কী করলে অ্যালার্জি ভালো হয়? দেখেনিন

Written by News Desk

Published on:

একবার চিন্তা করুন তো, বাড়িতে আপনার পছন্দের গরুর মাংস ভূনা, ইলিশ মাছের দোপেঁয়াজা আর গলদা চিংড়ির মালাইকারি রান্না হয়েছে। জিভে জল আনা এসব খাবার দেখেও আপনি পাতে নিতে পারছেন না কারণ এসব খেলেই আপনার অ্যালার্জির সমস্যা মাথাচারা দিয়ে উঠবে।

অ্যালার্জি হলে শুধু যে চুলকায় তা নয়, অনেক সময়ে জ্বালাও করে। তখন খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই অ্যালার্জি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানি না। চলুন জেনে নেই অ্যালার্জি কী এবং কী করলে অ্যালার্জি দূর হয়-

অ্যালার্জি কী
অ্যালার্জি এক ধরণের ব্যাকটেরিয়াজাত সংক্রমণ। পরিবেশের কিছু কিছু উপাদান আছে যা সবার পক্ষে ক্ষতিকর না হলেও কিছু কিছু মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর। ওই উপাদান থাকতে পারে সবজির মধ্যে, মাছের মধ্যে বা অন্য কোনোভাবে। এই উপাদানগুলোকে বলা হয় অ্যালার্জেন্স। এই অ্যালার্জেন্স শরীরের সংস্পর্শে আসলে তখন অ্যালার্জি হয়। আর এটা মনে রাখতে হবে।

অ্যালার্জির একটা প্রবণতা আছে। সেই প্রবণতার নাম হল অ্যাটোপি। এটা মূলত জেনেটিক মানে বংশ পরম্পরা সূত্রে হতে পারে। আর যারা এরকম বংশ পরম্পরা সূত্রেই অ্যালার্জির প্রবণতায় আক্রান্ত, তাদের বলা হয় অ্যাটোপিক। যখন এই অ্যাটোপিক মানুষরা অ্যালার্জেন্সের সংস্পর্শে আসে, তখনই অ্যালার্জি হয়ে থাকে।

অ্যালার্জির রকমফের
অ্যালার্জি কত ধরণের হয়, সেটা নির্ভর করে অ্যালার্জি কী থেকে হচ্ছে। তার ভিত্তিতেই কিন্তু অ্যালার্জির রূপ পালটে পালটে যায়।

ধুলো থেকে অ্যালার্জি
এটি খুবই কমন অ্যালার্জি। সাধারণত এতো দূষণ, ধোয়া, ধুলো, এই সবই অনেকের শরীর নিতে পারে না। আর যখন এই সবের ক্ষতিকর উপাদান শরীরের সংস্পর্শে আসে, তখনই হয় অ্যালার্জি। একে অনেকে ডাস্ট অ্যালার্জি বলে। এর ফলে মূলত চোখ, নাক সব জ্বালা করে। খুবই কাশি হয়, মুখ লাল হয়ে যায়।

অ্যাজমা অ্যালার্জি
অ্যালার্জি যখন বাইরে চাপ চাপ হয়ে প্রকাশ পায় না, কিন্তু প্রকাশ পায় খুব কাশির মাধ্যমে তখন ধরা হয় যে অ্যাজমা অ্যালার্জি হয়েছে। এই অ্যালার্জি হয় তখনই যখন কিছু বিশেষ উপাদান আমাদের শরীরে প্রবেশ করে আর বুক এবং ফুসফুসকে আক্রমণ করে। এই উপাদানগুলো তারপর ফুসফুসে গিয়ে জমা হয় আর অ্যালার্জি শুরু হয়।

খাবার থেকে
অ্যালার্জি হলে আমাদের ত্বক লালচে হয়ে যায় আর খুব চুলকায়। আর হয় হাইভ। হাইভ হলো এক ধরণের সাদা সাদা র্যাশের মতো জিনিস, যা হলে খুব চুলকায়। এগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয় খাবারের থেকে অ্যালার্জি হলে। ডিম, বেগুন, চিংড়ি এগুলোই হল বিশেষ উপাদান এই ধরণের অ্যালার্জি হওয়ার জন্য।

