বাড়িতে কোনো শিশু থাকলে যেসব ওষুধ আপনা ঘরে সবসময় থাকা উচিত, জেনেনিন বিস্তারিত

Written by News Desk

Published on:

যেসব পরিবারে শিশু রয়েছে তাদের ঘরে কিছু দরকারি ওষুধ সব সময় রাখা ভালো। এতে আপৎকালীন নানা জটিলতা এড়ানো যায়। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু কিডনি রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ

প্যারাসিটামল
জ্বর সারার কার্যকর ওষুধ প্যারাসিটামল, যা ট্যাবলেট, ড্রপস, সিরাপ, সাপোজিটরি ইত্যাদি ফর্মে পাওয়া যায়। তবে শিশুদের জন্য সিরাপ আর সাপোজিটরি দরকার হয় বেশি। সাধারণত ১০ কেজি ওজনের শিশুর জ্বর হলে তাকে এক থেকে দেড় চামচ প্যারাসিটামল সিরাপ দেওয়া যেতে পারে, জ্বরের তারতম্য অনুযায়ী। আর সাপোজিটরি আড়াই শর তিন ভাগের দুই ভাগ অথবা বেশি জ্বর হলে পুরোটা। সাপোজিটরি একটু বেশি দিতে হয়, কারণ অনেক সময় তা বেরিয়ে যায়।

অ্যান্টিহিস্টামিন
এই ওষুধ সর্দি-কাশি, এলার্জির জন্য বেশ উপকারী। ফেক্সোফেনাডিন বা অন্য কোনো সিরাপ রাখা যেতে পারে।

ড্রপ
নাকের ড্রপ রাখা উচিত। তবে বেশির ভাগ ব্যবহার করা হয় স্যালাইন জল। নজোমিস্ট, নরসল, সলো ইত্যাদি নামে বাজারে রয়েছে।

ক্যালামিন লোশন
কোনো কিছু কামড় দিলে বা এলার্জি হলে এটা সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োগ করলে বেশ কাজে দেয়। তবে চোখের আশপাশে যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

খাবার স্যালাইন
এটি খুব দরকারি ওষুধ। শিশুদের বমি, পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে এটা প্রয়োগ করা যায়। নিওস্যালাইন নামের ওরস্যালাইনটি বাজারে বেশ প্রচলিত। আরো আছে টেস্টি স্যালাইন, ওরস্যালাইন ইত্যাদি। তবে নিয়ম অনুযায়ী জলের সঙ্গে গোলাতে হবে। অনেকে অল্প পরিমাণ স্যালাইন নিয়ে অল্প জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ান, যা মারাত্মক ভুল। এতে লবণের পরিমাণ বেশি হয়ে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।

ওরস্যালাইন খাওয়ানোর সহজ নিয়ম হলো যতটুকু জল পায়খানার মাধ্যমে বের হয়ে যাচ্ছে সেই পরিমাণ স্যালাইন জল পরবর্তী এক ঘণ্টার মধ্যে রিপ্লেস করলেই হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না। বমির জন্য ডমপেরিডন গ্রুপের ওষুধ ড্রপ ফর্মে যেটি পাওয়া যায় তা রাখা যেতে পারে। এর সাপোজিটরিও রয়েছে।

এ ছাড়া লোকাল অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বা মলম, কিছু ড্রেসিং সরঞ্জাম রাখা যেতে পারে। শিশুদের নিয়মিত মলত্যাগ না হলে গ্লিসারিন সাপোজিটরিও রাখা যেতে পারে।

ওষুধ রাখার কিছু নিয়ম
বড় বাক্স ভরে বেশি ওষুধ রাখার দরকার নেই। বরং পরিমাণে কম, অতি প্রয়োজনীয় এবং মানসম্মত নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ঘরে রাখলেই চলে।

ওষুধের বাক্সটি তিন বা ছয় মাসের মধ্যে পরিষ্কার করা ভালো।

ওষুধ রাখার স্থানটিও গুরুত্বপূর্ণ। রোদ লাগে এমন জায়গায় ওষুধ রাখা উচিত নয়।

কাগজের বাক্সে ওষুধ রাখলে ভেজা ভেজা থাকে, তাই সফট বা নমনীয় বাক্সে রাখা ভালো।

কিছু কিছু ওষুধ রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজে রাখতে হয়।

শিশুদের নাগালের মধ্যে কোনো ওষুধ রাখা উচিত নয়।

প্যাকেটের ভেতরে থাকা ব্যবহারবিধি ফেলে দেওয়া ঠিক নয়।

ভ্রমণে সঙ্গে রাখুন কিছু ওষুধ
প্যারাসিটামল : সর্দি, কাশি, জ্বর, মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার যেকোনো ব্যথা উপশমের জন্য সঙ্গে রাখুন প্যারাসিটামল গ্রুপের কিছু ওষুধ। বড়দের জন্য ট্যাবলেট হলেও শিশুদের জন্য রাখুন সিরাপ।

অ্যান্টিহিস্টামিন : সর্দি, হাঁচি, অ্যালার্জি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাখুন হিস্টাসিন, এনটিস্টা, এলসেট ইত্যাদি।

এসিডিটি : এসিডিটি, বুক জ্বলা ইত্যাদির জন্য ফ্ল্যাটামিল ডিএস, অ্যান্টাসিড প্লাস, অ্যাভলোসিড ইত্যাদি রাখুন।

পেটের অসুখ : পেট ফাঁপা, পেটে গ্যাস হওয়া, বদহজম প্রতিরোধের জন্য কিছু ওষুধ রাখা উচিত। সাধারণত পেটের পীড়ায় মেট্রোনিডাজল জাতীয় ওষুধ, যেমন—ফ্লাজিল, মেট্রিক, ফিলমেট, অ্যামোট্রাক্স ইত্যাদি নিতে পারেন।

তলপেটে ব্যথা : তলপেটে ব্যথা বা ঋতুস্রাবের ব্যথার জন্য এলজিন, বুটাপেন, হাইসোমাইড ইত্যাদি।

অমিডন, এভোমিন : ভ্রমণের সময় মোশন সিকনেস বা গতিজনিত সমস্যায় অমিডন, এভোমিন, ইনো, একলিস জাতীয় ওষুধ রাখতে পারেন।

খাওয়ার স্যালাইন : ডায়রিয়া, জলশূন্যতা, ইলেকট্রোলাইটে অসামঞ্জস্যতা প্রতিরোধের জন্য কিছু খাবার স্যালাইনের প্যাকেট সঙ্গে রাখুন।

খেয়াল রাখুন
যদি প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ওষুধ খেতে হয়, বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার, হাঁপানি ইত্যাদি রোগে ভুগছেন, তাঁরা নিয়মিত ও জরুরি মুহূর্তের ওষুধগুলো আগে নিন।

থার্মোমিটার, রক্তচাপ মাপা যন্ত্র, ইনহেলার, গ্লুকোমিটার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কিট সঙ্গে নিন।

স্যাভলন, তুলা, গজ ইত্যাদিও রাখুন।

মাইগ্রেনের ওষুধ ও রোদচশমা নিন।

রোদে পোড়া থেকে ত্বককে রক্ষার জন্য মুখে ও শরীরের উন্মুক্ত স্থানে মাখতে নিউট্রেজেনা এসপিএফ ফিফটিন ক্রিম রাখুন।

সর্বোপরি কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

Related News