April 13, 2024 | 4:38 AM

আমরা সবাই হাঁটি। কিন্তু কম মানুষই আছেন যারা যথেষ্ট হাঁটেন। হাঁটার আছে অনেক উপকারিতা- এর ফলে পেশী সুগঠিত হয়, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুরক্ষিত থাকে ও মেরামত হয়, হজমে সাহায্য করে, এবং মস্তিষ্ককেও সতেজ রেখে বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। এর পাশাপাশি হাঁটার ফলে মানুষের চিন্তার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়, মেজাজ বা মুড ভালো রাখে এবং স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। স্নায়ুবিজ্ঞানী প্রফেসর শেন ও’মারা হাঁটার কিছু উপকারিতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি ডাবলিনে ট্রিনিটি কলেজে মস্তিষ্ক বিষয়ে গবেষণা করেন।

মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে
নিষ্ক্রিয় থাকার অর্থ শরীরে পেশীর শক্তি কমে যাওয়া। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা এর ফলে মস্তিষ্কও শুকিয়ে মরে যেতে শুরু করে। আমরা যখন হাঁটি তখন পেশীতে তৈরি হওয়া মলিকিউল বা অণু আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে। তার মধ্যে একটি বিশেষ অণু মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের ব্রেনের কোষগুলো বিকশিত হয়। ফলে হাঁটলে মস্তিষ্ক আরও শক্তিশালী হয়।

হার্ট ভালো থাকে
হৃৎপিণ্ড ভালো থাকার জন্য হাঁটা খুবই উপকারী। আমাদের পূর্ব-পুরুষরা, যারা শিকার করে জীবন ধারণ করতেন, তারা দিনে ১৫ থেকে ১৭ মাইল হাঁটতেন। শেন ও’মারা বলেন, ‘এখনকার মানুষের হার্টের তুলনায় তাদের হার্ট সত্যিই অনেক ভালো ছিল।’ দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে সিমানে নামের একটি গোত্র আছে যাদের ৮০ বছর বয়সী ব্যক্তির হার্ট ৫০ বছর বয়সী একজন আমেরিকানের হার্টের মতো কাজ করে। এর কারণ হলো তারা সারাদিনই সক্রিয় থাকে।

হজমে সাহায্য করে
হাঁটা মানুষের পরিপাকতন্ত্রের জন্যও বন্ধুর মতো কাজ করে। মানুষ যখন অনেক হাঁটা-চলা করে তখন তার খাবারও বেশি হজম হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য কাটাতে ওষুধ না খেয়ে আপনি যদি হাঁটতে বের হন, সেটা অনেক ভাল। এর সাহায্যে আপনি খুব সহজেই হজমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।

সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে
হাঁটা যে আমাদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এর ফলে অনেক সমস্যা সমাধান করাও সহজ হয়। শেন ও’মারা বলেন, ‘আপনি যখন কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করছেন তখন হতাশ হয়ে এক জায়গায় বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করলে সেটা সমস্যা সমাধানে অনেক সহায়ক হয়। অনেক বড় বড় লেখক, দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি যে হাঁটতে হাঁটতে তারা কিভাবে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।’ উদাহরণ হিসেবে বলে যায়, ঔপন্যাসিক স্টিফেন কিংয়ের কথা। তিনি নিয়মিত হাঁটতে বের হন ও প্রচুর হাঁটেন। দার্শনিক ও লেখক বার্ট্রান্ড রাসেলও যখন হাঁটতে বের হতেন তখন ছোট্ট একটি কাগজে তার অনেক চিন্তাভাবনা টুকে রাখতেন। এবং পরে তিনি এসব ব্যবহার করে দুর্দান্ত সব গদ্য রচনা করেছেন।

বিষণ্ণতা কাটাতে সাহায্য করে
স্নায়ুবিজ্ঞানী শেন ও’মারা বলেছেন, বিষণ্ণতার সঙ্গে বসে থাকার সম্পর্কে রয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বেলাতে বিষণ্ণতা দেখা যায় বেশি। অন্যভাবে বললে সহজ করে বলা যায়, যতোই সক্রিয় থাকা যায় ততোই ভালো।রক্ত প্রবাহের সমস্যা থেকেও বিষণ্ণতা তৈরি হয় বলে ধারণা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি প্রচুর হাঁটেন, রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে সেগুলো কমে যায়। সেটা নাটকীয়ভাবেই হ্রাস পায়।’ কোন কোন ক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি করা এক ধরনের ভ্যাকসিন বা টীকার মতো কাজ করে। সাহায্য করে বিষণ্ণতা কমাতে।

আরও বেশি খোলা মনের ও বহির্মুখী হতে সাহায্য করে
এ বিষয়ে একটি তত্ত্বে বলা হয় যে আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিত্বে কতোগুলো বিষয় আছে এবং সক্রিয় থাকার সঙ্গে এগুলোর সম্পর্ক আছে। যেমন অকপটতা, বিবেক দিয়ে পরিচালিত হওয়া, বহির্মুখী হওয়া, কোনো কিছুর ব্যাপারে সম্মত হওয়া ইত্যাদি। পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিষ্ক্রিয় থাকে তারা কম খোলা মনের হয়, কম বহির্মুখী হয় এবং তাদের স্নায়ু-জনিত অনেক সমস্যাও দেখা দেয়। উল্টো করে আপনি যদি সক্রিয় কোন ব্যক্তিকে দেখেন তাহলে দেখবেন তাদের মধ্যে এই বিষয়গুলো খুব বেশি কাজ করে না। খুব সহজেই তারা অসুখবিসুখেও আক্রান্ত হয় না।

বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে
আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি সেটা বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। হাঁটাহাঁটি করা এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, সারা দিন ধরে যদি অল্প মাত্রাতেও সক্রিয় থাকা যায় সেটা জিমে গিয়ে শরীর চর্চা করার চাইতেও অনেক বেশি উপকারী। অনেকে এই জিমে যাওয়াকে অনেক বড় করে দেখেন। সারা দিন শুয়ে বসে কাটিয়ে তারা মনে করেন ওই এক ঘণ্টায় জিম করেই তারা সুস্থ থাকবেন। আসলে এ ধরনের ব্যায়াম মানুষকে নিষ্ক্রিয় থাকার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারে।

শারীরিক গঠন অটুট রাখতে সাহায্য করে
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের সারাদিন চেয়ারে, সোফায় কিম্বা গাড়িতে বসে কাজ করতে হয়। এর ফলে শারীরিক গঠনে, বিশেষ করে পিঠে- ব্যথা হতে পারে। মানুষের দেহ এমনভাবে তৈরি নয় যা সারাদিন একটি অবস্থানে থাকতে পারে। এটা আপনার জন্য খুবই খারাপ। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা আপনাকে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।