March 28, 2024 | 9:40 PM

বয়সের তুলনায় কারো ওজন অনেক বেশি হলে তাকে বলা হয় অবেসিটি বা স্থুলতা । আর এই স্থুলতা শিশু ও কিশোরদের মধ্যে দিন দিন বেড়েই চলেছে। জীবনযাত্রা আর খেলাধুলার অভাবে শিশুদের অনেকেই এখন মুটিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মানসিক সমস্যাসহ ডায়াবেটিস, কিডনিসহ নানা অসুখে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। অবশ্য এই স্থূলতার অনেক কারণ রয়েছে। স্থূলতার শিকার শিশুরা রাগ ও গুটিয়ে রাখার মতো আবেগ তাড়িত সমস্যায় ভোগার বড় ঝুঁকিতে রয়েছে বলে যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুল গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, স্থূলতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং পুরো শৈশবজুড়ে এটি বাড়তে থাকে। এছাড়া ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি আবেগজনিত সমস্যায় ভোগে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

যদিও ঠিক কী কারণে এটি ঘটেছে তা এই গবেষণায় গুরুত্ব দেয়া হয়নি তবে দরিদ্রতার কারণে উভয় সমস্যা বেড়ে যায় বলে গবেষকরা বলেছেন।যুক্তরাজ্যে ২০০০ ও ২০০২ সালে জন্ম নেয়া ১৭ হাজারের বেশি শিশুর ওপর গবেষণা করা হয়। সেখানে পরিসংখ্যানগত মডেলিং করে স্থূলতার সাথে মানসিক সমস্যার সম্পর্কের বিষয়টি যাচাই করা হয়।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শহরে ১০ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত ওজনে ভুগছে ও ৪ শতাংশ শিশু ভুগছে স্থূলতায়। আর ঢাকা মহানগরে এর সংখ্যা যথাক্রমে ১৪ ও ৭ শতাংশ। স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজনের শিশুদের ৭০ শতাংশের বয়স ৫ থেকে ১২ বছর। বাকি ৩০ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছর। অতিরিক্ত ওজন ও স্থূল শিশুর সংখ্যা শিক্ষিত পরিবারে বেশি বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাহমিদা ফেরদৌসী। তার মতে, বর্তমানে শিশুদের স্থূলকায়কে নতুন এক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখছি আমরা। খুবই আতঙ্কের বিষয় এটি। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের খুব ভোগাবে।

তিনি আরও বলেন, শিশুরা মাঠে খেলে না, সারাক্ষণ টিভি দেখে, গেমসে ব্যস্ত থাকে। মানে সময় পেলেই তারা কোনও না কোনও ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পড়ে থাকে। তাদের শারীরিক পরিশ্রম নেই বললেই চলে। অন্যদিকে রিচফুড, জাংকফুড বেশি খাচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগে শিশুরা ভুগছে শুধু এই স্থূলকায়ের কারণেই। লিভারপুলের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের উচ্চতা ও ওজনের বাইরে তাদের তিন, পাঁচ, সাত, ১১ ও ১৪ বছর বয়সের আচরণ সম্পর্কে অভিভাবকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে সাত বছরের কম শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা পাওয়া যায়নি।

ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুলের মনোবিদ্যা বিষয়ক প্রফেসর ড. শার্লট হার্ডম্যান বলেছেন, গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন যে, শৈশবজুড়ে স্থূলতা ও আবেগজনিত সমস্যা যেন ‘হাতে হাত ধরে’ বেড়ে ওঠে। যারা সন্তানদের স্থূলতা জনিত বিষয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন, কম খেলে এবং বেশি পরিশ্রম করলেই এটা সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু এটা তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। স্থূলতা ও আবেগজনিত সমস্যা একটি অন্যটির সঙ্গে মিশে আছে।

তিনি আরও বলেন, এখন এটা সবাই জানে যে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে স্থূলতা ও মানসিক সমস্যার যোগাযোগ রয়েছে। এবার একই বিষয় দেখা যাচ্ছে শিশুদের ক্ষেত্রেও। সাত বছর বয়স থেকে মানসিক স্বাস্থ্য ও স্থূলতা একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। যেহেতু সময়ের সাথে এটি বেড়ে যায়, তাই এর কারণ বের করা জরুরি বলে মনে করেন গবেষকরা। কারণ এর ওপর নির্ভর করবে তাদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের বিষয়টি।

বয়স ও শারীরিক কাঠামোর তুলনায় অতিমাত্রায় ওজনের কারণে শিশুরা যেমন শৈশবের চঞ্চলতা হারাচ্ছে তেমনি শিশু বয়সেই ভুগছে এ সংক্রান্ত নানারকম অসুখে। তাদের ভবিষ্যৎ জীবন দাঁড়াচ্ছে মারাত্মক হুমকির মুখে। আর অস্বাভাবিক এই শারীরিক অবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন বাবা-মায়ের অসচেতনতা, শিশু খাবারে জাংক ফুডের আধিক্য, ভিডিও গেমস, কম্পিউটার বা টিভি দেখার মতো কায়িক পরিশ্রমবিহীন কাজে মগ্ন থাকা এবং শরীর চর্চার অভাবকে।