কী করবেন
অ্যালার্জি যদি বাড়াবাড়ি রকমের হয় তবে ওষুধ খেতেই হবে। কিন্তু অ্যালার্জি যাতে না হয়, সে জন্য আপনি শুরু থেকেই তো ভাবতে পারেন। জেনে নিন কয়েকটি উপায় যা মেনে চললে অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে-

সবুজ সবজি খান
আমরা সকলেই জানি যে সবুজ সবজি সব সময়েই আমাদের শরীরের জন্য খুব ভালো। এতে থাকে মিনারেল, ভিটামিন খুবই উপকারে আসে শরীরের। বিশেষ করে পালং শাকের মতো সবুজ পাতাওয়ালা সবজি তো বেশি করেই খাওয়া উচিৎ।

নারিকেলের দুধ
অনেকের গরুর দুধ খেলে অ্যালার্জির সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে আপনি নারিকেলের দুধকে বিকল্প হিসেবে রাখতে পারেন। এর মধ্যে কোনো ল্যাকটোস উপাদান থাকে না। তাই নিশ্চিন্তে নারিকেলের দুধ ব্যবহার করুন।

রসুন
রসুন অ্যালার্জি কমাতে খুব ভালো কাজ দেয়। এটির মধ্যে থাকা ন্যাচারাল অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান যে কোনো রকমের ভাইরাস থেকে আপনাকে রক্ষা করে। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। অনেকে রসুনের থেকে তৈরি সাপ্লিমেন্ট নিয়ে থাকেন। কিন্তু তা ভালো হয় না। তার তুলনায় দুটি রসুন চিবিয়ে ভাতের সঙ্গে খান। এতে বরং বেশি উপকার হবে।

লেবু
লেবুও আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বাড়িয়ে দেয়। এটি ভিটামিন সি’র একটি খুব ভালো উৎস। আর এতে আছে অ্যালার্জির মতো বিষয় থেকে শরীরকে দূরে রাখার মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। আর যেহেতু আমাদের মধ্যে নানা রকম অশুদ্ধি থাকলে লেবু তা বের করে দেয়, তাই ডিটক্সিফাই হতেও লেবু সাহায্য করে।

মধু
অ্যালার্জির সমস্যা, বিশেষ করে যেটা দীর্ঘদিন থাকে না, মাঝেমাঝে হয়ে সেরে যায়, সেটা ঠিক করার জন্য মধুই যথেষ্ট। মধু শরীরের মধ্যে সেই সহ্য শক্তি বাড়িয়ে দেয়, যা বাইরের ওই অ্যালার্জি হওয়ার মতো উপাদানের থেকে শরীরকে দূরে রাখতে পারে। রোজ সকালে তাই এক চামচ মধু খান আর সমস্যা দূর করুন

মাস্ক ব্যবহার করুন
যদি অ্যালার্জি হওয়ার উপাদান শরীরে না প্রবেশ করে তাহলে কিন্তু অ্যালার্জি আর হয় না। আর সেজন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। অধিকাংশ ওষুধের দোকানেই এন.নাইন.ফাইভ (N95) রেসপিরেটরি মাস্ক পাওয়া যায়। বাইরে যাওয়ার সময়ে সেটা ব্যবহার করুন। দেখবেন আপনি অনেকটা উপকার পাচ্ছেন।

স্টিম নিন
অ্যালার্জির জন্য খুব হাঁচি হলে আপনি স্টিম নিন। একটি পাত্রে জল গরম করুন। আপনার মাথা আনুন ওই পাত্রের উপর আর তোয়ালে দিয়ে পাত্র সমেত মাথার উপরে তোয়ালে চাপা দিন। এটা নাকের পোর্স খুলে দেবে, ফলে ভাইরাস বেরিয়ে যাবে আর ওই তাপে থাকতে পারবে না।

Related News