওয়া সত্ত্বেও তাঁদের ওজন ও শরীরে মোট চর্বির পরিমাণ সামান্য কমেছে, আর কোলেস্টেরল কমেছে বেশ খানিকটা৷ পরবর্তী কালে ইজিপশিয়ান বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশেষ ধরনের রক্তচাপ বা ভেনাস ব্লাড প্রেশার কমাতেও চাকভাঙা মধুর ভূমিকা আছে৷ অর্থাৎ হার্ট ভাল রাখতে মধুর ভূমিকা মোটামুটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়৷তবে ডায়াবিটিস বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে মধু খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।