March 29, 2024 | 7:58 AM

চাকরির ইন্টারভিউ এমন একটি জায়গা যেখানে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ও চৌকস ব্যক্তিরাও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যান। যতই স্মার্ট, মেধাবী ও যোগ্য চাকরি প্রত্যাশী হোন আপনাকে ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিতেই হবে। ইন্টারভিউয়ে আপনার দক্ষতা উপস্থাপন করতে হবে। এবং আপনি প্রথম সুযোগে দক্ষতার ছাপ রাখার যে সুযোগ পাবেন দ্বিতীয়বার সে সুযোগের সম্ভাবনা থাকবে না। তাই ইন্টারভিউয়ে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করার জন্য ১০ টি কৌশল আয়ত্ত করে নিন। যা আপনাকে সাফল্যের পথে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শরীরের ভাষায় যোগাযোগ করুন সব বলে দেয়া যায় না। নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন তা আপনার আত্মবিশ্বাসকে দারুণভাবে ব্যাখ্যা করে। সোজা হয়ে দাঁড়ান, আই কন্ট্যাক্ট করুন এরপর অন্তঃসম্পর্ক তৈরি করে দৃঢ়ভাবে ভাবে হ্যান্ডশেক করুন। আপনার শারীরিক উপস্থাপনায় ইন্টারভিউ পর্বের দারুণ সূচনা হতে পারে অথবা দ্রুতই শেষ হয়ে যেতে পারে।

পোশাক নিয়ে সচেতন হোনঃ আপনার ইচ্ছা মতন পোশাক-পরিচ্ছদ এখন ইন্টারভিউতে অনুমোদিত নয়। আপনি কোন ধরনের পোশাক পরিধান করে ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হবেন এটা জানা অতি আবশ্যক কেননা এই ধাপটাই আপনাকে একজন ভালো প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি দেবে। স্যুট-টাই পরে যেতে পারেন। কোনো পোশাক কোম্পানির বিধিবহির্ভূত হলে আপনি বিবেচিত নাও হতে পারেন। যদি সম্ভব হয়, ইন্টারভিউয়ের আগেই সেই কোম্পানির ‘ড্রেসকোড’ জেনে নিন।

মনোযোগ দিয়ে শুনুনঃ ইন্টারভিউয়ের শুরু থেকেই আপনার মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে। কোনোভাবে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হতে দেবেন না। কারন আপনার ইন্টারভিউ যিনি নেবেন তিনি আপনাকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইশারায় বা ভাষায় অনেক কিছুই বলবেন। যদি আপনার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে, কান খাড়া না থাকে তাহলে আপনি বড় ধরনের সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলতে পারেন। আপনার সামনের ইন্টারভিউ গ্রহণকারীকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিন। তিনি কী বলছেন সেটা শুনুন। এবার তার প্রত্যাশা অনুযায়ী আপনার নিজস্ব ভঙ্গিমায় উত্তর দেয়ার কাজ চালিয়ে যান। মনোযোগ দিয়ে শোনাটাও একটা গুরুত্ত্বপূর্ন দক্ষতার ব্যাপার।

কথা সংক্ষেপ করুনঃ অনেক সময় যারা ইন্টারভিউ নেয়, তারা তাদের কথার মাঝে কিছু ভুল মিশিয়ে দেন। এক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে তার ভুল কথাটা ধরে সংশোধন করা। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই বলবেন। ভালো প্রস্তুতি না থাকলে আপনি হোঁচট খাবেন। আপনার জানা বিষয়গুলো মাথায় ঝালিয়ে নিন। ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে সেই কর্মক্ষেত্রের পরিধি দেখে, আপনার দক্ষতা মানিয়ে সর্বোপরি যা চায় ঐ কোম্পানি সেই যোগ্যতা ও তথ্য আপনাকে আত্মস্থ করতে হবে।

