March 28, 2024 | 4:12 PM

বর্তমান সময়ে এ বিষয়টা নিয়ে অনেকেই আতংকিত এবং চিন্তিত। চলুন আজকে ছোটোখাটো একটা ট্যুর দিয়ে আসি কোলন ক্যান্সারের শহরে।
তবে এর আগে জানা জরুরি যে,
কোলনটা আসলে কি জিনিস বা এর কাজ কি ?
একটা খাবার যখন আমার খাই,তখন এটি মুখ,খাদ্যনালী পেরিয়ে প্রথমে পাকস্থলীতে এসেই জমা হয়। এরপর থেকেই পরিপাকক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তারপর পাকস্থলী পেরিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে বাকি পরিপাকক্রিয়া শেষ করে বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে। এই যে কোলন,এটি মূলত এই বৃহদন্ত্রেরই অংশ।
যার প্রধান কাজই হচ্ছে শোষণ এবং খাদ্যের অপাচ্য অংশকে শরীর থেকে বের করার জন্য এক বিশেষ পদ্ধতিতে ঠেলে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে যেটি মল আকারে শরীর থেকে বের হয়। আর এই সময়ে এটি খাদ্যের অপাচ্য অংশ থেকেও জল ,আয়ন,ভিটামিন এগুলো শোষণ করে নেয়।
এখন কথা হচ্ছে এই বৃহদন্ত্রটাকে যদি কেটে ফেলে দেয়া হয় তাহলে কি মানুষ বাঁচে?
অবশ্যই বাঁচে তবে সেক্ষেত্রে ক্ষুদ্রান্ত্রের সাথে শরীরের বাইরে একটি প্যাকেট আকারের কিছু বেধে দিতে হবে। যদিও এ থেকে পরবর্তীতে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। যাইহোক,এবার আসল কথায় আসি।
‘কোলন ক্যান্সার’
বৃহদন্ত্র মূলত চারটা স্তর/লেয়ার নিয়ে গঠিত। এর সবথেকে ভেতরের স্তরেই প্রথমে কিছু অস্বাভাবিক কোষগঠন শুরু হয় এবং একটা পলিপ আকার ধারণ করে।তখনও কিন্তু এটা ক্যান্সার কোষে রূপান্তরিত হয় নি। এরপর আস্তে আস্তে এটি ক্যান্সার কোষে রূপান্তরিত হলে ধারাবাহিকভাবে আশেপাশের বাদবাকি স্তরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং সবশেষে অন্যান্য অঙ্গেও।
কোলন ক্যান্সারের মূলত পাঁচটা স্টেজ/ধাপ আছে।
(০,১,২,৩,৪)
০,১ এবং ২ এ তিনটি ধাপকে সাধারণত প্রারম্ভিক ধাপ বলা হয়।
এ সময়ের লক্ষ্মণগুলো হলো,
১)কোষ্ঠকাঠিন্য
২)ডায়রিয়া
৩)মলের রঙ,আকৃতির পরিবর্তন
৪)মলের সাথে রক্ত যাওয়া
৫)পেটে অতিরিক্ত গ্যাস
৬)পেট ফাঁপা
৭)পেট ব্যাথা
বাকি ধাপগুলো মূলত লেট স্টেজ বা শেষদিকের গাঢ় সংক্রমণের ধাপ।
এ সময়ের লক্ষ্মণগুলো হচ্ছে,
১)অতিরিক্ত রকম অবসাদগ্রস্ততা/ক্লান্তি
২)কোনো কারণ ছাড়াই দূর্বলতা
৩)ওজন কমে যাওয়া
৪)মলের পরিবর্তনটা পূর্ববর্তী মাসের চেয়েও বেশি
৫)মলত্যাগের পরেও এমন একটা অনুভূতি যেন মনে হচ্ছে পরিপূর্ণভাবে মলত্যাগ হয়নি।
এটা কখনোই ঠিক না হওয়া।
৬)বমি
এরপর যখন ক্যান্সারটা কোলন ছাড়িয়ে অন্যান্য অঙ্গেও চলে যাবে তখন যেসব লক্ষ্মণগুলো দেখা যায় সেগুলো হলো,
১)জন্ডিস
২)হাত পা ফুলে যাওয়া
৩)শ্বাসকষ্ট
৪)দীর্ঘকালীন মাথাব্যথা
৫)চোখে ঝাপসা দেখা
৬)অস্থি/হাড়ের ভঙ্গুরতা
প্রথমদিকে কোলন ক্যান্সার ব্যাপারটা ঠিক বোঝা যায় না। এজন্যই অধিকাংশ রোগীরা যখন ডাক্তারের কাছে আসেন বা তার এ রোগটি যখন নির্ণয় হয় ততক্ষণে ক্যান্সারটা প্রারম্ভিক পর্যায় ছাড়িয়ে স্টেজ ৩ বা ৪ এ চলে যায়।
এবার দেখা যাক কোলন ক্যান্সারে ঝুঁকিপূর্ণ কারা বা কাদের ক্ষেত্রে এ রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি –
১)বয়স্ক মানুষঃ যাদের বয়স ৫০ বা তার অধিক
তারা একটু বেশিই ঝুঁকিপূর্ণ।
যদিও এটি সব বয়সী মানুষেরই হতে পারে তবুও কোলন ক্যান্সারে আক্রান্তের অধিকাংশই পঞ্চাশোর্ধ্ব।
২)আপনার যদি আগে কখনও কোলন ক্যান্সার হয়ে থাকে কিংবা বৃহদন্ত্রের মধ্যে পলিপ সমস্যা অথবা পূর্বে কখনো বৃহদন্ত্রের ক্ষতজনিত রোগে ভুগে থাকেন তাহলে আপনি এই ঝুঁকিপূর্ণ সীমানায় আছেন।
৩)আপনার পরিবারের কারো যদি কখনও এ রোগ হয়ে থাকে মানে রক্তের সম্পর্কের কেউ।
৪)উচ্চ চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ পক্ষান্তরে শাকসবজি জাতীয় খাবার কম গ্রহণ।
৫)আপনি যদি কোনোরূপ কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করে সারাদিন অফিসে বা স্কুল কলেজে বসে থাকেন বা প্রত্যহ এ ধরনের কম শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করে থাকেন।
৬)ডায়াবেটিস
৭)অতিরিক্ত শারীরিক ওজন
৮)সিগারেট,মদ্যপান
৯)আমেরিকান,আফ্রিকানদের তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে এ রোগটি।
১০)প্রতিদিন নাইট শিফটে যারা কাজ করেন।

এবার আসি সমাধানে বা যেসব কাজ করলে এই ঝুঁকিটা এড়ানো যাবে।
প্রথমেই লাল মাংস তথা গরু বা শূকরের মাংস খাওয়া কমাতে হবে একইসাথে প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস যেমন হট ডগ,গ্রিল এগুলোও পরিহার করা।
চর্বিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকা। এগুলোতে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ যেমন শাকসবজি ফলমূল এগুলো বেশি বেশি খাওয়া,
উচ্চতা অনুযায়ী শারীরিক ওজন(BMI) ঠিক রাখা।
নিয়মিত ব্যায়াম করা(অন্তত ৩০মিনিট)।
বিড়ি,সিগারেট,মদ এগুলো পরিহার করা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
বয়স ৫০ এর বেশি হলে বছরে একবার হলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা; আর যদি পরিবারে এ রোগ থেকে থাকে তাহলে এ ব্যাপারে বাকিদেরকেও বাড়তি সতর্কতায় থাকতে হবে।