March 28, 2024 | 10:10 AM

নিজের পায়ে দাঁড়াতে গিয়ে সংসার শুরু করতে একটু দেরিই হয়ে যায় পুরুষের। তারই সুত্র ধরে পরিবার শুরু করার পরিকল্পনাও পিছিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে নারীরা যতটা চিন্তিত, পুরুষ যেন ততটাই উদাসীন।

গবেষকরা বলছেন, “নারীর মতো পুরুষেরও আছে জৈবিক ঘড়ি বা ‘বায়োলজিকাল ক্লক’ যা নিয়ত গতিশীল। তাই পুরুষ যদি সময়ের কাজ সময়ে না করে তবে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে তার স্ত্রী ও অনাগত সন্তানের উপর।”

একটি দম্পতির সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা, গর্ভাবস্থার জটিলতা এবং সন্তানের স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপর ওই দম্পতির বয়স কী ধরনের প্রভাব ফেলে তা নিয়ে ৪০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়েছেন গবেষকরা।

গবেষকদের মতে, “যারা সংসার শুরু করতে এর মধ্যেই দেরি করে ফেলেছেন তাদের উচিত হবে বয়স ৩৫ বছর পার হওয়ার আগেই সন্তান নিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার’স ইউনিভার্সিটির রবার্ট উড জনসন মেডিকেল স্কুল’য়ের উইমেন’স হেল্থ ইনস্টিটিউটের পরিচালক গ্লোরিয়া বাকমান বলেন, “বয়স ৩৫ পেরোলে নারীর শরীরে যেসব পরিবর্তন আসে তার কারণে গর্ভধারণ ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে, এই বিষয়টা সম্পর্কে প্রায় সবাই জানেন। তবে পুরুষের বয়সও যে একই ধরনের ঝুঁকি বয়ে আনতে পার সে বিষয়ে অধিকাংশ পুরুষেরই জানা নেই।”

‘ম্যাচুরিটাস’ নামক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় জানা যায়, বয়স ৪৫ পেরোলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমতে শুরু করে। পাশাপাশি এই পুরুষের কারণেই তার সঙ্গীর গর্ভবস্থাজনীত বিভিন্ন জটিলতা যেমন ‘জেস্টেশনার ডায়াবেটিস’, ‘প্রি-এক্লামসিয়া’, ‘প্রি-টার্ম বার্থ’ ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে।

বাবার বয়স বেশি হলে তার নবাগত সন্তান সঠিক সময়ের আগেই ভুমিষ্ট হওয়া, প্রসবের সময় মারা যাওয়া, অস্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ে জন্মানো, জন্মগতো বিকলাঙ্গতা ইত্যাদির ঝুঁকি বেশি থাকে। বেঁচে থাকলে এই শিশুদের মাঝেই অল্প বয়সে ক্যান্সার, মানসিক অসুস্থতা, প্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে ওঠা ইত্যাদি বেশি দেখা যায়।

বাকমান মনে করেন, এই দুর্ঘটনাগুলো অধিকাংশের পেছনে দায়ী জৈবিকভাবে ‘টেস্টোস্টেরন’য়ের সরবরাহের অভাব যা বয়স বাড়ার সঙ্গে কমতে থাকে। সেই সঙ্গে সঙ্গে আছে শুক্রাণু ও বীর্যের নিম্নমান।

তিনি বলেন, “বয়সের সঙ্গে মানুষের পেশি যেমন দুর্বল হয়, কমতে থাকে স্থিতিস্থাপকতা, ঠিক তেমনি পুরুষের শুক্রাণুও বয়সের সঙ্গে তার শক্তি হারায়।”

গবেষণায় আরও দেখা যায়, স্ত্রীর বয়স ২৫ বছরের কম হলেও মধ্যবয়সী পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা নিয়েও বিপাকে পড়ে থাকেন।

বাকমান বলেন, “নারীরা বরাবরই তাদের প্রজনন ক্ষমতা নিয়ে পুরুষের তুলনায় বেশি জ্ঞান রাখে। পুরুষ বিপদে না পড়া পর্যন্ত যৌন কিংবা প্রজনন ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চিকিৎসকের কাছে যান না। তবে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা নারী-পুরুষ দুজনের জন্যেই জরুরি। আর চিকিৎসকদেরও উচিত ৩৫ পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনই সন্তান নেননি এমন পুরুষদের এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।