পরিচিত হতে যাবেন নাঃ ইন্টারভিউ হচ্ছে পেশাদারিত্ব ও ব্যাবসায়িক কথা বলার জায়গা। এখানে নতুন বন্ধু তৈরি করার সুযোগ নেই। এখানে আপনার পরিচিতির সীমানা বৃদ্ধি করার চিন্তা না করলেই ভালো হয়। ইন্টারভিউ যিনি নেবেন তার সাথে ব্যাক্তিগত যোগাযোগ ও কথা বলার দরকার নেই। প্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হলে মানসিক শক্তি ও উৎসাহের প্রয়োজন হয়। আপনি প্রশ্ন করুন, তবে আপনার অবস্থান ও আপনি যে চাকরি খুঁজছেন এ কথা ঘুণাক্ষরে ভুলে যাবেন না।

মার্জিত ভাষা ব্যবহার করুনইন্টারভিউ বোর্ডে আপনাকে পেশাদার ও মার্জিত ভাষা ব্যবহার করতে হবে। অপয়োজনীয় কথা এড়িয়ে চলুন। অশ্লীল ভাষা ও বয়সের রেফারেন্স, জাতি, ধর্ম, খেলা, রাজনীতি অথবা যৌনতার বিষয়ে সাবধানে কথা বলুন। এসব বিষয়ের আলাপ খুব দ্রুত আপনাকে দরজার বাইরে পাঠিয়ে দেবে।

নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করবেন নাঃ আচরণ ও মনোভাব ইন্টারভিউয়ের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানে আত্মবিশ্বাস, পেশাদারিত্ত্ব ও বিনম্রতার সুন্দর ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ভালো

যত্ন নিয়ে উত্তর দিনঃ প্রশ্নকর্তা আপনাকে এমন কিছু প্রশ্ন করবেন যেটার সাথে আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পৃক্ত থাকতে পারে। আপনাকে এক্ষেত্রে চাতুর্যের সাথে আপনার অতীত ইতিহাস স্পর্শ করে উত্তর দিতে হবে। উত্তর অবশ্যই যত্ন নিয়ে বলতে হবে। যদি আপনি যথার্থ উত্তর না দিতে পারেন তাহলে শুধু আপনারই উত্তরই ভুল হবে না, আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে যাবে।

প্রশ্ন করুনঃ ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্নকর্তা শেষে যখন প্রার্থীকে বলেন ‘আপনার কোন প্রশ্ন আছে?’ এক্ষেত্রে অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থী বলেন ‘না।’ এটা অনেক বড় একটা ভুল। ইন্টারভিউয়ে ভালো করতে হলে প্রশ্ন করার মানসিকতা রাখতে হবে। আপনার যে ঐ প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আগ্রহ আছে আপনার ক্ষুদ্র প্রশ্নের মধ্যেই তা ফুটে উঠবে। শুধু একটা প্রশ্নের মাধ্যমেই আপনার কাঙিক্ষত চাকরিটি পেয়ে যেতে পারেন। তবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট প্রশ্নটি আসবে তখনি যখন ইন্টারভিউয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সাথে প্রশ্নকর্তার কথাগুলো উপলব্ধি করবেন আপনি।

ব্যাকুলতা দেখাবেন নাঃ যখন আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্নকর্তাকে বারবার অনুরোধ করবেন ‘আমাকে নিন, আমি পারবো’ তাহলে এই ব্যাকুলতাই আপনাকে আত্মবিশ্বাসহীন করে দেবে। মনে রাখবেন অনুরোধ আর তৈলমর্দনে সবখানে কাজ হয় না। ঠাণ্ডা, শান্ত, আত্মবিশ্বাসী মনোভাবটা ইন্টারভিউ চলাকালে ধরে রাখুন। ‘আপনি এই চাকরিটা পাবেন’ এই বিশ্বাসটা ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রশ্নকর্তাদের মনে স্থাপন করতে পারলেই আপনার চাকরি হবে।rs