March 29, 2024 | 11:19 AM

ভিটামিন ‘ডি’ একটি ফ্যাট সলিউবল সিকুস্টারয়েড। এর কাজ হচ্ছে– দেহের অন্ত্র (ইনটেসটাইন) থেকে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করা। এটি আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসকেও দ্রবীভূত করে।

সূ্র্যরশ্মি বা খাবারের থেকে ভিটামিন ডি পেয়ে থাকি আমরা। আসলে ভিটামিন ডি একটা স্টেরয়েড হরমোন, মানবদেহে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি পড়ার পরই যা নানা বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। হাড়ের গঠন ঠিক রাখার জন্য আমাদের শরীরে ভিটামিন-ডির খুই প্রযোজন। হাড়কে ক্যালসিয়াম জোগায় এই ভিটামিন।

দীর্ঘদিন ধরে শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা দিলে হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। চিকিৎসকের মতে, শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-এর অভাবে নরম হাড় ও রিকেট রোগ দেখা দেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে শরীরে ভিটামিন ডি না গেলে অস্টিওম্যালাসিয়ার মতো রোগ হয়। যা পরে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে।

বর্তমানে ভিটামিন ডি-এর অভাবে দেশের বহু মানুষের ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, হৃদরোগ, হতাশা ও ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে। করোনার জন্য বেশিরভাগ মানুষই এখন রাস্তায় বেরোচ্ছেন না। আইসোলেশনে থাকতে গিয়ে রোদের মুখ দেখছেন না তারা। যা তাদের মারাত্মক ক্ষতি করে দিচ্ছে। বহু রোগীর ক্ষেত্রে এই সময়ে হতাশা, স্নায়বিক দুর্বলতার মতো রোগ দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর মূল কারণ ভিটামিন ডি-এর অভাব।

শীতে রোদ পাওয়াটা বেশি কঠিন। অনেক সময় মেঘাচ্ছন্ন আবার কিছু সময় রোদ। এক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর চাহিদা নিবারণ করা কঠিন। গবেষকরা বলছেন, কিছু খাবার রয়েছে, যা থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে। আসুন জেনে নিই এমন কিছু খাবার সম্পর্কে-

বিভিন্ন ধরনের মাছ

বিভিন্ন মাছে রয়েছে ভিটামিন ডি। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ স্যালমন, কড মাছ, রুপচাঁদা, সারদিনস, টুনা, ম্যাককেরেলে পাবেন ভিটামিন ডি। দৈনিক ভিটামিন ডির চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ হতে পারে একটি টুনা মাছের স্যান্ডউইচ বা তিন আউন্স ওজনের একটি স্যালমান মাছের টুকরো থেকে।

মাশরুম

মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। এই মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন ডি। পরটোবেললো মাশরুম সূর্যের আলোয় বড় হয়, এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ডি। নিয়মিত মাশরুম খেতে পারেন।

কমলার জুস

ভিটামিন ডির জন্য ভালো ব্র্যান্ডের জুসও খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে প্যাকেটের গায়ে দেখে নিন, কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি।

ডিম

ডিমে অল্প পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছেন তাদের ডিমের কুসুম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।

চিংড়ি

মাত্র ছয় আউন্স চিংড়িতেই দৈনিক চাহিদার ৬৪ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব৷ তাছাড়া নানা উপায়ে চিংড়ি রান্না করা সম্ভব।

পনির

পনির বা চিজেও ভিটামিন ডি এর চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে প্রচুর লবণ দেয়া পনির এড়ানোই ভালো।

দুধ

দুধ খুব বেশি ভিটামিন ‘ডি’ প্রদান করে না। তবে এটিকে ভিটামিন ‘ডি’ দিয়ে পরিণত করা যায়। কিছু দেশে গরুর দুধকে ফরটিফায়েড করে ভিটামিন ‘ডি’ যোগ করা হয়। এক কাপ দুধে প্রায় ১২৫ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও প্রোটিনের ভালো উৎস দুধ।

লিভার বা যকৃৎ

রান্না করা ২.৫ আউন্স বা ৭০ গ্রাম পরিমাণ গরুর কলিজায় ৩৬ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ থাকে, যা মুরগি বা অন্য কোনো প্রাণীতে থাকে না। তবে এতে কোলেস্টেরল বেশি বলে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

ফরটিফায়েড খাবার

কিছু খাবারে ফরটিফায়েড করে ভিটামিন ‘ডি’ বাড়ানো যায়। এসব খাবার বিশ্বের অন্যান্য দেশে বেশি দেখা যায় আমাদের দেশের তুলনায়। যেমন—কিছু সিরিয়ালস, ওটস, ফরটিফায়েড কমলার জুস, গরুর দুধ প্রভৃতি।

সাপ্লিমেন্টারি

উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘ডি’-সমৃদ্ধ খাবার সচরাচর না মেলায় সাধারণ মানুষ এর চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্টারির প্রয়োজন পড়ে। কারোর ভিটামিন ‘ডি’র মাত্রা কম থাকলে নিজে নিজে নয়, বরং চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টারি গ্রহণ করা উচিত। তবে খাবার বা সাপ্লিমেন্টারির চেয়ে সময়মতো নিয়ম মেনে সূর্যের আলো গ্রহণ করাই ভালো। কেননা ক্যালসিয়াম শোষণে ভিটামিন ‘ডি’ শরীরের জন্য বেশ দরকার, যা বিনা মূল্যে মেলে সূর্যের আলো থেকে।