April 19, 2024 | 3:47 PM

মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের সময় পরিবর্তন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ইত্যাদি অজ্ঞান হয়ে পড়ার কারণ । এই সাধারণ পরিস্থিতিগুলোই প্রাথমিক পর্যায়ের হার্ট ফেইলিওরের সংকেত দেয়। এর ফলে করোনারি হার্ট ডিজিজের মতো হৃদরোগও দেখা দিতে পারে। জীবনের কোনও না-কোনও পর্যায় এসে ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩.৫ শতাংশ নারী এই সমস্যায় আক্রান্ত হন।

মানুষ অজ্ঞান হয় কেন?

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়াকে সিংকোপ বলা হয়ে থাকে। হৃদযন্ত্র মস্তিষ্কতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করে সরবরাহ করতে না পারলে এমন হয়। এরফলে কোন ব্যক্তি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে পারেন, আবার কিছুক্ষণ পর সুস্থ হয়ে জ্ঞান ফিরে পেতে পারেন। অস্বাভাবিক হৃদগতির কারণে এমন হয়ে থাকে। সঠিক সময় চিকিৎসা না করালে স্ট্রোক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট পর্যন্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

প্রাণসংশয় হতে পারে?

অনেকের ভুল ধারণা যে শুধু স্নায়ু সমস্যার কারণে সিংকোপ ঘটে। এ ক্ষেত্রে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই আছেন যারা অজ্ঞান হয়ে পড়লে এবং প্রাথমিক স্তরেই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় মাথা না-ঘুরিয়ে বা প্রাক-সিংকোপের কোনও লক্ষণ দেখা না-দিয়েই কার্ডিয়াক সিংকোপ ঘটে যেতে পারে।

যে কারণগুলো জ্ঞান হারানো ব্যক্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে

>অ্যারিদমিয়া বা হার্টের ছন্দ নষ্ট হওয়ার কারণে ব্যক্তি জ্ঞান হারাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শরীরের অন্যান্য অংশে অস্বাভাবিক রক্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর ফলে কোনও ক্ষতি হয় না। তবে প্রাথমিক পর্যায় এটি চিহ্নিত করা না-গেলে প্রাণ সংশয়কারী হয়ে পড়তে পারে।

> অ্যারোটিক ডিসেকশন অত্যন্ত বিরল একটি পরিস্থিতি। শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত সংবহনকারী বৃহৎ ধমনীতে ফাটল বা ক্ষত দেখা দেয়। জ্ঞান হারানো এর প্রাথমিক লক্ষণ।

> অ্যারোটিক ভালভ স্টেনোসিস হলে জন্ম বা বার্ধক্যের সময় হৃদযন্ত্র ও অ্যারোটার মাঝের ভালভ সংকীর্ণ হয়ে যায়।

> বারবার জ্ঞান হারানোর ফলে শরীরের যেকোনও অংশে আঘাত লাগার আশঙ্কা থাকে। মাথা বা হাড়ে আঘাত লাগলে তা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।

অজ্ঞান হওয়ার লক্ষণ

ধড়ফড় করা, গা গোলানো, ব্ল্যাকআউট, মাথা হাল্কা হয়ে পড়া বা মস্তিষ্কের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, হঠাৎ পড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, দৃষ্টির সমস্যা, মাথা ব্যথা, ত্বক সাদা হয়ে যাওয়া

সমস্যার সমাধান

>কখন, কবে, কতবার অজ্ঞান হচ্ছেন, তা লিখে রাখুন। জ্ঞান হারানোর পিছনে কারণ বুঝতে এটি চিকিৎসকদের সাহায্য করবে। মনে রাখবেন অজ্ঞান হয়ে পড়ার ফলে আপনার প্রাণ সংশয় পর্যন্ত হতে পারে। তাই উপেক্ষা করবেন না।

> প্রাক-সিংকোপ লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মাথা ঘোরা, গা গোলানো, দুর্বলতা, ক্লান্তি, দৃষ্টিশক্তিতে পরিবর্তন এই লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম।

> উপরিউক্ত কোনও লক্ষণ দেখা দিলে বা জ্ঞান হারাতে চলেছেন বুঝতে পারলে বসে বা শুয়ে পড়ুন। এর ফলে আঘাত লাগা থেকে বেঁচে যেতে পারেন। পাশাপাশি মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলও ভালো ভাবে হবে।

> জীবনযাপন প্রণালীতে পরিবর্তন ও থেরাপির সাহায্যে সিংকোপ ঠিক করা যায়। এ ক্ষেত্রে সুষম আহার, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং প্রতিদিন ব্যায়াম করা অপরিহার্য।

> রক্তচাপ কমে গিয়ে ব্ল্যাকআউট হলে কিছু ঘরোয়া উপায় করতে পারেন, এ ক্ষেত্রে লবন খাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান এবং অন্যান্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

> অস্বাভাবিক হারে কম হৃদগতি (ব্রাডিকার্ডিয়া)-র কারণে সিংকোপ হলে পেসমেকার বসাতে হতে পারে। এই ছোট যন্ত্রটি হৃদয়ে শক্তিশালী ইলেকট্রিক্যাল সিগনাল পাঠিয়ে অনিয়মিত হৃদগতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

> আবার হৃদগতি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি (ট্যাকিকার্ডিয়া) পেলে আইসিডি বা ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিওভার্টার-ডেফিব্রিলেটার নামক যন্ত্র কাজে লাগতে পারে।